Loksabha election 2024: ‘গুলি বন্দুকের মস্তানি, শিক্ষা-সততার মস্তানির কাছে নগণ্য’ মুখোমুখি দেবদূত ঘোষ

আদিত্য ঘোষ, ব্যারাকপুরঃ ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআইএমের প্রার্থী অভিনেতা দেবদূত ঘোষ। তাঁর লড়াই দুই বাহুবলীর বিপক্ষে, একদিকে তৃণমূলের পার্থ ভৌমিক অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী অর্জুন সিং।…

debdut ghosh

আদিত্য ঘোষ, ব্যারাকপুরঃ ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআইএমের প্রার্থী অভিনেতা দেবদূত ঘোষ। তাঁর লড়াই দুই বাহুবলীর বিপক্ষে, একদিকে তৃণমূলের পার্থ ভৌমিক অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী অর্জুন সিং। দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মদ্যিখানে তিনি খানিক ফ্যাকাশে। আক্ষরিক অর্থে এই ভোট যুদ্ধ তাঁর কাছে নিয়মরক্ষার ম্যাচের মতো। তিনি জানেন হারবেন কিন্তু হাসিমুখে লড়াই জারি আছে। তাঁর সঙ্গে যখন ফোনে কথা হচ্ছে তখন খানিক রাত, সদ্য দাদাবৌদির বিরিয়ানি দোকান ছাড়িয়ে তাঁর গাড়ি এগিয়ে চলেছে বাইপাসের উদ্দেশ্যে। জিজ্ঞাসা করলাম,” ভোটের ময়দানে আপনি কি বেমানান? তাও এতদিন পরে দল আপনার নাম ঘোষণা করল।” তিনি হাসতে হাসতে বললেন,” আমি কত বছর ধরে রাজনীতি করছি অনেকেই জানে না। সমাজসেবামূলক প্রচুর কাজের সঙ্গে আমি বহু বহু বছর ধরে যুক্ত।”

প্রসঙ্গত সিপিআইএমের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায় ব্যারাকপুরের কাকে প্রার্থী করবে ভেবে না পেয়ে সবশেষে দেবদূত ঘোষকে বেছে নেওয়া হয়। তাই তাঁকে কলকাতা থেকে ব্যারাকপুরের নিয়ে আসা হয়ছে। যদিও এইসব বিষয়ে তিনি খুব একটা ভাবিত নয়, তাঁর কথায়, “দল যেখানে বলেছে সেখানে লড়ছি। দলই শেষ কথা বলে।” শুধু তাই নয় নিজের জয়ের ব্যাপারে তিনি একশ শতাংশ নিশ্চিত। ব্যারাকপুরের প্রচুর জুটমিল বন্ধ, সেই বন্ধ জুটমিল খোলা এবং দিনমজদুররা যাতে ঠিক করে বেতন পান সেই বিষয়ে খানিক চিন্তিত অভিনেতা দেবদূত ঘোষ। তিনি বললেন, ” নির্দিষ্ট আইন প্রনয়ণ করতে হবে। কেউ যেন কিছুকে দান হিসেবে গ্রহন না করে।” একটু থেমে তিনি আরও বললেন, ” এই যে লক্ষীর ভান্ডার দেওয়া হচ্ছে, সেটাও আইন প্রনয়ণ করে দেওয়া যেতে পারে।”

তিনি নিজের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বললেন, ” আমি কলকাতার ছেলে হলেও এই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল কিন্তু আমার কাছে হাতের তালুর মতো চেনা। অভিনয়ের স্বার্থে হোক, থিয়েটারের জন্যই হোক অথবা সমাজসেবা মূলক কাজে হোক, এই গোটা ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র কিন্তু আমার বেশ পরিচিত এবং প্রিয়।” কথাটা শুনতে কিছুটা হলেও স্ক্রিপটেড লাগল। তবুও এই ভোটের বাজারে তিনি ঘৃণার ব্যবহার করলেন না। তাঁর বিপক্ষ দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে একটিও খারাপ শব্দ ব্যবহার না করে কথা বললেন। কিংবা দলীয় বিদ্বেষও প্রকাশ করলেন না। শুধুমাত্র দলীয় আদর্শগত জায়গায় ঠিক থাকলেন, বললেন, ” মানুষকে বেশীদিন বোকা বানানো যায় না। একদিন মানুষ ঠিক বুঝবে।”

বুঝবে কি? তবে রাত বাড়ছে! তিনি ধীরে ধীরে বাইপাশে এসে উঠেছেন। তিনি বললেন, ” আমি আসলে রাস্তায় থাকা মানুষ। রাস্তাতেই অর্ধেক জীবন কেটে গিয়েছে। তাই জীবনটা চিনি। ” জিজ্ঞাসা করলাম, ” এই ঘৃণার বাজারে কি ভালবাসা ছড়াতে এসেছেন?” তিনি হাসলেন। বললেন, ” মিথ্যে খুব সহজে বিক্রি হয়, সততা নিয়ে মানুষ সন্ধে অবধি বসে থাকে।”

প্রসঙ্গত এইবার প্রথম লোকসভা নির্বাচন। এর আগে বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছেন। তাঁর ভাষায়, ” সংসদীয় নির্বাচনে লড়ে দিল্লি গিয়ে মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করব। এখন অভিনয় থেকে ছুটি নিয়েছি। এখন চব্বিশ ঘণ্টা রাজনীতি। মানুষের পাশে থাকব। তাঁদের কথা শুনব।”রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে দেবদূত ঘোষ দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর ভোট কাটবে। শুধু তাই নয়, তাঁর ফেসভ্যালু কিছুটা হলেও সিপিএমের পুরোনো হাল ফেরাতে পারবেন। ভোট আসতে আর যদিও খুব বেশী সময় নেই, দেবদূত ঘোষ কি পারবেন দুই ‘নেতা’কে টক্কর দিতে? সময়ই কথা বলবে। ঘৃণার বাজারে তিনি তো ভালবাসা বিক্রি করতে এসেছেন।