Pataliputra: গান পয়েন্টে মুচকি হাসল জগদীশ, পর্দার আড়ালে কাঁপছিল পুলিশ সোর্স

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান দেবী রায়ের কর্মজীবনে সব থেকে বড় সাফল্য সশস্ত্র অতিবামপন্থী আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়া। রাজনৈতিক তত্ত্বকে মারা সম্ভব না এ বিষয়ে…

প্রসেনজিৎ চৌধুরী:
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান দেবী রায়ের কর্মজীবনে সব থেকে বড় সাফল্য সশস্ত্র অতিবামপন্থী আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়া। রাজনৈতিক তত্ত্বকে মারা সম্ভব না এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন। সেরকমই হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে নকশালবাড়ি সশস্ত্র কৃষক আন্দোলন ‘খতমপন্থী’ ও ‘নরমপন্থী’-তে ভাগ হয়ে যায়। এরপর দ্রুত রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হতে থাকে। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসে পশ্চিমবঙ্গে। বহু বিভক্ত হয়ে তখন ছন্নছাড়া অবস্থা নকশালপন্থীদের। বঙ্গ মাটিতে আর সেই শক্তি দানা বাধতে পারেনি। তবে প্রতিবেশী বিহার ছিল নতুন করে নকশালপন্থীদের রাজনৈতিক পরীক্ষাগার। এর কারণ সেই ‘বদলা’ চরিত্র। বিহার এই শব্দটি যত্ন করে ধরে রেখেছে। ফলে ‘৬০-‘৭০ দশকের প্রত্যাঘাতমূলক রাজনীতির পরবর্তী কেন্দ্র হয়ে যায় বিহার। (Pataliputra)

‘ভোটপন্থী রাজনীতি’ আসলে ‘সামন্তবাদী চিন্তার ফল’। এই তত্ত্ব নিয়ে সিপিআইএমের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব থেকে অতিবামপন্থা জমাট হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। বর্ধমানে (এখন পূর্ব বর্ধমান) বিশেষ সম্মেলন করেও সেই জট কাটেনি। উল্টে ফাটল আরো চওড়া হয়। তারই ফল বিতর্কিত সশস্ত্র কৃষক প্রতিরোধ আন্দোলন। অগ্নিগর্ভ রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে পৌঁছে গেছিল দেশ।সিপিআইএম থেকে বিচ্যুত সশস্ত্র পথের সমর্থক অতিবাম নেতারা কৃষক আন্দোলন শুরু করলেন। দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়ি থেকে নেপাল ও বিহারের যাতায়াত করা সোজা। অবধারিতভাবে সেই ভৌগোলিক সুবিধা নিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু দেবী রায়ের জাল এমনই যে পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া বিহারের অংশে তেমন বড় আকার নিতে পারেনি নকশালপন্থী কর্মসূচি।তবে এই সশস্ত্র ধারাটি কিন্তু জমাট হয়েছিল আরো দূরে উত্তরপ্রদেশ লাগোয়া বিহারের জেলা ভোজপুরে। এখানে শুরু হয়েছিল দেখে নেয়ার পালা।

“हम देखेंगे
लाज़िम है कि हम भी देखेंगे”- ফয়েজ আহমেদ ফয়েজ

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

 

