‘আবোল-তাবোল’ না দেখেই চলে যেতে হয়েছিল সুকুমার রায়কে

শিশু সাহিত্যের জন্য কত কিছু করে গিয়েছেন তিনি। অল্প সময়ের বিস্তর কাজ। তাঁর সেরা সৃষ্টি আবোল তাবোল। বাঙালির বাড়িতে এই বই নেই এটা প্রায় অসম্ভব।…

sukumar roy

শিশু সাহিত্যের জন্য কত কিছু করে গিয়েছেন তিনি। অল্প সময়ের বিস্তর কাজ। তাঁর সেরা সৃষ্টি আবোল তাবোল। বাঙালির বাড়িতে এই বই নেই এটা প্রায় অসম্ভব। অথচ দুঃখের বিষয় হল এই বিখ্যাত বই ছাপিয়ে বেরনো দেখে যেতে পারেননি সুকুমার।

ভারতবর্ষের প্রথম দুই মহিলা ডাক্তারের অন্যতম কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ছিলেন বিধুমুখীর সৎ মা৷বিধুমুখীর কোল জুড়ে পৃথিবীর প্রথম আলো সুকুমার রায় দেখেছিলেন ১৮৮৭ সালে ৩০ অক্টোবর দিনে৷ সামান্য প্রতিভার শতফুল বিকশিত,তিনি সুকুমার রায়, বাংলা সময়েসাহিত্যের প্রবলতম জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিক,’ননসেন্স রাইমের’ প্রবর্তক৷

নাটক,ছবি,ছড়া সবকিছুতেই সুক্ষ কৌতুক রসের এত অনির্বচণীয় সঞ্চার আর কেউ করতে পেরেছেন কিনা সংশয় থাকবে,অল্প বয়সেই ‘আবোল তাবোল,’ ‘হ-য-ব-র-ল”পাগলা দাশু’,’হেঁসোরাম হুঁশিয়ারের ডায়রি’,এর মত অসাধারণ কয়েকটি বই লিখে সমৃদ্ধ করে গিয়েছেন বাংলা সাহিত্যকে৷ অনেকের হয়ত অজানা সন্দেশ পত্রিকায় সুকুমার রায় ১৩২৯ এর ভাদ্র সংখ্যায় ‘বেতার’ নিয়ে লিখেছিলেন ‘আকাশবাণীর কল’৷

প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তিনি গোড়াপত্তন করেছিলেন ‘ননসেন্স ক্লাব’৷মজার মজার গল্প,ছড়া,আর কৌতুক অভিনয়ে যারা পারদর্শী তাদের জন্য ছিল ক্লাবের অবারিত দ্বার,মুখপাত্র ছিল ‘সাড়ে বত্রিশ ভাজা’ নামের একটি পত্রিকা,বত্রিশ রকমের ভাজাভুজি আর তার উপরে আধখানা লঙ্কা বসানো, তাই সাড়ে বত্রিশ।

‘ননসেন্স’ ক্লাবে সুকুমার রায়ের রচিত ‘ঝালাপালা’ও ‘লক্ষণের শক্তিশেল’ ভাঁড়ামিবিহীন কৌতুকরস সমৃদ্ধ অনবদ্য দুটি নাটক বাংলা সাহিত্যের সম্পদ৷১৮৮৭ সালে সুকুমার রায় পৃথিবীর প্রথম আলো দেখেন,মাত্র আট বছর বয়স থেকে আঁকতে আর ছড়া লেখা শুরু করেছিলেন৷ স্নাতক হয়ে ১৯১১সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গুরুপ্রসণ্ন বৃত্তি নিয়ে বিলেত গিয়েছিলেন প্রিন্টিং সম্পর্কে পড়াশোনা করতে,লন্ডনে ‘স্কুল অফ ফটো এনগ্রেভিং এন্ড লিথোগ্রাফি’ও ‘ম্যাঞ্চেস্টার স্কুল অফ টেকনোলজিতে’ প্রিন্টিং টেকনোলজি শিখেছেন,পরে ১৯১৩সালে ‘রয়েল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির’ফেলোশিপ নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন৷

আর একটি কথা বলতে হবে সুকুমার রায় বিলেত গেলে ‘ননসেন্স’ক্লাব বন্ধ হয়ে গেলেও তিনি ফিরলে আবার প্রাণ ফিরে পায়৷প্রতি সোমবার ক্লাবের অধিবেশন বসত নামটা বদল হয়ে হল ‘মনডে ক্লাব’৷অনেকে ঠাট্টা করে বলতেন ‘মণ্ডা ক্লাব’৷মাসিক চাঁদা চারআনা৷ ‘হাঁসজারু’, ‘বকচ্ছপ’, ‘হাতিমির’ মতো অদ্ভুত কিম্ভূতকিমাকার কাল্পনিক প্রাণীর জন্ম দিয়েছেন তাঁর ‘খিচুড়ি’ ছড়ায়। তাঁর ‘বাপুরাম সাপুড়ে’ পড়েন নি এমন বাঙালি সম্ভবত খুঁজেও আপনি মিল করতে পারবেন না!

সুকুমার রায় সম্পর্কে কিছু বলার ধৃষ্টতা না দেখিয়েই বলা যায় খুব কম মানুষ আছেন যিনি শৈশবটা শুরু করেনি’আবোলতাবোল’ না পড়ে৷ সুকুমার রায় সরস ও সজীবতার মূর্ত প্রতীক৷সেই মানুষটি তাঁর প্রথম বই ‘আবোল তাবোল’ বই আকারে প্রকাশিত হওয়াকে দেখে যেতে পারেন নি৷যদি পারতেন নিশ্চিতভাবে বলা যায় তিনিই খুশিই হতেন কি অনবদ্য সৃষ্টি তিনি করেছেন৷

বড় ট্র্যাজেডি হল সুকুমার রায় নিজের চোখে দেখে যেতে পারেন নি তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি আবোল-তাবোল৷ ইউ রায় এন্ড সন্স থেকে ১৯২৩সালে প্রকাশিত হয়েছিল ‘আবোলতাবোল’,দিনটি ছিল ১৯সেপ্টেম্বর৷ অথচ তার মাত্র ৯ দিন আগে ১০সেপ্টেম্বর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে আকাশের তারা হয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে৷তখন তিনি মাত্র ৩৬৷ ব্যাধির নাম তখনকার দিনের ভয়ঙ্কর ‘কালাজ্বর’৷