রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে বয়কটের ডাক দিল বিজেপি (BJP West Bengal)। শুক্রবার বিধানসভা চত্বরে ভগবত গীতা হাতে নিয়ে মিছিল করেন বিজেপির বিধায়কেরা (BJP West Bengal)। তাঁদের দাবি পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের অপমান করেছেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। এই অভিযোগ তুলে ফিরহাদকে বিধানসভা থেকে বরখাস্তের দাবিও জানিয়েছে বিজেপি (BJP West Bengal)।
বিজেপির তরফে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মারাত্মক অভিযোগ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, অল ইন্ডিয়া কোরান কম্পিটিশনে গিয়ে ধর্মান্তকরণের পক্ষে সওয়াল করেছেন ফিরহাদ। শুভেন্দুর আরও দাবী, রাজ্যের বিভিন্ন ধর্মের সম্প্রদায়ের মানুষের ভাবাবেগে আঘাত করেছে ববি হাকিমের এই বক্তব্য। শুভেন্দুর প্রশ্ন, রাজ্যের মন্ত্রী এবং মেয়র হিসাবে শপথ নেওয়ার পরে কি করে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গিয়ে এইভাবে পক্ষপাতীত্বমূলক বক্তব্য রাখছেন ফিরহাদ হাকিম?
ববি হাকিমকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়ে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বঙ্গ বিজেপির বিধায়করা। বিজেপি নেত্রী তথা বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পলের বক্তব্য, রাজ্যের মন্ত্রীর কাছে তাঁদের কোনো প্রশ্ন থাকলেও, তাঁরা এই মুহূর্তে সেটা করবেন না। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, বিধানসভায় হোক বা পুরসভায়, তাঁদের দলের বিধায়ক বা কাউন্সিলাররা পুরোপুরি বয়কট করতে চলেছেন ফিরহাদ হাকিমকে। এই মুহূর্তে বিজেপির এই বয়কটের দাবিতে উত্তাল রাজ্যের রাজনীতি।
নিজেদেরই আইনের ফাঁদে নাভিশ্বাস কর্পোরেশনের? বাড়ি ভাঙার চক্করে পুরসভারই পকেট ফাঁকা!
আজ বিধানসভার চত্বরে বিজেপির মিছিলে বেশ কিছু অভিনব দৃশ্য দেখা গেল। বিজেপি বিধায়কদের প্রত্যেকের হাতেই ছিল ভগবত গীতা। এবং তাঁরা প্রত্যেকেই একটি গেঞ্জি পড়েছিলেন। যার সামনে বড় বড় অক্ষরের লেখা ছিল “গর্ব করে বলো আমি হিন্দু”। গেঞ্জির পিঠে লেখা রয়েছে রামকৃষ্ণ দেবের সেই অমোঘ বাণী ” যত মত তত পথ”!
সম্প্রতি একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ফিরহাদের ইসলাম নিয়ে করা বক্তব্যে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যায়। বিজেপির নেতারা দাবি করতে শুরু করেন যে ধর্মান্তকরণের পক্ষে এবং হিন্দু বিরোধী বক্তব্য রেখেছেন কলকাতার মেয়র। ফিরহাদও এই বিষয় অস্বীকার না করেও গোটা বিষয়টির ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন।
কলকাতার পুজো দুর্গাপুজোর জগতে পুজো উদ্যোক্তা হিসেবে ফিরহাদের যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে। ফিরহাদের নিজের পাড়া চেতলা অগ্রণীর পুজোর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হিসাবে রয়েছেন তিনি। ফিরহাদের নিজের মতে ছোটবেলা থেকেই এই পুজোর উদ্যোক্তা তিনি। ২০১১তে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে চেতলা অগ্রণীর দূর্গাপুজো যেন এক অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে। তবে তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্য নিয়ে কিছুটা হলেও বিড়ম্বনায় পড়েছেন কলকাতার মেয়র।
লোকসভা ভোটে হারের দু’মাস পর ‘প্রকাশ্যে’ বিজেপির তাপস
এবার সেই বক্তব্য বিতর্কের আঁচ পৌঁছল বিধানসভায়। তবে তৃণমূলের বর্ষীয়ান এক নেতার মতে, সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত বঙ্গ বিজেপি। তাই রাজনৈতিক কোনো ইস্যু না পেয়ে অহেতুক একটি বক্তব্যকে নিয়ে জলঘোলা করছে তারা। যদিও মেয়র এবং রাজ্যের মন্ত্রীকে বয়কট, রাজ্য রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা এই মুহূর্তে দেখার বিষয়। তার থেকেও বড় বিষয় ফিরহাদ নিজে এই ব্যাপারটিকে কিভাবে সামাল দেন।