কলকাতার (Kolkata) পার্কস্ট্রিট এলাকার মার্কুইস স্ট্রিট থেকে সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছে এক বাংলাদেশি নাগরিক সেলিম মোহম্মদ। তিনি মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা এবং স্থানীয়ভাবে বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, সেলিম মোহম্মদ গত দু’বছর আগে রাজনৈতিক অশান্তির কারণে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন এবং ভারতে এসে একটি জাল পরিচয় পত্র তৈরি করে আত্মগোপন করেন। তার নাম বদলে তিনি ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেন এবং বর্তমানে তিনি একটি হোটেলে কাজ করছিলেন।
সেলিম মোহম্মদ ও তার জাল নথি তৈরির কাহিনী
পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, সেলিম মোহম্মদ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কিত অশান্তির শিকার হয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে চলে আসেন। দু’বছর আগে তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য একাধিক জাল নথি তৈরি করেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল একটি জাল আধার কার্ড। এই নথি ব্যবহার করে তিনি ভারতীয় পাসপোর্টও তৈরি করেন, যা তাকে ভারতে অবাধভাবে চলাফেরা করতে সক্ষম করে।
ঘূর্ণিঝড় ফেঞ্জলের প্রভাবে কমল বাংলার তাপমাত্রা, কোথায় রয়েছে বৃষ্টির পূর্বাভাস?
সেলিমের জাল পরিচয়পত্র তৈরির উদ্দেশ্য ছিল, যাতে তিনি ভারতীয় নাগরিক হিসেবে রয়ে যেতে পারেন এবং তার কোন সন্দেহ সৃষ্টি না হয়। তিনি রবির শর্মা নামে এক ভারতীয় নাগরিকের নাম ব্যবহার করেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি কলকাতায় ভারতীয় পরিচয় গড়ে তোলেন। তার এই নাম পরিবর্তন, পরিচয় এবং নথি তৈরির কাজ ছিল সম্পূর্ণ কৌশলপূর্ণ এবং এটি অনেক দিন ধরে চলছিল।
পার্কস্ট্রিটের হোটেলে কাজ করতেন সেলিম
পার্কস্ট্রিটের একটি হোটেলে কর্মরত সেলিম মোহম্মদ স্থানীয়ভাবে বেশ পরিচিত ছিলেন। তার কাজ ছিল বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষের জন্য হোটেল ব্যবস্থা করা এবং তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা। এই হোটেলের সেবা প্রদানকারীর ভূমিকায় থাকাকালীন, তিনি শহরে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা করতেন এবং সঠিক পদ্ধতিতে তাদের জন্য সুবিধা তৈরি করতেন। তবে তার পেছনে ছিল একটি ভিন্ন উদ্দেশ্য যা ধরা পড়ে যায় পুলিশি তৎপরতায়।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জাত দেখালেন শ্রীজাত
হোটেলে কাজ করার পাশাপাশি সেলিম নিজের জাল পরিচয়পত্র দিয়ে বিভিন্ন অসামাজিক কাজও করতেন। তিনি শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিদেশি নাগরিকদের জন্য হোটেল এবং থাকার ব্যবস্থা করতেন, যাতে তাদের চলাচলে কোন বাধা না আসে। তার এই কাজে কোন সন্দেহ প্রকাশ না হলেও, সেলিমের আসল পরিচয় এবং উদ্দেশ্য শেষ পর্যন্ত পুলিশের নজরে আসে।
সেলিম মোহম্মদের গ্রেফতার
মার্কুইস স্ট্রিট থেকে সেলিম মোহম্মদকে গ্রেফতার করার পর পুলিশ জানায়, তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। বিশেষত জাল পরিচয়পত্র তৈরি এবং ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরির। পুলিশের তদন্তে সেলিমের কাছে পাওয়া গেছে একাধিক জাল নথি। যার মধ্যে ছিল আধার কার্ড, পাসপোর্ট এবং অন্যান্য সরকারি নথি।
ভারতের জাতীয় পতাকার অসম্মানে বিস্ফোরক তসলিমা
তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠেছে, তিনি অবৈধভাবে ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন এবং সেজন্য বিভিন্ন অসৎ উপায় ব্যবহার করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেলিম মোহম্মদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে তদন্ত চলছে। তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং ভারতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় সুরক্ষার জন্য এই ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতি পুলিশ কঠোর অবস্থান নেবে।
রাজনৈতিক পটভূমি
সেলিম মোহম্মদ বাংলাদেশে একজন বিএনপি নেতা ছিলেন, যার কারণে তিনি রাজনৈতিক অশান্তির শিকার হন। আওয়ামী লীগের সাথে তার সংঘর্ষের কারণে তিনি জীবন রক্ষা করতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসেন। তার রাজনৈতিক পরিচিতি ছিল তার পালানোর প্রধান কারণ, যার কারণে তিনি প্রাথমিকভাবে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তার রাজনৈতিক ভূমিকা এবং বাংলাদেশের মধ্যে অশান্তি তাকে ভারতে পালিয়ে আসার জন্য বাধ্য করেছিল।
পথে শরিক আইএসএফ, বাংলাদেশ ইস্যুতে শীতঘুমে সিপিএম
সেলিম মোহম্মদের গ্রেফতারের ফলে কলকাতার নিরাপত্তা বাহিনী এবং ভারতীয় প্রশাসনের প্রতি প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশেষত, দেশের ভেতরে বিদেশি নাগরিকরা কিভাবে এভাবে জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে এবং অবৈধভাবে নাগরিকত্ব গ্রহণ করে, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠেছে।
এটি স্পষ্ট যে, সেলিম মোহম্মদের মতো বিদেশি নাগরিকেরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অশান্তির কারণে ভারতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। পুলিশের তদন্ত এবং এধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তৎপরতা শুরু হয়েছে। তবে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, জাতীয় নিরাপত্তা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রতি আরও মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়েছে।