Operation All Clear: বন্ধুর জন্য বন্দুক হাতে জঙ্গি দমনে ভুটানি সেনা, নেপথ্যে জ্যোতি বসুর সফর

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: আপনি যদি ভুটান (Bhutan) যান তাহলে একটা পাইন পাতা সেই সব নিহত বিদেশি সৈনিকদের শ্রদ্ধা জানিয়ে দোচুলা স্তূপের ঠান্ডা পাথরের উপর রেখে আসবেন।…

Operation All Clear

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: আপনি যদি ভুটান (Bhutan) যান তাহলে একটা পাইন পাতা সেই সব নিহত বিদেশি সৈনিকদের শ্রদ্ধা জানিয়ে দোচুলা স্তূপের ঠান্ডা পাথরের উপর রেখে আসবেন। কারণ, বন্ধু ভারতকে নিরাপদে রাখার জন্য একাধিক জঙ্গি সংগঠনকে গুঁড়িয়ে দিতে “অপারেশন অলক্লিয়ার” (Operation All Clear) অভিযানে নেমেছিল ভুটান। বিশ্বের ক্ষুদ্রতম সেনাবাহিনীর তালিকাভুক্ত বলে চর্চিত হয় রাজকীয় ভুটানি সেনা। ওই দোচুলা স্তূপটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম জঙ্গি দমন অভিযানে নিহত ভুটানি সেনাদের স্মৃতিতে তৈরি। আজ সেই জঙ্গি দমন অভিযানের ২০ বছর পূর্তি।

২০০৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে হিমালয়ের গভীর-গহীন অরণ্যে ভুটানি সেনার বন্দুক বারবার গর্জেছিল। সেদিন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসেনি নীল চোখের চিতা, লুকিয়ে গেছিল ভাল্লুক ও সোনালি বাঁদরের দল। সর্বদা ঘন কুয়াশা ঢেকে থাকে এমন জঙ্গলে ভারত সীমান্তের ধার ঘেঁষে চলছিল সেনা অভিযান। সীমান্তের এদিকে পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের জনপদগুলিতে তখন ভয় কী জানি কী হয়! চলছিল তীব্র গুলির লড়াই। ছিন্নভিন্ন হচ্ছিল ভারত বিরোধী জঙ্গিদের সব ঘাঁটি।

ভুটানি সেনার আক্রমণে দুই শীর্ষ ভারতীয় জঙ্গি নেতা আলফা প্রধান পরেশ বড়ুয়া ও কেএলও প্রধান জীবন সিংহ অবশ্য পালায়। অভিযান চলেছিল ২০০৩-২০০৪ সালের ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস জুড়ে। বর্তমানে আলফা (স্বাধীনতা) গোষ্ঠীর কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া আত্মগোপনে। আর কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা কেএলও প্রধান জীবন সিংহ (তামির দাস) আত্মসমর্পণ করে অসম সরকারের নজরবন্দি।

জ্যোতি বসুকে চিরন্তন বন্ধু মর্যাদা:

ভৌগোলিক কারণে পশ্চিমবঙ্গের অতি নিকট দেশ ভুটান। সেই কারণে বাংলার সাথেই বেশি সংযোগ। নব্বই দশকে ভুটানের জাতিগত নাগরিকত্ব প্রদান ইস্যুতে সীমান্ত এলাকা হয়েছিল গরম। সেই পরিস্থিতি সামলাতে ভারত সরকারের অনুরোধে কূটনৈতিক সফরে থিম্পু গিয়ে কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা জ্যোতি বসু বলেছিলেন তোমাদের বন্ধু দেশ ভারত। তোমাদের বিপদে পাশে আছি সবসময়। তোমরাও পাশে থেক। ভুটানের ততকালীন রাজ জিগমে সিংগে ওয়াংচুক। তিনি নিয়ম ভেঙে (প্রটোকল) সরাসরি জ্যোতি বসুকে আপ্যায়ণ করেন। পরে ভুটান সরকার বলেছিল জ্যোতি বসুর কারণেই এমন করা হয়েছে। অন্য দেশের রাজা ব্যাতীত আর কোনোদিনই ভুটান রাজা সরাসরি কোনও দেশের প্রেসিডেন্ট বাংলা প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে যাবেন না। কারণ, জ্যোতি বসু আমাদের ‘চিরন্তন বন্ধু’। সফরে কিছু সীমান্ত সমস্যা সমাধান করেছিলেন ততকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু।

আদবানি-বুদ্ধদেবের অনুরোধে অভিযান:

বিপদটা শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের পরবর্তী মু়খ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময়ে। অসমের আলফা জঙ্গি গোষ্ঠী মদতপুষ্ট উত্তরবঙ্গের কেএলও জঙ্গিরা নাশকতা ঘটাতে থাকে। জীবন সিংহের নির্দেশে ২০০২ সালে জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়িতে সিপিআইএম দফতরে ঢুকে গণহত্যা করেছিল কেএলও জঙ্গিরা। এরপরেই দেশের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবানি ও মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিশেষ আলোচনায় স্থির হয়েছিল ভুটান সরকারকে সেনা অভিযান চালাতে অনুরোধ করা হবে। কারণ, কেএলও সহ অন্তত সাতটি বিচ্ছিন্নতাবাদী-জঙ্গি সংগঠন ভুটানে ঘাঁটি তৈরি করেছে।

ভারত থেকে অনুরোধ আসার পর ভুটানের তৎকালীন ড্রাগন রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুকের নির্দেশে শুরু হয়েছিল জঙ্গি দমন অভিযান। হিমালয়ের জঙ্গলে বৃষ্টির মতো ঝরেছিল গুলি। ভুটান ভেঙেছিল ভারত বিরোধী জঙ্গিদের একাধিক ঘাঁটি। সবশেষে থিম্পু থেকে নয়াদিল্লিতে গেছিল বার্তা-ইটস অলক্লিয়ার।