বাঙালি ঘরের হাজার হাতের কালী খুশি হন তামিল ভোগে

Correspondent, Kolkata: শতাধিক বছর ধরে এখানে অবস্থান করছেন হাজার হাতের কালী। জাগ্রত দেবী মন্দির প্রাঙ্গণে পূজিতা হন প্রতিদিন। সামনেই কালীপুজো সেদিন হবে দেবীর বিশেষ পূজা।…

history of hajar hat kali

Correspondent, Kolkata: শতাধিক বছর ধরে এখানে অবস্থান করছেন হাজার হাতের কালী। জাগ্রত দেবী মন্দির প্রাঙ্গণে পূজিতা হন প্রতিদিন। সামনেই কালীপুজো সেদিন হবে দেবীর বিশেষ পূজা। কিন্তু চমক অন্য জায়গায়। শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষে দেবী তামিল ভোগ খান।

শিবপুর অঞ্চলের ওলাবিবিতলা থেকে একটু এগোলেই দেখা মিলবে হাজার হাত কালী মায়ের মন্দিরের। দেবীর নামেই জায়গার নামও হয়ে গিয়েছে হাজার হাত কালীতলা। ভাষার অপভ্রংশে লোকমুখে তা কখনও ‘হাজারাত কালীতলা’ নামেও প্রসিদ্ধ। আসা যাক মন্দিরের ইতিহাসে।

১৯০৫ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন তান্ত্রিক ভক্ত আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। চণ্ডীর এই হাজার হাতের রূপ আসলে স্বপ্নাদেশেই পাওয়া বলে জানা যায়। পাশাপাশি চণ্ডীর ২২তম অধ্যায়ে দেবীর এই রূপের উল্লেখ রয়েছে। চণ্ডী অনুযায়ী অসুর নিধন কালীন দেবী দুর্গা বহুরূপ ধারণ করেছিলেন। তার মধ্যেই অন্যতম হল এই হাজার হাতের রূপ। কাত্যায়নী,মহামায়ার পরেই হুংকারে অসুর নিধন করতে আসেন হাজার হাত রূপিণী কালীমাতা। দক্ষিণবঙ্গের এই শহরের মন্দির বিখ্যাত দক্ষিণ ভারতেও।

বিখ্যাত গায়িকা শুভালক্ষী এই মন্দির দর্শন করে গিয়েছেন। মন্দিরে বাইরে দক্ষিণ ভারতীয় ভাষা লেখা রয়েছে মন্দিরের নাম। শুভালক্ষীর পর থেকেই বহু তামিল দর্শনার্থী এসে দর্শন করে যান এই মন্দির। শ্রাবণ মাসের শুক্লপক্ষে শুক্রবার তামিলনাড়ু থেকে আসেন প্রচুর মানুষ। সেই দিন তারা মা’কে দেন তাঁদের স্পেস্যাল ভোগ। হাওড়ার আমিষ ভোগ ভুলে সেদিন দেবী টক ভাত, ঝাল ভাত, মিষ্টি ভাত, সম্বর, বড়া, দই ভাত, ঝুড়ি ভাজা, মুরুব্বুতে মজেন।

ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় , মন্দির তৈরি করার ইচ্ছা থাকলেও সেই সামর্থ্য ছিল না তান্ত্রিক আশুতোষের। মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত সেই আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পরিবারই। বর্তমান সেবায়েত মনোজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন ‘সবই মায়ের ইচ্ছা, হঠাৎ করেই মায়ের মন্দির তৈরিতে আগ্রহী হয় জনৈক হালদার পরিবার’। পাশাপাশি এগিয়ে আরও মানুষজন। সবার ইচ্ছাতেই তৈরি হয়ে যায় হাজার হাত কালী মায়ের এই মন্দির।

দেবীর মন্দিরটি চাঁদনী শ্রেণীর। মন্দিরের উত্তর দেওয়ালের কিছু সামনে রূপোলী কেশর জুক্ত হলুদ রং এর পা মুড়ে বসা সিংহের ওপর দেবীর বাম পদ। দক্ষিন পদের অবস্থান এক মহাপদ্মের উপরে। দেবীমূর্তি উচ্চতায় বারো ফুটের মতো। মূর্তির দেহ সংলগ্ন প্রমান মাপের বাম হাত আছে খড়গ এবং ডান হাতে পঞ্চশূল। বিগ্রহের গাত্রাবর্ণ সবুজ। পরনে লালা পাড়যুক্ত সাদা শাড়ী। দুই কাঁধে দুই সর্পফনা,মাথায় পঞ্চপুষের মুকুট। তার কিছু ওপরে রাজচ্ছত্র। দেবীর হাতে বলয়,কানে কানপাশা ,এবং উন্নত নাসিকার নথ। ত্রিনয়নী প্রতিমার তেজপূর্ন চোখের দিকে তাকালে ভয় লাগবে। দেবীর মুখে লোল জিহ্বা প্রলম্বিত নয়,তিনি প্রশান্ত। এখানেই ভয় কাটতে পারে।

মন্দিরে নেই বলিদানের প্রথা। তবে বুদ্ধ পূর্ণিমায় মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস ও কালীপূজা এই ২ দিন বিশাল ধুমধাম কর মায়ের পূজা হয়। এছাড়া প্রত্যহ সকাল সাড়ে ৬টা, দুপুর ২টো ও রাত সাড়ে ৮ টায় মায়ের পূজা ও আরতি হয়। প্রসাদ দেওয়া হয় বিকেল বেলা ও রাত্রিবেলা।