করলা বা উচ্ছে (Bitter gourd) ভারতে তিক্ত স্বাদের জন্য বিখ্যাত৷ স্বাস্থ্যের জন্য একটি পুষ্টির ভাণ্ডার। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিসের চিকিৎসা, কোলেস্টেরল কমানো এবং ওজন হ্রাসে সহায়তা করার মতো গুণে ভরপুর এই সবজি অনেকের রান্নাঘরে জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু এর তেতো স্বাদের কারণে অনেকেই এটি খেতে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে চিন্তার কিছু নেই! আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি করলার তিক্ততা কমানোর কিছু সহজ ও কার্যকর উপায়, যাতে এটি সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর উভয়ই হয়ে ওঠে।
Also Read | ভিটামিন ডি কি আপনাকে শক্তিশালী করে? জেনে নিন উপকারিতা
করলায় রয়েছে প্রয়োজনীয় খনিজ ও ভিটামিন যেমন লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন এ ও সি। এর রুক্ষ চেহারা এবং তেতো স্বাদ সত্ত্বেও, সঠিক প্রস্তুতির মাধ্যমে এটি আপনার প্লেটে একটি আকর্ষণীয় সংযোজন হতে পারে। বাঙালি রান্নাঘরে উচ্ছের ভর্তা বা তরকারি জনপ্রিয় হলেও, তিক্ততা কমানোর এই টিপস আপনার রান্নার অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে।
তিক্ততা কমানোর সহজ টিপস
রুক্ষ পৃষ্ঠ কেটে ফেলুন: করলার তেতো স্বাদ অনেকটাই এর রুক্ষ চামড়ায় থাকে। একটি পিলার দিয়ে সাবধানে চামড়া ছাড়িয়ে নিন যতক্ষণ না এটি মসৃণ হয়। এতে তিক্ততা অনেকটা কমে যাবে। চাইলে ছাড়ানো করলা ময়দায় মাখিয়ে ভেজে নিতে পারেন, যা একটি সুস্বাদু স্বাদ যোগ করবে।
বীজ সরান: চামড়া ছাড়ানোর পর করলা টুকরো করে বীজগুলো বের করে ফেলুন। বীজে তেতো রস থাকে, তাই এটি সরালে স্বাদ অনেকটা হালকা হবে।
লবণ দিয়ে ঘষুন: করলার টুকরোগুলো লবণ দিয়ে ঘষে ২০-৩০ মিনিট মেরিনেট করে রাখুন। লবণ তেতো রস বের করে দেয়। এরপর রস ফেলে দিয়ে ধুয়ে নিন। রান্নার সময় কম লবণ ব্যবহার করলেই তেতো স্বাদ ছাড়া উচ্ছে প্রস্তুত হবে।
দইয়ে ভিজিয়ে রাখুন: করলার টুকরোগুলো পাতলা দইয়ে এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ভিজিয়ে রাখুন। এটি তিক্ততা কমায় এবং স্বাদে একটি ক্রিমি টেক্সচার যোগ করে।
তেঁতুলের রসে ভিজান: করলা ধুয়ে টুকরো করার পর ৩০ মিনিট তেঁতুলের রসে ভিজিয়ে রাখুন। তেঁতুলের টক স্বাদ তিক্ততাকে ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলবে।
গুড় বা চিনি যোগ করুন: রান্না শেষ হওয়ার আগে সামান্য গুড় বা চিনি ছিটিয়ে দিন। এটি তেতো স্বাদকে নিরপেক্ষ করে একটি মিষ্টি ছোঁয়া দেবে।
নিরপেক্ষ সবজির সঙ্গে রান্না: পেঁয়াজ, আলু বা টমেটোর মতো সবজির সঙ্গে করলা মিশিয়ে রান্না করুন। এই সংমিশ্রণ স্বাদের ভারসাম্য রক্ষা করে তিক্ততা কমায়। বাঙালি রান্নায় আলু-উচ্ছের তরকারি এর একটি জনপ্রিয় উদাহরণ।
ডিপ ফ্রাই করুন: লবণ দিয়ে রস বের করে করলা গভীর তেলে ভেজে নিন। এটি শুধু তিক্ততা কমায় না, বরং একটি ক্রিস্পি ও মুখরোচক খাবারে রূপান্তরিত করে।
চিনি ও ভিনেগারের মিশ্রণ: সমান পরিমাণ চিনি ও ভিনেগার সেদ্ধ করে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। করলার ওপর এটি ঢেলে ৩০ মিনিট রেখে দিন। এটি তিক্ততা কমাতে অসাধারণ কাজ করে।
করলার স্বাস্থ্য উপকারিতা
করলা শুধু স্বাদের জন্য নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও অতুলনীয়। এটি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ। এছাড়া, এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। বাঙালি পরিবারে উচ্ছের রস বা ভর্তা প্রায়ই ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে, এর তেতো স্বাদের কারণে অনেকে এড়িয়ে চলেন। এই টিপসগুলো আপনাকে স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু উভয়ভাবেই করলা উপভোগ করতে সাহায্য করবে।
বাঙালি রান্নায় করলা
বাংলার রান্নাঘরে করলা বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। উচ্ছের ভর্তা, আলু দিয়ে তরকারি বা সরষে দিয়ে রান্না করা জনপ্রিয়। এই টিপস ব্যবহার করে আপনি এই খাবারগুলোকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে পারেন। একজন গৃহিণী বলেন, “লবণ আর দইয়ে ভিজিয়ে রাখলে উচ্ছের তেতো ভাব অনেক কমে যায়। এখন আমার বাচ্চারাও এটি খেতে চায়।”
করলার তিক্ততা দূর করা এখন আর কঠিন নয়। এই সহজ উপায়গুলো আপনার রান্নাকে স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু করে তুলবে। বাঙালি খাদ্যাভ্যাসে করলাকে নতুনভাবে জায়গা করে দিতে এই টিপস ব্যবহার করে দেখুন। স্বাস্থ্যের সঙ্গে স্বাদের মেলবন্ধন ঘটিয়ে করলাকে আপনার প্লেটের নতুন তারকা বানান!