Delhi Flood: উঠা লে ভাই পানি পিলা…৪৫ বছর পর ফের যমুনায় বন্দি দিল্লিবাসী

‘উঠা লে ভাই! পানি পিলা…’ ৪৫ বছর আগে জলবন্দি দিল্লিতে খাওয়ার জল পেতে কালঘাম ছুটেছিল। চারদিকে জল আর জল। অথচ পানীয়যোগ্য নয়। ১৯৭৮ সালের সেই…

‘উঠা লে ভাই! পানি পিলা…’ ৪৫ বছর আগে জলবন্দি দিল্লিতে খাওয়ার জল পেতে কালঘাম ছুটেছিল। চারদিকে জল আর জল। অথচ পানীয়যোগ্য নয়। ১৯৭৮ সালের সেই পরিস্থিতি দিল্লির প্রবীণরা মনে করতে পারেন। তবে সমকালীন প্রজন্ম শুনেই এসেছিল বা জানাই ছিল না। এবার তাদের সামনে ফের জলবন্দি পরিস্থিতি। খাওয়ার জল নেই! ১৯৭৮-২০২৩ এই সাড়ে চার দশকে দিল্লির দরজায় বেশকয়েকবার যমুনার জল ধাক্কা মারলেও এমন পরিস্থিতি হয়নি। ফিরে এসেছে সেই স্মৃতি। পুরোনো দেশি বিদেশি সংবাদপত্রে ধরা দিল্লির সেই বন্যার ছবি আর আজকের পরিস্থিতি একই।

গতকাল রাত থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নয়া দিল্লি এবং তার ৪ মিলিয়ন রাজ্যবাসী। শুধু আকাশপথ চালু রয়েছে। গত ১০০ বছরে সব থেকে ভয়ঙ্কর বন্যার সাক্ষী দিল্লিবাসী। তবে এমন পরিস্থিতিতে কৌতুহলের শেষ নেই। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিউ ব্রিজ থেকে ফুলে ফেঁপে ওঠা যমুনাকে দেখতে ব্যস্ত সাধারণ মানুষ।

ডুবে যাচ্ছে দিল্লির বড় একটা অংশ। দিল্লি সরকারের সচিবালয়ের ভিতর হুডহুড়িয়ে ঢুকছে যমুনার জল। এমনই অবস্থা যে জলমগ্ন দিল্লিতে পানীয় জলের সংকট তৈরি হচ্ছে। গত চার দশকে এমন ভয়াবহ বন্যা আর হয়নি রাজধানীতে। জলস্তরে সর্বকালীন রেকর্ড।

দিল্লির রিং রোড এলাকায় জল থৈ থৈ পরিস্থিতি। ১৯৭৮ সালের পর এমন পরিস্থিতি হয়েছে রাজধানীতে। আটাত্তর সালে যমুনা জল দিল্লিকে ডুবিয়েছিল। সেই বছর ভয়াবহ বন্যায় পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় ছিল করুণ হাল। তবে বাংলার বন্যা ছিল মূলত দামোদর, অজয়, ময়ূরাক্ষীর। আর দিল্লিতে ছিল যমুনার বন্যা। ফলে ১৯৭৮ সাল এখনও বন্যার বছর বলে কু়খ্যাত। সেই বন্যার থেকেও এবছর দিল্লির অবস্থা করুণ।

আটাত্তরের বন্যায় পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ ঘরছাড়া হয়ে গিয়েছিল। হাউর স্টেশনে বন্যায় ক্ষতগ্রস্থ মানুষ রেল আটকে প্রতিবাদ দেখায়। ইস্পাত এক্সপ্রেস ট্রেনকে আটকে দেয় তারা। ট্রেন আটকে প্রতিবাদ করে চাওয়া হয় খাবার, নৌকা এবং পরিবারের সদস্যদের বাড়ির ছাঁদ থেকে উদ্ধার। পানীয় জলের সংকট দেখা দেয় ত্রাণ শিবিরগুলোতে। ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আকাশ থেকে খাবার সরবরাহ করা হয়। কলেরা ছড়িয়ে পড়ার তীব্র সংশয় দেখা যায়।

একইভাবে পরিস্থিতি মোটেই ভালো ছিলনা উত্তরপ্রদেশে, হরিয়ানা, এবং পাঞ্জাবে। সরকারী মতে প্রায় ৫২৫ জনের মৃত্যু হয় সে বছর বন্যার জন্য। হাজার হাজার মানু্ষ নিখোঁজ হন, যাঁদের খোঁজ আর কখনও পাওয়া যায়নি। আজ ২০২৩ এর বন্যায় প্রায় ২০০,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। তারা অধিকাংশ দিল্লির উত্তরের গ্রামীণ এলাকার। তবে তাদের সরিয়ে পুরনো দিল্লির উঁচু অংশে নিরাপদে নিয়ে আসা হয়েছে। রিক্সা এবং কার্ট সঙ্গে করে নিয়ে নিরাপদ স্থানে এসেছে এই ক্ষতিগ্রস্থ মানুষরা। যেখানে সম্ভব তারা ক্যাম্প করেছে। সেনার তরফে নিচু এলাকা থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের উঁচু এলাকায় নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে। এক আধিকারিক জানিয়েছেন যে খোলা আকাশের নিচে তাদের ঘুমাতে হলেও অন্তত তাদের কাছে খাবার রয়েছে।

এই মুহূর্তে দিল্লিতে জরুরী অবস্থা চলছে। ফোনের লাইন নেই, ব্রিজগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সেনার তরফে ব্রিজগুলি থেকে বন্যাস্থলগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। তারা নজর রাখতে সমানে টহল দিচ্ছে। ১ মিলিয়নের বেশি মানুষ বিপর্যস্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তবে দিল্লির একাধিক বাসী সরকারের দিকে আঙুল তুলেছে। সরকার গ্রামাঞ্চলে সতর্কতা জারি করতে দেরি করেছে বলেই অভিযোগ করা হয়েছে।