কেন কালী বলিপ্রিয়া, রক্তে হন তুষ্ট

Special Correspondent, Kolkata: প্রতি রবিবার সকালে পাঁঠা বা খাসির মাংসের দোকানে ভীড় জমিয়ে সামনের রাং নেওয়া বঙ্গসন্তানগণের মুকুটে বর্তমানে একটি নতুন পালক যোগ হয়েছে হালে,…

kali puja

Special Correspondent, Kolkata: প্রতি রবিবার সকালে পাঁঠা বা খাসির মাংসের দোকানে ভীড় জমিয়ে সামনের রাং নেওয়া বঙ্গসন্তানগণের মুকুটে বর্তমানে একটি নতুন পালক যোগ হয়েছে হালে, তা হল-এরা অনেকেই স্বঘোষিত পশুপ্রেমী। অবলা পশুর দুঃখে এঁদের মন কেঁদে ওঠে, কালীপূজায় পাঁঠাবলি হলে স্বজন হারানোর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে এরা এবং তার বহিঃপ্রকাশ প্রকাশ ঘটে বিভিন্ন ফেসবুক পেজে বলিবিরোধিতার মাধ্যমে। একটি বিখ্যাত উক্তি এহেন প্রত্যেকের মুখে মুখে ফেরে-‘ মা কী সন্তানের রক্ত চান?’আজ এরই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি নাহয়।

শ্রী শ্রী চণ্ডীর চতুর্থ অধ্যায়ান্তর্গত শক্রাদিকৃত দেবীস্তুতিমধ্যে ২২ নং শ্লোকে বর্ণিত হয়েছে-‘চিত্তে কৃপা সমরনিষ্ঠুরতা চ দৃষ্টা।’ দেবী দৈত্যদর্পনিষূদিনী,দানবনিহন্ত্রী,অশুভনাশিনী(‘চণ্ডিকে সততং যুদ্ধে জয়ন্তি পাপনাশিনি’-অর্গলা স্তোত্র)।তিনি নিরন্তর ধর্মযুদ্ধে ব্যাপৃত থেকে নিখিলব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত অশুভনাশোদ্যতা।বস্তুত সংহারিণী শক্তিকে নির্মম হতেই হয়,কেননা নির্মমতাই সংহারস্পৃহাপ্রসবিনী।হৃদয় যদি দুর্বল হয়ে পড়ে তখন শত্রুনিধন সম্ভব হয় না।রণভূমিতে দাঁড়িয়ে যদি মনে হয়-শত্রুরও প্রাণ আছে, আঘাত এর কষ্ট সেও অনুভব করে-তবে রণভূমিতে প্রবেশ না করাই শ্রেয়।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

ত্রিভুবনজননী বিশ্ববিধাত্রী মহামায়া, তিনিই সেই মহাকালকলয়িত্রী অনন্তকোটি ব্রহ্মাণ্ডের চালিকা শক্তি,জন্মমৃত্যুর কালচক্র তাঁরই অন্তরে;তিনিই প্রতিটি জীবের সৃষ্টিকর্ত্রী।আবার ঐহিকলীলা শেষ হলে মৃত্যুর করালগ্রাসের কবলে কবলিত হওয়াও তাঁরই বিশ্ববিদিত সত্তায় বিলীন হয়ে যাওয়া বই কিছুই নয়।তাঁরই পূত দেহ হতেই উৎপত্তি আবার অন্তিমে তাঁরই দেহাভ্যন্তরে লয়প্রাপ্ত হয়ে যাওয়া।তাই কীসের মায়া?কে কার প্রাণ রক্ষা করবে?কারই বা ক্ষমতা আছে সেই কালজয়ী কালীর ইচ্ছার বিপরীতে কোন কিছু করার?

একজন মা যখন তাঁর সন্তানের বেড়ে ওঠার গল্প সকলের সঙ্গে আনন্দপূর্ণ হৃদয়ে ভাগ করে নেন;হর্ষবিহ্বল চিত্তে বলেন-দেখো আমার সন্তান বড় হচ্ছে-তিনি অজান্তেই স্বীকার করে নেন যে একদিন-একদিন করে সেই সন্তানের বয়োবৃদ্ধি হয়ে চলেছে অর্থাৎ সে ধীর ধীরে মৃত্যুরূপী অমোঘ মহাকালের করাল গ্রাসের স্বীকার হওয়ার জন্য ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে।শ্রীমদ্ভাগবতগীতার সাংখ্যযোগে ভগবান অর্জুনের উদ্দেশ্যে বলছেন-
“জাতস্য হি ধ্রবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।
তস্মাদপরিহার্যঽর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।।”-অর্থাৎ,জাত ব্যক্তির মৃত্যু ও মৃত ব্যক্তির পুনর্জন্ম শাশ্বত।তাই,এহেন অপরিহার্য্য বিষয়ে শোক অর্থহীন।।

জন্মদাত্রীর সঙ্গে জগজ্জননীর পার্থক্য এইখানেই-জন্মদাত্রী মায়াপাশবদ্ধ,সন্তান শত অপরাধ করলেও জন্মদাত্রী তা ক্ষমা করেন,সন্তানের কৃতকর্মের জন্য সে চরম শাস্তি পাক জন্মদাত্রীর হৃদয় তা মেনে নিতে সক্ষম হয় না।আর জগদম্বা-তিনি মহামায়া হয়েও মায়াতীতা,তিনি কর্মফল অনুসারে জীবের প্রাপ্যসুখ ও প্রাপ্যদণ্ড উভয়ই ভোগ করান।

মানুষ ষড়রিপুযুক্ত মহাপশু বা চুড়ান্ত পাশবদ্ধ জীব হলেও বাগীশ্বরী তাঁকে বাকশক্তি,বোধ ও বিবেকদান করেছেন-ফলে সে অনুতাপাদি অনেক উপায়ে তার পাপস্খলনের সুযোগ পায়।অবলা,অবোধ পশুর সে সুযোগ নেই তাই ভগবতীর চরণে বলি প্রদত্ত হয়েই সে উত্তমাগতি লাভ করতে পারে।

শাস্ত্রের পদে পদে ভগবতীকে বলিপ্রিয়ারূপে চিহ্নিত করা হয়েছে তা কেবলমাত্র জীবোদ্ধারের জন্যই।তাই এহেন জীবোদ্ধারকর্ত্রীর ইচ্ছার উপর নিজের নির্বোধ বলিবিরোধিতার হাস্যকর চিন্তা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা স্বীয় মূর্খতা জনসমক্ষে স্বীকার করে নেওয়ার নামান্তর মাত্র।