প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ভারত বিরোধী জঙ্গি নেতা ছিলেন। পরে জঙ্গি জীবন ছেড়ে পুরোদস্তুর রাজনীতিক ও মোদীর ঘনিষ্ঠ হন-এমনই বর্ণিল ও তীব্র আলোচিত মিজোরামের মুৃ্খ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা (Zoramthanga) পরাজিত। আইজল থেকে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই পুরো উত্তর পূর্বাঞ্চল ভারতে আলোড়ন। দিল্লি আলোড়িত। মিজোরামে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন হয়ে গেল তাতে ক্ষমতাচ্যুত মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (MNF)। একদা তীব্র জাতিভিত্তিক ভারত শাসন বিরোধী ভাবাবেগে আচ্ছন্ন জোরামথাঙ্গাকে ভোটে হারিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দিলেন মিজো জনতা।
আগ্নেয়াস্ত্র ফেলে সংসদীয় রাজনীতিতে অংশ নিয়ে জোরামথাঙ্গা মিজোরাম শাসন করলেন দু’দফায়-২০০৩-২০০8 এবং ২০১৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে নিজেই পরাজিত হলেন। মিজোরামের ক্ষমতায় এসেছেন আরও এক বর্নিল চরিত্রের রাজনীতিক লালদুহোমা। তিনি ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর দেহরক্ষী।
পড়ুুন ইন্দিরা গান্ধীর দেহরক্ষী লালদুহোমার বর্ণময় জীবন কাহিনী : Lalduhoma: জঙ্গিদের যম, ইন্দিরা গান্ধীর দেহরক্ষী প্রধান লালদুহোমা মুখ্যমন্ত্রী হবেন
ভারত স্বাধীন হবার পর মিজোরামের রাজনীতি বারবার গরম হয়েছে উগ্র জাতিভিত্তিক সশস্ত্র আন্দোলনে। সেই আন্দোলনের অন্যতম নেতা লালডেঙ্গা। তার নেতৃত্বে যে গেরিলা মুক্তাঞ্চল গঠিত হয়েছিল সেই পরিস্থিতি ভাঙতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ১৯৬৬ সালে বায়ুসেনা অভিযান “Operation Jericho” চলে। সেই অভিযানে আইজল শহর মিজো জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল। সেই সময় লালডেঙ্গার ঘনিষ্ঠ ছিলেন জোরামথাঙ্গা। গোয়েন্দা বিভাগের বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হয়েছিল ভারত-মায়ানমার-বাংলাদেশ ছাড়িয়ে সুদূর থাইল্যান্ডের গহীন জটিল পার্বত্য ভূখণ্ডকে জোরামথাঙ্গা হাতের তালুর মত জানে।
মিজো ভাবাবেগকে পুঁজি করেই এমনই ভারত বিরোধী জঙ্গি নেতা জোরামথাঙ্গা মূলস্রোতে ফিরে রাজনীতির শীর্ষে উঠে আসেন। বিবিসি জানিয়েছে, বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোট গড়ে তোলা হয় তার একেবারে শুরু থেকে সেই এনডিএ শরিক তার দল এমএনএফ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদীর খুবই ঘনিষ্ঠ হন জোরামথাঙ্গা। তার পুরনো গেরিলা জীবনের অভিজ্ঞতাকে ব্যবহার করে উত্তরপূর্ব ভারতের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সাথে একাধিক আলোচনা করেছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।
বিবিসি আরও জানিয়েছে, এক দশক ধরে নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বে সরকারের প্রধান ‘ট্রাবলশ্যুটার’ হয়ে অজিত দোভাল বহু গোপন মিশনে জোরামথাঙ্গাকে নিয়েছিলেন। চিন, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মতো তিনটি দেশের সাথে ভারতের বিস্তির্ণ জটিল সীমান্ত সমস্যা ও জঙ্গি অনুপ্রবেশ রোধে জোরামথাঙ্গার পুরনো ‘কানেকশন’ কাজে এসেছিল।