ভোজপুর
বিহারে সামন্তবাদ অতি স্পষ্ট। সেটা আরও বেশি প্রকট ভোজপুরে। এখানে উঁচু শ্রেণীর ব্রাহ্মণ, ভূমিহার, ঠাকুর সম্প্রদায়ে মিশে আছে রাজপুত জাত্যাভিমান। তাদের চোখে কাহার, কৈরি, দুসাদ, রাজবংশীরা ‘অছুত’। এই সামন্তবাদী মনোভাবের কারণে সামাজিক অত্যাচারের শিকার নিচু শ্রেণীভুক্তরা। তাদেরকে একত্রিত করে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলার জন্য নকশালপন্থীদের ‘খতম তত্ত্ব’ ছিল কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার কৌশল। এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব শুরু করেন জগদীশ মাহাত। ষাটের দশকে বিহারের রাজনীতিতে সামন্তবাদের চোখে চোখ রাখা এক কমিউনিস্ট নেতা। দলিতভুক্ত কৈরি সম্প্রদায়ের জগদীশ মাহাত ছিলেন বাবাসাহেব আম্বেদকরের নীতিতে সাম্যবাদের সমর্থক। কিন্তু পরিস্থিতির তাঁকে ‘বাগী’ বা সশস্ত্র বিদ্রোহী বানিয়েছিল। মূল স্রোতের কমিউনিস্ট পার্টি ছেড়ে আগুনখেকো নেতা হয়ে যান তিনি। অতিবাম নীতি বেছে নেন। শুরু হয় রক্তাক্ত পর্ব। এবার ভয় পেল ভূমিহার উঁচু শ্রেণী।জগদীশ মাহাতর বিদ্রোহ পুরো ভোজপুরকে বিহারের রাজনৈতিক ঘটনাক্রমে উল্লেখযোগ্য করে দেয়। দলিত বাহিনীর হামলা রুখতে ভূমিহার শ্রেণীও নেমে পড়ে। প্রায় রোজই দু’পক্ষের হামলায় রক্তাক্ত হচ্ছিল মধ্য বিহারের এলাকা। পুলিশও হাত গুটিয়ে নেই। দলীয় অন্তর্ঘাত ক্রমে কোণঠাসা করছিল জগদীশ মাহাতকে। যেদিন ধরা পড়েন, প্রথমে পুলিশ ভাবতেই পারেনি।

-আপ কা নাম?
ঘামে ভেজা মুখে মুচকি হাসি খেলে গেল। বন্দির মুখটা দেখে শিউরে গেলেন ডিউটি অফিসার।
-নাম কাহে নেহি বোলতে?
ফের মুচকি হাসি। ডিউটি অফিসারের পিছনে পর্দার ফাঁক থেকে সোর্স তাকিয়ে আছে। সে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে দেখে নিল। কেউ দেখছে না তো! ভয়ার্ত চোখে আরও একবার পিছনে তাকাল। কোনো ছায়ামানুষ তাকে দেখছে না। নিশ্চিত হয়ে ইশারা করল সোর্স। ডিউটি অফিসার বুঝলেন আর একটা কাজ বাকি আছে।

জগদীশ মাহাতর মৃত্যুর পরোয়ানা তৈরিই ছিল। বিহারের দলিত শ্রেণির বিদ্রোহী নেতাকে গান পয়েন্টে আনা হয়। ট্রিগারে আঙুলের চাপে কয়েকটা বুলেট ঢুকে গেল তার দেহে।

বিহার পুলিশের রোমহর্ষক ঘটনাবলীর পুরনো পাতা উল্টোতে গিয়ে পেয়েছি, গুলি চলার পর পড়ে থাকা দেহে বেশ কয়েকটা লাথি মেরে নিশ্চিত হয়েছিলেন অফিসাররা। আর গুলি চলার আগে জগদীশ মাহাত বলেছিলেন, দলিত মেয়েদের দিকে হাত বাড়াতে হলে এরা এবার ভাববে-‘ইনলোগ সোচেঙ্গে’।

‘এরা’ বা ‘ইনলোগ’ কারা? স্বাভাবিকভাবেই জগদীশ মাহাতর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ উঁচু জাতের সবাই। যারা নিচু শ্রেণীর ছায়া স্পর্শ করলে গঙ্গা জল মাথায় ছিটিয়ে শুদ্ধ হয়।

প্রায় চার দশক পার করে একদিন এই ভোজপুরের আরা শহরে আরো একজন শিক্ষকের লাশ পড়ে থাকবে। গুলিতে ঝাঁঝরা হওয়া এই শীর্ণকায় লোকটার নামে বিহার তো বটেই পুরো ভারত কেঁপেছিল বারে বারে। মৃত ব্যক্তি দলিতদের যম। সবাই বলে ‘মুখিয়াজি’।

বদলা! (চলবে)

<

p style=”text-align: justify;”>গত পর্ব: Pataliputra: ‘তু অছুত হ্যায়, অব দেখ কেয়া হোগা’, শুরু হয় একটা রক্তাক্ত পর্ব