বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে জাত দেখালেন শ্রীজাত

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান বিতর্ক এবং উত্তেজনার মাঝে প্রখ্যাত কবি ও লেখক শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Srijato Bandyopadhyay) একটি পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। তাঁর লেখা…

Srijato Bandyopadhyay

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান বিতর্ক এবং উত্তেজনার মাঝে প্রখ্যাত কবি ও লেখক শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Srijato Bandyopadhyay) একটি পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে। তাঁর লেখা একটি আবেগপূর্ণ পোস্টে তিনি দেশের প্রতি ভালোবাসা ও জাতীয়তাবোধের কথা তুলে ধরেছেন, যা বর্তমানে সারা দেশে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।

শ্রীজাত তার পোস্টে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত উত্তেজনা ও দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে গভীর কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। “যে-পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই অংশ ছিলে একদিন” এই শক্তিশালী বক্তব্যটি অনেকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। তিনি মূলত দেশ ও জাতির প্রতি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন, এবং দেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

   

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ
সম্প্রতি, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বিষয়টি ভারতের রাজনীতি এবং জনগণের মাঝে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বিশেষত, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রীজাতর মতো লেখকরা সেই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই সমস্ত পরিস্থিতি ভারতের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিত্রের ওপর প্রভাব ফেলছে, যার ফলস্বরূপ অনেকেই সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে নিজেদের মতামত প্রকাশ করছেন।

শ্রীজাত তার পোস্টে ভাষা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, “ভাষা তো নিশ্চয় প্রিয়, তারও চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি।” একদিকে বাংলাদেশের পতাকার প্রতি অসম্মান এবং অন্যদিকে ভারতীয় জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা – এসবই তাকে উদ্বিগ্ন করেছে। তার মতে, এই সব বিতর্কের মাঝেই একটা সুতো থাকে, যা সহজেই ছিঁড়ে যেতে পারে। যদি অতিরিক্ত দ্বেষ এবং ঘৃণা জমে উঠে, তবে জাতি হিসেবে আমাদের নিজেদের রক্ষা করার প্রয়োজন।

শ্রীজাতের প্রতিবাদ: কী বার্তা রয়েছে?
শ্রীজাতের এই পোস্ট দেশের জনগণের মধ্যে একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করেছে। তিনি একদিকে দেশের জন্য প্রাণপণ ভালোবাসা ব্যক্ত করেছেন, অন্যদিকে সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন অসংগতি এবং দ্বেষের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি মনে করেন, ‘ভালবাসা-বিরোধের মাঝখানে সরু একটা সুতো’ এবং এই সুতোর ওপর দাঁড়িয়ে দেশ এবং জনগণের শাসন চলছে। তার মতে, যদি এই সুতোর টানটান থাকে, তবে দেশের মধ্যে একতা ও শান্তি বজায় রাখা সম্ভব হবে। তবে, যদি এর উল্টো ঘটে এবং শত্রুতার আগুন বেড়ে যায়, তবে দেশের কল্যাণ সম্ভব নয়।

প্রতিবাদের মানে: রাজনৈতিক মেরুকরণের বিরুদ্ধে সতর্কতা
শ্রীজাতের পোস্টে থাকা ‘ভালবাসা-বিরোধের মাঝখানে সরু একটা সুতো’ এই বাক্যটি রাজনৈতিক মেরুকরণের বিরুদ্ধে এক সতর্কবার্তা প্রদান করেছে। তিনি মনে করেন, দেশে চলমান পরিস্থিতির মাঝে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত হবে পরিস্থিতিকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা, নতুবা ক্ষতি হতে পারে জাতির ঐক্য এবং একতা।

শ্রীজাত আরও বলেছেন, “এত যদি দ্বেষ থাকে, যদি এত ঘৃণা হয় জড়ো – তবে তো সওয়াল ওঠে, ক্ষমা কি দেশের চেয়ে বড়?” এর মাধ্যমে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন, যা সমাজে একধরনের আত্মসমালোচনা তৈরি করেছে। অর্থাৎ, যদি আমরা নিজেদের দেশের সম্মান রক্ষা করতে চাই, তবে দেশের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়িয়ে দেবার চেয়ে ক্ষমার কথা ভাবা উচিত।

দেশের একতা ও শান্তি: শ্রীজাতের বার্তা
প্রতিবাদ মানেই যুদ্ধ নয়। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং সরকারের প্রতি সহানুভূতির মাধ্যমে দেশের সবার একে অপরের প্রতি সম্মান বজায় রাখা প্রয়োজন। শ্রীজাত এই বিষয়টি খুবই স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি ‘ভালবাসা’ এবং ‘ক্ষমা’কে দেশের চেয়ে বড় মনে করছেন, এবং আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে এই মূল্যবোধগুলোকে সামনে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

তার পোস্টে “নামেই স্বাধীন তুমি, চেতনায় আজও পরাধীন” – এই কথাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে তিনি দেশের স্বাধীনতার পাশাপাশি চেতনার স্বাধীনতার গুরুত্বও ফুটিয়ে তুলেছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা শুধু দেশের জন্য নয়, আমাদের চিন্তাধারার জন্যও। যদি চিন্তায় পরাধীন থাকি, তবে স্বাধীনতা কেবল একটি নাম হয়ে থাকবে।

শুক্রবার রাতে সোশাল মিডিয়ায় স্বরচিত পতাকা কবিতা পোস্ট করেন শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়।
প তা কা
————–
শুশ্রূষা ও জল নিয়ে কী সহজে ভুলে গেলে ঋণ!
যে-পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই অংশ ছিলে একদিন।
ভাষা তো নিশ্চয় প্রিয়। তারও চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি।
আমাকে ‘বাঙালি’ থেকে ‘ভারতীয়’ করে তুললে তুমি।
ভালবাসা-বিরোধের মাঝখানে সরু একটা সুতো
তাকে যদি তুলে নাও, অন্য ভাবে কথা হবে দ্রুত।
এত যদি দ্বেষ থাকে, যদি এত ঘৃণা হয় জড়ো –
তবে তো সওয়াল ওঠে, ক্ষমা কি দেশের চেয়ে বড়?
নামেই স্বাধীন তুমি। চেতনায় আজও পরাধীন।
যে-পতাকা পিষে যাচ্ছ, তারই নীচে ছিলে একদিন।

শ্রীজাতের পোস্ট আসলে আমাদের সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র তুলে ধরে। দেশের প্রতি ভালোবাসা, জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা, রাজনৈতিক মেরুকরণের বিরুদ্ধে সতর্কতা এবং চেতনার স্বাধীনতা – সব কিছুই এই পোস্টের মূল বার্তা। তিনি সবার কাছে শান্তির পথে চলার আহ্বান জানিয়েছেন এবং নিজেদের ঘর পোড়ানোর চেয়ে প্রতিবেশীর আগুন নিয়ে নিজেদের ঘর রক্ষা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। শ্রীজাতের এই পোস্ট দেশের মানুষের মধ্যে এক নতুন চিন্তাভাবনা এবং দায়বদ্ধতার সৃষ্টি করেছে, যা আগামী দিনে রাজনৈতিক এবং সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এই ধরনের প্রতিবাদ ও বার্তা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এর মাধ্যমে জাতি হিসেবে আমাদের অগ্রগতি সম্ভব।