করোনায় বন্ধ প্রেক্ষাগৃহ: অতিমারীর সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে গেল বাংলা চলচ্চিত্র

বায়োস্কোপ ডেস্ক: করোনা (Corona) সংক্রমন এবং লকডাউন। বাজার, অর্থনীতি, শিল্প শব্দগুলির সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করেছে। ভারতে বিনোদন মাধ্যম অতিমারীতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম।…

Cinema Hall

বায়োস্কোপ ডেস্ক: করোনা (Corona) সংক্রমন এবং লকডাউন। বাজার, অর্থনীতি, শিল্প শব্দগুলির সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করেছে। ভারতে বিনোদন মাধ্যম অতিমারীতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত বিষয়গুলির মধ্যে অন্যতম। থিয়েটার (Cinema Hall) বন্ধ থাকার ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এই ইন্ডাস্ট্রির। একই সঙ্গে অনেকের রোজগারের উপায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শুধু বলিউড নয়, একইভাবে ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে আঞ্চলিক ভাষার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিগুলিও।

প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছে টলিউডও। জনপ্রিয় প্রযোজক ও পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ” পরিচালকদের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা হলো চিন্তার প্রক্রিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা। স্বাভাবিক সময়ে, একটা ছন্দ থাকে। আপনি একটি চলচ্চিত্র করছেন, সেটা হলে মুক্তি পাচ্ছে, তারপরে আপনি পরবর্তী চলচ্চিত্রর ভাবনায় ঢুকছেন। কিন্তু এই সময়ে, একবার একটা চলচ্চিত্র আটকে গেলে, পুরো চিন্তার প্রক্রিয়াটা স্তব্ধ হয়ে যায়।” শুধু শিল্পীদের শৈল্পিক চিন্তাই নয়, এর ফলে আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে ভয়াবহ। ‘মহানন্দা’-এর পরিচালক অরিন্দম শীল বলেছেন, “গত দেড় বছর ধরে জিনিসগুলো আটকে পড়েছে। শুধু ক্ষতির পরিমাণই হয়েছে হাজার কোটি টাকা। শুধু অভিনেতারাই নন। প্রযুক্তিবিদ, বিক্রেতা, সরঞ্জাম সরবরাহকারী সবাই এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে”।

তাঁর কথায় যদি একটি সিনেমার গড় খরচ হয় দু’কোটি টাকা, তাহলে ক্ষতি হয় একশো কোটি টাকা। রাজ্যের ৭৫০ টি সিনেমা হলের মধ্যে মাত্র ২৫০ টি কার্যত ব্যবহারের অবস্থায় রয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে ১০০টি হল খোলা থাকলেও তা রীতিমতো আশীর্বাদ। কিন্তু ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে বাংলা চলচ্চিত্র গড় খরচটাই তুলতে পারে না। এটাও মেনে নিতে হবে যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাংলা বিষয়বস্তুর তেমন চাহিদা নেই। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে “হইচই” নামের জনপ্রিয় প্লাটফর্ম থাকলেও সেটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ। টলিউডের শিল্পী ফোরামের কার্যনির্বাহী সচিব শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “যারা দৈনিক ভিত্তিতে বা মাসিক ভিত্তিতে কাজ করেছেন তারাই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন হলগুলিতে ৫০ শতাংশ থাকার ব্যবস্থা থাকলেও তারমধ্যেও অর্ধেক দর্শক নেই”।

জনপ্রিয় ‘প্রিয়া’ সিনেমা হলের মালিক অরিজিৎ দত্তের কথায়, “কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কোনো হল খুলছে না, তবুও কর্মীদের বেতন দিতে হয়। পিভিআর লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গৌতম দত্তও জানান যে দেশে লকডাউনের কারণে সিনেমা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ব্যবসা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। আট মাসে (মার্চ থেকে নভেম্বর, ২০২০) চলচ্চিত্র নামক শিল্প এখন দেউলিয়া হওয়ার মুখোমুখি। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মেকআপ শিল্পী সোমনাথ কুন্ডু একটি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, “আগে আমি বছরে চার থেকে পাঁচটা ছবিতে কাজ করতাম। গত বছর আমি মাত্র দুটো ছবি করেছি। এ বছরও একই পরিস্থিতি। গত বছর আমার প্রায় পাঁচ থেকে ছ’লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।” যদিও হাল না ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে টলিউড।