‘কোনো এক গাঁয়ের বধূ…’ হারিয়ে যাওয়া সবজি বীজ রক্ষিত হয় আল্পনার আঁচলে

ডল চক্রবর্তী: “কোন এক গাঁয়ের বধূর কথা তোমায় শোনাই শোনো রূপকথা নয় সে নয়…” একেবারে খাঁটি বাস্তব। বাংলাদেশের আল্পনা রানি এক গাঁয়ের বধূ। “একটুখানি শ্যামল…

ডল চক্রবর্তী: “কোন এক গাঁয়ের বধূর কথা তোমায় শোনাই শোনো রূপকথা নয় সে নয়…” একেবারে খাঁটি বাস্তব। বাংলাদেশের আল্পনা রানি এক গাঁয়ের বধূ। “একটুখানি শ্যামল ঘেরা কুটিরে তার স্বপ্ন শত শত”…তিনি শত শত বীজ সংরক্ষণ করেন। যে কাজ কোনও উদ্ভিদ বা কৃষি বিজ্ঞানীকেও তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মাঠে বাগানে ক্ষেত আলের ধারে ঘুরে বেড়ান। শাক সবজির বীজ আঁচলে বেঁধে নেন। আল্পনার আঁচলে রক্ষা পাচ্ছে প্রকৃতির অমূল্য উপহার।

বীজ সংরক্ষণ করেন আল্পনা রানী মিস্ত্রি। বাংলাদেশি গ্রাম্য বধূ আল্পনা রানির নিবাস সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ধূমঘাট গ্রামে। তিনি একজন বীজ সংগ্রাহক। দিন দিন বিলুপ্ত হচ্ছে বহু দেশীয় শাকসবজি থেকে শুরু করে গাছ। এবার এই দেশীয় বীজ সংরক্ষণ করতে এক উদ্যোগী অল্পনা রানি মিস্ত্রির। বিলুপ্তি ঠেকাতে তিনি দেশী বীজ সংগ্রহ করছেন।

   

কীটনাশক প্রয়োগে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় শাকসবজি, গাছপালা। ফলে বিদেশী বীজ দিয়ে চাষ চলছে। বিষাক্ত সার প্রয়োগের ফলে ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বহু মানুষ। আল্পনা রানি মিস্ত্রি মাঠ ঘাটে নিজ উদ্যোগে লাউ, কুমড়ো, পুঁইশাক, সহ বিভিন্ন ধরনের গাছের বীজ সংরক্ষণ করে চলেছেন। অল্পনা রানী মিস্ত্রি জানিয়েছেন, “দেশি শাক সবজির বীজ সংরক্ষণ করি। সব বীজ হারিয়ে যাচ্ছে দেশী বীজ সংরক্ষণ করে না রাখায় আমরা কোম্পানির কাছে একরকম বিক্রি হয়ে গিয়েছি। প্রতি বছর আমরা কোম্পানির কাছে যাচ্ছি। বীজ একবার না ফুটলে আবার যেতে হয় কোম্পানির কাছে। অনেক সময় বীজ রোপন করার পরে খরাও হতে পারে আবার অতিরিক্ত বৃষ্টি হতে পারে। তখন তো বীজগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে তখন যদি হাতে পয়সা না থাকে আমরা কোম্পানির কাছে বীজ আনতেও যেতে পারি না”।

তিনি আরো বলেন, ” দেশি বীজ যখন আমার বয়ামে থাকবে তখন আমি একবার কেনও পাঁচবার রোপন করতে পারব। আমি দেখেছি হাইব্রিড যে সকল গাছ আছে দুমাস ফল দেয় তারপরে নষ্ট হয়ে যায়। ওইসব গাছের সার রাসায়নিক পদার্থ দেওয়া লাগে। যার ফলে মানুষ বিভিন্ন রকমের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এখন বহু দেশীয় গাছ হারিয়ে যাচ্ছে তাই আমি এগুলো মূল্যায়ন করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি”।

আল্পনা গোটা এলাকা থেকে, সকল বীজগুলো সংগ্রহ করে। যা স্থানীয় বীজ। তিনি স্থানীয় কৃষাণীদের সঙ্গে বীজ বিনিময়ের মাধ্যমে সংগ্রহশালা তৈরি করেছে। তিনি আবার স্থানীয় কৃষানীদের বীজ সংগ্রহ করার প্রশিক্ষণও দেন।কোন ফল গুলো সব থেকে ভালো কোন ফলের ভিতরে বীজগুলো জোগাড় করলে উৎপাদন ভালো হবে বর্ষার আগে সেগুলো জোগাড় করে রাখা হয়। বর্ষার বীজ আলাদা আবার শীতের বীজ আলাদা। তিনি প্রতি মরশুমে প্রায় ৩০০ টি পরিবারকে বিনামূল্যে বীজ দেন।

আল্পনা রানি মিস্ত্রির এমন উদ্যোগে প্রকৃতির অমূল্য উপহার বাঁচছে। নিপাট গ্রাম্য বধূর বীজ সংগ্রহ দেখে চমকে গেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁর এই অমূল্য সংগ্রহ ও কাজের জন্য বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক। উপকৃত হচ্ছেন কৃষক ও গ্রামের বহু মানুষ। কীটনাশক ছাড়াই পুষ্টিকর সবজি ফল বিভিন্ন চাষ করতে পারছেন কৃষকরা।