রায়পুর: আবারও রক্তাক্ত সংঘর্ষে কেঁপে উঠল ছত্তীসগড়ের মাওবাদী (Maoists) অধ্যুষিত এলাকা। শুক্রবার সকালে দান্তেওয়াড়া-নারায়ণপুর সীমান্তবর্তী ঘন অরণ্যে নিরাপত্তা বাহিনী ও মাওবাদীদের মধ্যে তীব্র বন্দুকযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এই অভিযানে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় জন মাওবাদী নিহত হয়েছে। যদিও এখনও জঙ্গলের ভেতরে মাঝে মাঝে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অভিযোগ, সকালে পূর্ব বস্তার ডিভিশনে সার্চ অপারেশনে নামেন দান্তেওয়াড়া ও নারায়ণপুর জেলার জেলা রিজার্ভ গার্ড (DRG)-এর যৌথ বাহিনী। সেই সময় মাওবাদীরা হঠাৎই তাদের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। জওয়ানরা পাল্টা গুলি চালালে তীব্র সংঘর্ষ বাঁধে। দান্তেওয়াড়ার পুলিশ সুপার গৌরব রাই জানিয়েছেন, “সংঘর্ষে কয়েকজন মাওবাদী নিহত হয়েছে। তবে ঘন জঙ্গলের কারণে এখনও মৃতদেহ উদ্ধার অভিযান চলছে।”
এই সংঘর্ষকে ছত্তীসগড়ে চলমান মাওবাদী দমন অভিযানের বড় সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এর আগে আগস্ট মাসে মহারাষ্ট্রের গড়চিরোলি জেলায় কোপারশি অরণ্যে সি-৬০ কমান্ডো বাহিনী চার মাওবাদীকে হত্যা করেছিল। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি এবং মাওবাদী প্রচারপত্র উদ্ধার হয়।
তারও আগে মে মাসে বস্তার জেলায় নিরাপত্তা বাহিনী ইতিহাসের অন্যতম রক্তাক্ত অভিযান চালিয়ে একাধিক মাওবাদীকে খতম করে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন শীর্ষ নেতা বাসাভা রাজু, যাঁর মাথার দাম ছিল ১.৫ কোটি টাকা। ওই অভিযানের মাত্র এক সপ্তাহ আগে কারেগুট্টা অঞ্চলে ২৪ দিন ধরে টানা চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে ৩১ মাওবাদীকে হত্যা করে বাহিনী।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত বছর রায়পুর ও জগদলপুর সফরে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন—“মাওবাদীরা আত্মসমর্পণ করুক, নইলে নিশ্চিহ্ন করা হবে।” তিনি ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে সম্পূর্ণ নকশালবাদের অবসান ঘটানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেন। এরপর থেকেই ছত্তীসগড়-ওড়িশা-মহারাষ্ট্র-তেলেঙ্গানা সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা অভিযান আরও জোরদার হয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক বছরে একাধিক শীর্ষ মাওবাদী নেতা নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন—বাসাভা রাজু (পলিটব্যুরো সদস্য, ১.৫ কোটি টাকা পুরস্কার, অন্ধ্রপ্রদেশ), জয়ারাম ওরফে চালাপতি (সেন্ট্রাল কমিটি, ১ কোটি টাকা পুরস্কার), রেণুকা (সেন্ট্রাল রিজিওনাল ব্যুরো, ৪৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার), সুধাকর ওরফে নারসিংহালাম (সেন্ট্রাল কমিটি, ১ কোটি টাকা পুরস্কার), গারলালা রবি (৪০ লক্ষ টাকা পুরস্কার), নীতি ওরফে নির্মলা (সিনিয়র দণ্ডকারণ্য ক্যাডার, ২৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার) প্রমুখ।
অভিযান চলা এলাকা আবুজমাড় প্রায় ৪,০০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত দুর্গম পাহাড়, গুহা আর ঘন জঙ্গলে ভরপুর। বহু বছর ধরে এই অঞ্চলকেই মাওবাদীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল বলা হয়। একে “রেড করিডরের সদর দফতর” হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এখান থেকেই সিপিআই (মাওবাদী)-র নেতৃত্ব সমগ্র মধ্যভারতের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করে। দীর্ঘদিন সরকারি আধিকারিকরাও এই এলাকায় প্রবেশ করতে সাহস করতেন না। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনী ধীরে ধীরে ভেতরে ঢুকতে শুরু করায় সংঘর্ষের মাত্রা বেড়ে চলেছে।
নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত আবুজমাড় পুরোপুরি মাওবাদী মুক্ত হচ্ছে, ততক্ষণ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এই অভিযানে নিহত মাওবাদীদের পরিচয় এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শীর্ষ ক্যাডারও থাকতে পারে।