আফগানি কূটনীতির তাস খেলায় দিল্লির টেক্কা তালিবান স্তানেকজাই

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: আফগানিস্তানে তালিবান সরকার গড়ার প্রক্রিয়া চলছে। যে জঙ্গিরা ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত সরকার চালিয়েছিল তারা দু’দশক বাদ ফের কাবুলের ‘তখত- এ- তউস’ (সিংহাসন) দখল…

sher mohammad abbas stanikzai

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: আফগানিস্তানে তালিবান সরকার গড়ার প্রক্রিয়া চলছে। যে জঙ্গিরা ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত সরকার চালিয়েছিল তারা দু’দশক বাদ ফের কাবুলের ‘তখত- এ- তউস’ (সিংহাসন) দখল করেছে। দু-দফার এই তালিবান শাসনের মাঝে নয়াদিল্লির আফগান নীতি কী হবে? এই প্রশ্ন তাড়া করছে কেন্দ্রের এনডিএ সরকারকে।

তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, প্রথম দফায় যখন আফগানিস্তানের সরকার তালিবান কব্জায় ছিল তখনও ভারতে এনডিএ সরকার। বিখ্যাত ‘কান্দাহার বিমান অপহরণ’ বা ‘IC 814 Hijack’ ঘটে ১৯৯৯ সালে। পাকিস্তানের জঙ্গি নেতা মাসুদ আজাহারের মুক্তির বিনিময়ে বিমানে বন্দি ভারতীয়দের ছাড়িয়ে আনেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী।

আফগানিস্তানের সেই প্রথম তালিবান সরকারের উপ প্রধানমন্ত্রী শের মহম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই। একদা দেরাদুন মিলিটারি একাডেমির প্রশিক্ষিত আফগান সেনা অফিসার স্তানেকজাই (শেরু) আই সি ৮১৪ বিমান অপহরণের ঘটনায় অপহরণকারী পাকিস্তানি জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এমনকি, তালিবান সরকার অপহরণকারীদের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বিমানটির ক্ষতি করা চলবে না। সে কথা মেনে নেয় পাকিস্তানি জঙ্গি অপহরণকারীরা।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

সেই স্তানেকজাই আবারও তালিবান শাসনে চলে যাও আফগানিস্তানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে আসছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবর, তালিবান নেতা শের মহম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রী হতে পারে।

এখানেই লুকিয়ে আছে ভারতের আফগান নীতির তুরুপের টেক্কা। কারণ স্তানেকজাই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়। গত ১৫ আগস্ট তালিবান যখন ফের কাবুল দখল করে, স্তানেকজাই নয়াদিল্লিকে সম্পর্কের বার্তা দেয়। ৩১ আগস্ট আমেরিকান সেনার সর্বশেষ বিমান উড়ে যাওয়ার পরেই স্তানেকজাইয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা করেছেন কাতারে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তল।

কাতারে রাজধানী দোহা শহরেই আছে তালিবান জঙ্গি সংগঠনের আন্তর্জাতিক কর্পোরেট কার্যালয়। সেখানেই থাকে শেরু অর্থাৎ শের মহম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই। আল জাজিরা জানিয়েছে, দোহার ভারতীয় দূতাবাসে আমন্ত্রণ জানানো হয় স্তানেকজাইকে। বিদেশমন্ত্রক সূত্রে খবর, স্তানেকজাইয়ের সঙ্গে আলোচনার মূল বিষয় ছিল, ভারতীয় নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফেরানোর বিষয়। আলোচনা হয়েছে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে। এছাড়াও বেশ কিছু আফগান নাগরিক যারা ইতিমধ্যে ভারতে যাওয়ার আবেদন করেছে, সেই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

কেন স্তানেকজাই ‘টেক্কা’?
শের মহম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই এমন এক তালিবান জঙ্গি নেতা যে প্রথম জীবন ছিল আফগান সেনা অফিসার। আশির দশকে আফগানিস্তানের সরকার তাকে দেরাদুনে ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠায়। দেশে ফিরে সোভিয়েত বিরোধী মুজাহিদিন গোষ্ঠীর হয়ে যুদ্ধে নামে। পরে স্তানেকজাই তালিবান সংগঠনের শীর্ষে ওঠে। আফগানিস্তানের প্রথম তালিবান সরকারের আমলে উপ প্রধানমন্ত্রীর পদ ছিল স্তানেকজাইয়ের।

২০০১ সালে মার্কিন সেনা অভিযানে তালিবান সরকারের পতন হয়। তখন স্তানেকজাই আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে কাতারে আশ্রয় নেয়। স্তানেকজাই ভারত সম্পর্কে নরম মনোভাব রাখে। কারণ তার দেরাদুন স্মৃতি ও ভারতীয় ‘বন্ধু’। দুটি কারণে স্তানেকজাই ওরফে শেরুকে সামনে রেখেই ভারত পরবর্তী আফগান নীতি নিচ্ছে। জানা যাচ্ছে, অতি দ্রুত স্তানেকজাইকে নয়াদিল্লি কূটনৈতিক বার্তা দেবে।

আফগান তালিবান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক (সম্ভবত বিদেশমন্ত্রক) পেতে চলা স্তানেকজাই কাতার থেকে কবুলে এসে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই নয়াদিল্লি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। ইতিমধ্যেই স্তানেকজাইয়ের তৈরি বয়ান আন্তর্জাতিকস্তরে ছড়িয়েছে তালিবান। কাবুল থেকে মার্কিন সেনার শেষ বিমান উড়ে যেতেই তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বিমানবন্দরের রানওয়েতেই বার্তা দেয় আফগানিস্তানকে মুক্ত ও সার্বভৌম দেশ। সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই।