Pataliputra: হা হা হা…হাসছে ডন শাহাবুদ্দিন, ভয়ে দৌড়চ্ছে পুলিশ, জেএনইউর চন্দু কিন্তু লড়ল

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: -আবে তু সরকারি নৌকর, স্যালুট মার ! ভিড়ে ঘিরে আছে। ওয়াকিটাকি থেকে বারবার কন্ট্রোল রুমে ফোন করছেন অফিসার। এগিয়ে এলো শাহাবুদ্দিন। মুচকি হেসে…

প্রসেনজিৎ চৌধুরী:

-আবে তু সরকারি নৌকর, স্যালুট মার ! ভিড়ে ঘিরে আছে। ওয়াকিটাকি থেকে বারবার কন্ট্রোল রুমে ফোন করছেন অফিসার। এগিয়ে এলো শাহাবুদ্দিন। মুচকি হেসে বলল-

-স্যালুট কাহে নেহি মারতা?

চোখের সামনে অনেকগুলো বন্দুক তাক করা দেখলেন পুলিশ অফিসার। একবার চারদিক তকালেন। হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা গেল। এরপর সিওয়ানের রাস্তা দিয়ে পুলিশ অফিসারকে প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে পালাতে দেখলেন সবাই। হা হা হা…শাহাবুদ্দিন হাসছে। (Pataliputra)

১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিন বুথ দখলের একটার পর একটা ঘটনা আসছিল সিওয়ান থেকে। নিষ্ক্রিয় পুলিশ। রাস্তায় শাহাবুদ্দিন গ্যাং নেমেছে। বিভিন্ন রাস্তার বাঁকে তৈরি প্রতিপক্ষ কিছু সিপিআই (এম-এল) সমর্থক। তাদের হাতে বোমা। সিওয়ানের ভোট শাহাবুদ্দিনের ইজ্জত। সেটা রাখতেই হবে। এর মাঝে বাগড়া দিতে গেলেন পুলিশ অফিসার। তাকেই  লক্ষ্য করে গুলি করা হলো৷ ব্যাস, ভোট শেষ।

https://video.incrementxserv.com/vast?vzId=IXV533296VEH1EC0&cb=100&pageurl=https://kolkata24x7.in&width=300&height=400

নব্বইয়ের দশকে বিহারের জঙ্গলরাজ চলছে, প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় রেখে সিওয়ান থেকে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ত্রাস রাজত্বের ‘সুলতান’ শাহাবুদ্দিন। ‘ফিরৌতি’ মানে মুক্তিপণের ব্যবসা চলছিল বিহারের সর্বত্র। বড় ব্যবসাদার, চিকিৎসকদের তুলে এনে ঠান্ডা গলায় শুধু মৃত্যু পরোয়ানা শুনিয়ে দিত শাহাবুদ্দিন গ্যাং।

লালুপ্রসাদ যাদবের ঘনিষ্ঠ শাহাবুদ্দিন তখন সিওয়ানের ‘ডন’। তার হাঁটা চলা কথা বলা সবই মুম্বইয়ের ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রির চিত্রনাট্য লিখিয়েদের কাছে লোভনীয়। এমনই শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধটা এলো একদল ছাত্রের কাছ থেকে।

সিওয়ানে রাস্তায় রাস্তায় অতিবামপন্থী ও বামপন্থী কর্মীদের সঙ্গে ডন বাহিনীর সংঘর্ষ চলে তখন। গুলি চলে, লাশ পড়ে। এ পক্ষ ও পক্ষ যে যার মতো পজিশন নেয়। এই প্রতিরোধ বাহিনির এক নেতা জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি থাকা চন্দ্রশেখর প্রসাদ- সিওয়ানের চন্দু।

সিপিআই(এম-এল) ছাত্র নেতা চন্দুর নেতৃত্বে আরো এক মারকুটে শ্যামনারায়ণ যাদব শুরু করেছে  প্রতিরোধ। ‘আঁখ কে বদলে আঁখ’ নীতি। গুলি বোমার শব্দে সিওয়ান কাঁপে। রাস্তায় শাহাবুদ্দিনকে চ্যালেঞ্জ করা চন্দু ও শ্যামের দল ‘মালে’ অর্থাৎ সিপিআই(এম-এল) ও সিপিআই-সিপিএমের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াত শাহাবু্দ্দিন গ্যাংয়ের নাম৷ সিওয়ান প্রায়ই উত্তপ্ত হচ্ছিল৷

