HomeMythology১৫৫ বছরের প্রাচীন পুজোতে মাতৃ আরাধনায় লাগে ১০৮ রকমের জল

১৫৫ বছরের প্রাচীন পুজোতে মাতৃ আরাধনায় লাগে ১০৮ রকমের জল

- Advertisement -

প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকে ভারতে দেবী আরাধনা শুরু। দেবী আরাধনার মতন দেবীমূর্তির ইতিহাসও অনেক পুরানো। আজ যে মহাশক্তির মহিষাসুরমর্দিনী রূপ আমরা দেখি তার আবির্ভাব অনেক পরে,পুরাণের যুগে। সে মূর্তি ছিল বাসন্তী দেবীর। তারপর অনেক ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে আজ দশভূজা মাদুর্গা আমাদের পরমআরাধ্যা।

শাস্ত্রের বর্ণনায় দেবীর অনেক রূপ। তারমধ্যে অন্যতম একটি বিশেষ রূপে দেবী পুজো পেয়ে আসছেন অনেক বছর ধরে, দঃ২৪ পরগনার সুভাষগ্রামে। দেবী দুর্গা ও দেবী কালীকা-শক্তির দুই রূপ। মাতৃপূজার এই পৃথক দুই রূপই বাংলার দিকে দিকে প্রচলিত। কিন্তু মায়ের এই দুইরূপই একত্রে পুজিতা হয়ে আসছে বাংলার প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে, দঃ২৪ পরগনার সুভাষগ্রামের দুর্গাবাড়িতে। শারদলক্ষ্মী এখানে আরাধিতা অর্ধকালী অর্ধদুর্গারূপে। ১৫৫ বছরের প্রাচীন এই পুজোর পিছনে রয়েছে একটি ছোট্ট অথচ সুন্দর ইতিহাস।

   

সময়টি ছিল ১৮৬৪ সাল। পূর্ববঙ্গের ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডলের জাঁদরেল দারোগা হরিকিশোর ঘোষ একরাত্রে স্বপ্নাদেশ পেলেন জগজ্জননী মায়ের। পরদিন থেকে শুরু হল পুজোর তোড়জোড়। এক শুভতিথিতে সূচনা করলেন মূর্তি গড়ার। ধীরে ধীরে চিন্ময়ী দেবী রূপ পেতে লাগলেন মৃন্ময়ী প্রতিমায়। কিন্তু মূর্তি তৈরির শেষ পর্যায় পটুয়ারা হলুদ রঙ করতেই মূর্ত্তির ডানদিকের অংশের রঙ বদলে যায় কালো রঙে। তখন হরিকিশোরের মনে পড়ল তার স্বপ্নের দেবীমূর্তিও যেন ঠিক সাধারণ নয়। এই সঙ্কটের মুহূর্তে কুলপুরোহিত তাকে উপদেশ দিলেন দেবীকে অর্ধকালী অর্ধদুর্গা রূপ দিতে। সেই থেকে আজও মা এই নতুন রূপে সুভাষগ্রামের ঘোষদের বসতবাটীতে সাড়ম্বরে পূজিতা।

দেশভাগের পর ঘোষ বংশের উত্তরপুরুষরা চলে এসেছেন এপার বাংলায়, কিন্তু দুর্গাপুজোর ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি কখনও।
নির্দিষ্ট মাপের পাটাতনের ওপর একচালার প্রতিমা। দেবীর শরীরের ঠিক মাঝ বরাবর চুলচেরা ভাগ- ডানদিকে অমানিশারূপী দেবী কালিকা এবং বামদিকে তপ্তকাঞ্চনবর্ণা দেবী দুর্গা। দশ হাতে দশপ্রহরণধারিণী দেবীর ডান পা সিংহের পিঠে আর বাম পা অসুরের স্কন্ধে স্থাপিত। মহিষাসুর দেবী কালিকার হস্তধৃত শূলে বিদ্ধ। স্বর্ণবর্ণা লক্ষ্মী এবং শুভ্রবর্ণা সরস্বতী দেবীর ডান ও বাম পাশে থাকলেও চিরকুমার কার্তিক থাকেন দেবীর ডানপাশে, বিঘ্নবিনাশক গনেশ বামদিকে। পুত্রকন্যাসহ জগন্মাতার এই রূপই স্বপ্নে দেখেছিলেন হরিকিশোর। প্রতিটি মূর্তিই অপরূপ সাজে সজ্জিতা ও স্বর্ণরৌপ্য অলংকারে ভূষিতা।

মায়ের এই বিশেষ রূপের মতন পুজোর আচার-বিধিও কিছু ভিন্ন। বৃহৎনান্দীকেশ্বর পুরাণ মতে পুজো হয়ে থাকে। ললিতাসপ্তমী তিথিতে হয় কাঠামোপুজো। পুরানো প্রথানুযায়ী ঠাকুরদালানেই প্রতিমা তৈরি হয়। সপ্তমীর সকালে চক্ষুদান ও প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর হয়ে থাকে মহাস্নান। মায়ের প্রতীকরূপে দর্পনকে স্নান করানোর রীতি এখানে। স্নানে লাগে ১০৮রকমের জল। যেমন- তিন সমুদ্রের জল, গঙ্গার জল, দুধ, শিশির, মধু ইত্যাদি। পুজোর প্রতিটি পর্ব চলে ঘড়ির সূক্ষ্ম হিসাব অনুযায়ী। পুজোর তিনদিনই একটি করে নিখুঁত কৃষ্ণবর্ণের ছাগবলি হয়। অন্নভোগ দেওয়ার রীতি নেই এখানে। পরিবর্তে সাড়ে বারো কেজি কাঁচা চালের নৈবেদ্য হয়। ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং চালকুমড়ো বলি দিয়ে হয় সন্ধিপূজা। নবমীতে ছাগবলি ছাড়াও হয় আখ, চালকুমড়ো এবং শত্রুবলি।বর্তমানে পশুবলিপ্রথা বন্ধ রয়েছে এই পরিবারে। দশমীর সকালে দর্পন বিসর্জন হয়। সন্ধ্যাবেলা বাড়ির সধবা মহিলারা দেবীকে বরণ করেন। এরপর বাড়ির পুরুষেরা মহাসমারহে দেবীকে বিসর্জন দেন বাড়ির পুকুরে। এই ভাবেই আভিজাত্য ও বনেদীয়ানায় আজও পুজো হয় সুভাষগ্রামের ঘোষ বাড়িতে।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular