করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনের (Lockdown) কারণে দেশে আত্মহত্যার ঘটনা অনেকটাই বেড়েছে। আত্মহত্যা বাড়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়েছে, ২০২০ সালে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে গোটা দেশে আট হাজারের বেশি মানুষ আত্মঘাতী হয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য বলছে, লকডাউনের জন্য বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। একই সঙ্গে আর্থিক মন্দা, দীর্ঘদিন ধরে বন্দিদশায় বেশিরভাগ মানুষই তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। এসবের জেরে বাড়ে গার্হস্থ্য হিংসা। এ সবের সম্মিলিত কারণেই আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, আর্থিক মন্দা, সময়মতো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া, বেকারত্বের মত বিভিন্ন কারণে ২০২০ সাল থেকে ৮৭৬১ জন আত্মঘাতী হয়েছে। ২০১৮ থেকে এই হিসাব ধরলে আত্মঘাতীর সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আত্মহত্যার পিছনে করোনা বা লকডাউনই একমাত্র কারণ নয়। তাঁরা জানিয়েছেন, আত্মহত্যার নিরিখে বিশ্বের এক নম্বর স্থানে আছে ভারত। এদেশের ১৫-৩০ বছর বয়সিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এর পিছনে রয়েছে মূলত তীব্র মানসিক অবসাদ। দীর্ঘ দুই বছর ঘরবন্দি জীবনে মানসিক চাপ আর অবসাদ করোনা ভাইরাসের থেকেও বড় বোঝা হয়ে উঠেছিল। কারণ স্কুল-কলেজ, অফিস বন্ধ। বাড়িতে বসেই চলছিল অফিসের কাজ। যা প্রতিটি কর্মীর কাজের চাপ এবং চিন্তা দুই বাড়িয়েছে। খোলামেলা পরিবেশের বদলে চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থেকে কাজ করায় অনেকের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। অনেকেই অনিদ্রা, অবসাদ উত্তেজনায় শিকার হয়েছেন। কাউকে কাউকে আবার গ্রাস করেছে একাকীত্ব। বিরক্ত হয়ে উঠেছেন মানুষ। তাই আত্মহত্যাকেই মুক্তির পথ বলে মনে করছেন অনেকে।
পরিসংখ্যান বলছে, লকডাউনের কারণে চাকরি খুইয়ে আত্মঘাতী হওয়ার সংখ্যাও কম কিছু নয়। বিশেষ করে দিনমজুর ও পরিযায়ী শ্রমিকরা কাজ হারিয়ে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। করোনার কারণে এই সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। করোনা রুখতে হঠাৎ করে লকডাউন হওয়ায় পরিযায়ী শ্রমিকদের বেশিরভাগই বাড়ি ফিরতে পারেননি। এদিকে যে সমস্ত এলাকায় থাকতেন সেখানেও তাঁদের কোনও কাজ ছিল না। ফলে তাঁরা চরম আর্থিক কষ্টে পড়েন। সেকারণেই তাঁরা আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।