পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী কোনগুলি? প্রশ্ন করলেই বেশিরভাগই জবাব দেন বাঘ, সিংহ। কিন্তু উত্তর কি ঠিক? মোটেই না। বাস্তবে পৃথিবীর প্রথম পাঁচ হিংস্র প্রাণীর তালিকায় বাঘ কিংবা সিংহ কারও নাম নেই। তবে হলফ করে বলা যায়, সবচেয়ে হিংস্র প্রাণীর তালিকায় যার নাম রয়েছে সেটা রীতিমতো চমকে দেবে!
একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত ও হিংস্র প্রাণী হল, অস্ট্রেলিয়ান বক্স জেলিফিশ (Box Jellyfish)!
কী এই বক্স জেলিফিশ?
অসাধারণ রূপ, ঠিক যেন অনেকটা স্বচ্ছ পর্দার মত। জেলিফিশের সকল প্রজাতির মধ্যে দেখতে সুন্দর হল বক্স জেলিফিশ। সামুদ্রিক এই প্রাণীটি প্রায় ১৫ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। আপাত নীরিহ এই প্রাণীই এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণী হিসেবে বিবেচিত।
এক একটি বক্স জেলিফিশ জেলিফিশে যে পরিমান বিষ থাকে, তাতে ৬০জন মানুষের মৃত্যু হতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বক্স জেলিফিশের বিষ আক্রন্তের হৃৎপিন্ড, স্নায়ুতন্ত্র ও ত্বকের কোষকে দ্রুত আক্রমণ করে। সাধারণ একটা জেলিফিশের টেন্টাকল বা কর্ষিকার কাঁটার খোঁচা ত্বকে লাগলে চুলকানির মত ত্বকের সমস্যা হয়। কিন্তু বক্স জেলিফিশের একটি খোঁচা খেলেই তিন মিনিটের মধ্যে আক্রান্তের মৃত্যু অনিবার্য। ফিলিপাইনে প্রতি বছর ২০-৪০জন মানুষ মারা যান এই বক্স জেলিফিশের খোঁচা খেয়ে।
এশিয়ার সবচেয়ে ধনী গ্রাম রয়েছে ভারতেই! জানুন এই বাড়বাড়ন্তের কারণ
একনজরে পৃথিবীর আরও কয়েকটি বিষাক্ত প্রাণীর তালিকা
শঙ্খচূড় সাপ (King Cobra)
সাপদের মধ্যে সবচে বড়ো হলো অজগর। কিন্তু বিষাক্ত সাপদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হল শঙ্খচূড়। গোখরো সাপের সঙ্গে খানিক সাদৃশ্য আছে এদের। তাই এদের রাজ-গোখরো বা King Kobra বলা হয়। এরা প্রায় ১৮-২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। মাটি থেকে প্রায় ৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হয়ে ফণা তুলে দাঁড়াতে পারে। এদের বিষ ধারণ ক্ষমতাও মারাত্মক। যে পরিমাণ বিষ এরা জমা রাখে তাতে মানুষ তো মারা যায়ই, পূর্ণবয়স্ক একটি হাতিও মারা যায় মাত্র ৩ ঘণ্টায়। তবে এরা সাধারণত মানুষের কাছাকাছি আসে না। ফণা তুলে শুধু ভয় দেখাতে চায়। ছোট ছোট নির্বিষ সাপই এদের খাদ্য। এদের সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জঙ্গলেই দেখা যায়।
স্কুল বাস মানেই তার রং হলুদ! কেন জানেন? নেপথ্যে রয়েছে মস্তবড় বৈজ্ঞানিক কারণ
মার্বেল-কোণ শামুক (Marbled Cone Snails)
মার্বেল-কোণ শামুকরা কোণ আইসক্রিমের মতো দেখতে। সব কোণ শামুকই বিষাক্ত, তবে এদের মধ্যেও সেরা হলে মার্বেল-কোণ শামুক। এদের খোলসটা দেখলে মনে হয়, মার্বেল পাথর দিয়ে মোজাইক করা। তাই এদের এমন নাম। এদের দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ার উষ্ণ লবণাক্ত সামুদ্রিক জলরাশিতে। এরা দেখতে কিন্তু খুবই সুন্দর। সুন্দর হলে কি হবে! বিষধর প্রাণীদের তালিকায় যে এদের স্থান তৃতীয় অবস্থানে।
দুনিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ স্কুল কোনটি জানেন? রয়েছে আমাদের ভারতেই
নীল রিং এর অক্টোপাস (Blue Ring Octopus)
নীল রিং এর অক্টোপাস আকারে অনেক ছোট। অনেকটা গলফ বল আকৃতির। কিন্তু এদের বিষ এতটাই মারাত্মক যে মানুষের পর্যন্ত মৃত্যু হতে পারে। এক একটি নীল রিং এর অক্টোপাসে যে পরিমান বিষ থাকে তা ২৬ জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট, এবং কোন প্রতিষেধক নেই। তারা বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থ বিষধর প্রাণী হিসেবে বিবেচিত। এদের কামড়ে ব্যাথা অনুভূত হয় না কিন্তু এদের বিষ মুহূর্তের মধ্যে আক্রান্তের শরীর অসাড় করে দেয়, পেশী দুর্বল করে তোলে এবং শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যাঘাত ঘটায়। জাপান থেকে অস্ট্রেলিয়া মধ্যকার প্রশান্ত মহাসাগরে এদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।
মরণ কাঁকড়া বিছে (Death Stalker Scorpion)
আমাদের দেশে যে ধরণের কাঁকড়া বিছে পাওয়া যায়, ডেথ-স্টকারও দেখতে অনেকটা সেরকমই। তবে বিষধর হিসেব করলে এরা কিন্তু অনেক ভয়ংকর! সাধারণত আমাদের দেশি কাঁকড়া বিছের কামড়ে কারও মৃত্যু হয় না। সামান্য কিছু জ্বালাপোড়া হয় মাত্র। কিন্তু এই মরণ কাঁকড়া বিছের নাম শুনলেই বোঝা যায়, এদের বিষ কতেটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। এদের বিষে অসহ্য ও তীব্র ব্যথা হয়, জ্বরও হয়। ফলে প্রাণী অচেতন হয়ে শেষে মারা যায়। এদের পাওয়া যায়, উত্তর আফ্রিকা আর মধ্যপ্রাচ্যের মরু এলাকায়।