মমতার মুখে ‘ফাঁসি’, অভিষেকের দাবি ‘ডাইরেক্ট এনকাউন্টার’! বঙ্গ প্রশাসনে বাংলাদেশ এফেক্ট?

আর জি কর (R G Kar) কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গ কী আগামীদিনে উত্তরপ্রদেশ হতে চলেছে? এর আগেই মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন ফাঁসি (R G Kar)। এবার রাজ্যের শাসক দল…

Image of Abhisek Banerjee, a politician, with a quote overlay saying 'I want encounter, not inquiry' - referring to his demand for strict action against those involved in rape case of R g Kar

আর জি কর (R G Kar) কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গ কী আগামীদিনে উত্তরপ্রদেশ হতে চলেছে? এর আগেই মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন ফাঁসি (R G Kar)। এবার রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন (R G Kar) । উত্তরপ্রদেশের যোগীর সেই এনকাউন্টার তত্ত্বই উঠে এলো পশ্চিমবঙ্গের অভিষেকের মুখে। অনেকের মতে বাংলাদেশ এফেক্টেই সরকারের এই ভোল বদল!

দেশের প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজ আর জি কর। যে মেডিক্যাল কলেজে প্রতিদিন লাখো লাখো মানুষ নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে ছুটে আসেন। আর সেই মেডিক্যাল কলেজেই কর্তব্যরত একজন নিবেদিতপ্রাণ মহিলা ডাক্তারের প্রাণ গেল। ‘প্রাণ গেল’ বললে ভুল হবে! নৃশংসভাবে তার প্রাণ ‘কেড়ে’ নেওয়া হল ধর্ষণের পর।

   

আর এই ঘটনায় অভিযুক্ত কে? জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার! সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে ক্ষোভের আবহাওয়া। শুধু রাজ্য নয়, সারা দেশ জুড়ে ছি:ছিক্কার পড়ে গিয়েছে। এ তো প্রদীপের নিচেই অন্ধকার। অন্ধকার বলা ভুল, রীতিমতন নিকষ অমাবস্যার ঘন আঁধার।

রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, দুই দপ্তরই মুখ্যমন্ত্রীর হাতে। বঙ্গের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী অভিযুক্তের ফাঁসির দাবি করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  মুখে এই ধরনের কথা এর আগে শোনা যায়নি বলেই দাবি অভিজ্ঞদের।

ফের রক্তাক্ত জম্মু-কাশ্মীর, জঙ্গিদের গুলিতে শহিদ দুই জওয়ান

এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও অনেকটা সেই পথে হেঁটে ফাঁসি নয়, একেবারে ডাইরেক্ট এনকাউন্টারের দাবি তুললেন। প্রয়োজনে আইন পরিবর্তন করা এবং আদালতে সময় সাপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়ার অবসান করা দরকার বলে সোচ্চার দাবি অভিষেকের মুখে।

সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে রাজ্যে। কিন্তু আর জি করে যা ঘটেছে তা কার্যত নজিরবিহীন ঘটনা। আর সেই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর এখনও অবধি যা যা পদক্ষেপ বা বক্তব্য রেখেছেন তাও কার্যত নজিরবিহীন। তাহলে কী পশ্চিমবঙ্গের চিরাচরিত শাসনব্যবস্থা বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা অনেকটা বদলাতে চলেছে? পশ্চিমবঙ্গের শেষ ধর্ষণকাণ্ডে ফাঁসির সাজা হয়েছিল বাম আমলে। অপরাধী ছিল ধনঞ্জয় মন্ডল। 

কিন্তু এবার সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয়ের এই পাশবিক কীর্তিতে কার্যত মুখ পুড়েছে সরকারেরও। কারণ পুলিশে  সিভিক  ভলেন্টিয়ার নিয়োগের প্রক্রিয়া এই তৃণমূল সরকারের আমলেই শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শাসক ঘনিষ্ঠ ক্যান্ডিডেটরাই সিভিক ভলেন্টিয়ার্স-এর চাকরি পান বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি এই সিভিক ভলেন্টিয়ার্স নিয়ে একাধিক মামলাও হয়েছে।

অলিম্পিক পদকে ‘ভেজাল’ ব্রোঞ্জ? টুর্নামেন্ট শেষের আগেই ফিকে তামাটে রং

আরজিকরের ঘটনায় কালপ্রিট হিসেবে নাম উঠছে সেই সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয়েরই। সর্ষের মধ্যেই থাকা ‘ভূত’ দমনের জন্য কড়া বদক্ষেপ করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই মমতা সরকারের। এমনটাই দাবি করছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বিশেষজ্ঞ মহল ।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ছাত্র বিক্ষোভও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যেভাবে এই ঘটনার প্রতিবাদে শুধু ডাক্তার বা সাধারণ ছাত্র নয় তৃণমূলের একাধিক তরুণ সমর্থকেরাও মুখ খুলছেন, তাতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে একটা অভিযোগ, একটা ক্ষোভ তলে তলে জমা হচ্ছে।

সেই ক্ষোভ অচিরেই দাবানলে পরিণত হতেই পারে, এটা বিলক্ষণ বুঝেছেন মমতারা? তাই একদা যে যোগীকে এনকাউন্টার নিয়ে কথা শোনানো হত, আজ তাঁরই দাওয়াই খোদ অভিষেকের মুখে উঠে আসছে? শুধু এনকাউন্টার নয়, রীতিমত আইন করে সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করার দাবিও তুলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

 পুলিশ এবং প্রশাসনের দুর্নীতি নিয়ে কিছুদিন ধরেই বারংবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার ধর্ষণ এবং আইন-শৃঙ্খলা নিয়েও চরমতম পদক্ষেপের ঘোষণা। অনেকের মতেই পাল্টাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনের ধরন। দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছরের কাছাকাছি শাসনকালে একাধিক ক্ষোভ জমা হয়েছে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু নির্বাচনে প্রচারের ঝড় এবং রাজনীতির অঙ্কে জয় এসেছে অনায়াসে।

তা সত্ত্বেও ব্যাপক জয়ের পরেও ‘মহাপতন’ যে ঘটতেই পারে, তার জলজ্যান্ত প্রমাণ পড়শি দেশ। আর তাই আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং অপরাধের মোকাবিলায় কড়া হাতে চরম দাওয়াই দিতে চলেছে তৃণমূল সরকার? বিরোধী পক্ষের কথায় সেটা শুধুই যেন কাগজে-কলমে বা মুখে না হয়।

কার্যক্ষেত্রে যদি ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক, অমানবিক কাজের জন্য এনকাউন্টারের মতো অত্যন্ত কড়া পদক্ষেপ সত্যিই নেওয়া হয়, তাহলে হয়তো এ রাজ্যে এই ধরনের ঘটনা ঘটাবার আগে অপরাধীরা এক-দুবার নয়, হাজার বার ভাববে।

রাজ্যের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁরই আমলে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কার্যত নজিরবিহীন ঘটনা। ক্ষমতায় আসার পরপরই পার্ক স্ট্রিটের ঘটনাতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া এখনও অনেকেরই মনে আছে।

কিন্তু এবার যা ঘটল, তা কার্যত বিরলের মধ্যে বিরলতম। এখন দেখা দরকার, মা মাটি মানুষের সরকার, তাদের মা বোন অর্থাৎ মেয়েদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কত কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে! বঙ্গের অনেক মহিলাই সাম্প্রতিক ঘটনার পরে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের মতো  ‘এনকাউন্টার’ দাওয়াইয়েরই দাবি জানাচ্ছেন। এখন বাংলার ‘অগ্নিকন্যা’ বলে খ্যাত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের নিরাপত্তার জন্য কোন রনং দেহি অবতার নেন, সেটাই দেখার বিষয়।