ব্যবসায়ীদের প্রকাশ্যে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, নিজের সাংসদ পরিচয় দিয়ে মুক্তিপণ চাওয়া শাহাবুদ্দিনের কাছে এক মজার খেলা। কোনো সাক্ষী মেলে না। টাকা দিয়ে নিজেকে বাঁচাতেই ব্যাস্ত সবাই।  আবার এমন ঘটনাও হতো। রাস্তায় গ্যাং ঘিরেছে ব্যবসাদারকে। গাড়ির দরজা খুলে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঠিক আগেই বোমা পড়ল। সিওয়ানবাসী বুঝলেন ‘মালে’ নেতা চন্দু নেমেছে অ্যাকশনে। শিকার ছেড়ে শাহাবুদ্দিনের গ্যাং সরে গেল। তার পথের কাঁটা তখন দুই ছাত্র নেতা। সিওয়ানের তাদের দলীয় অফিস সরগরম। যে যখন পারছে বিপদে পড়ে ছুটে আসছে।রাজনৈতিক লড়াইয়ে শাহাবুদ্দিনের জমি নড়বড়ে হচ্ছিল।

অত সহজ না শাহাবুদ্দিনকে দমানো, সেটাই দেখলেন সিওয়ানবাসী। ১৯৯৭ সালের ৩১ মার্চ বিহার ফের সংবাদ শিরোনামে। সেদিন সিওয়ানের রাস্তায় গুলির ঝড় বয়ে গেছিল। আচমকা ব্রাশ ফায়ারে চন্দু আর শ্যামনারায়ণকে খতম করে শাহাবুদ্দিন গ্যাং। দুই ছাত্র নেতার  রক্তাক্ত দেহ দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকে। স্তব্ধ হয়ে গেল সিওয়ান।

খবরটা পাটনা হয়ে দিল্লি পৌঁছতে বেশি সময় লাগেনি। বন্ধ হয়ে গেল জেএনইউ। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশজুড়ে ছাত্র ধর্মঘটের বিরাট প্রভাব দেশের বাইরে বিদেশেও প্রবল আলোচিত হতে থাকে। আর সংসদে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েও মুচকি হাসে সিওয়ানের ডন-‘এমপি সাহাব’। এরপর শুধু হামলা আর হামলা। একের পর এক বাম-অতিবাম নেতা কর্মীদের খুনের ঘটনায় সিওয়ান একেবারে আতঙ্ক নগরী। শাহাবুদ্দিনকে প্রত্যাঘাতের কোনো সুযোগ তখন নেই।

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি বিহার এক ভয়ের স্থান৷ সিওয়ানের প্রতাপগড়ে শাহাবুদ্দিনের বাড়ি। সেখানে ঢুকতে বেশ কয়েকবার বন্দুকের নলের সামনে আসতে হবে। এমন মাফিয়া লিডারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির মামলায় দ্রুত ফেঁসে যাচ্ছিলেন লালুপ্রসাদ যাদব।  এর পরেও বিভিন্ন খুনের মামলায় শাহাবুদ্দিনকে গ্রেফতার করতে গিয়ে পুলিশ বারবার রাজনৈতিক বাধা পাচ্ছিল। এমপি সাহাব সাহাবুদ্দিনের গরম মেজাজের সামলে পুলিশের কী হয় তা সিওয়ানবাসী বিলক্ষণ জানেন।

একদিন সত্যি করেই চমকে গেল ডন নেতা শাহাবুদ্দিন। তার বাড়ি ঘিরে নিয়েছে বিহার পুলিশ ! কপালে তখন ঘাম জমছে। ঘাবড়ে যাওয়ার লোক নয় শাহাবুদ্দিন। পিস্তলটা হাতে নিয়ে তৈরি হলো। ২০০১ সালের ১৬ মার্চ শাহাবুদ্দিনের বাড়ি ঘিরে ঢুকতে গেলেই পুলিশ বুঝল এ বড্ড কঠিন ঠাঁই। গুলি করা হচ্ছে ভিতর থেকে। এবার গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশ।  তিন ঘণ্টার রিয়েল অ্যাকশন!

এক সময় ওপাশ থেকে গুলি আসা বন্ধ হতেই বেশ কয়েকটা মৃতদেহ টপকে পুলিশ যখন ঢুকল ততক্ষণে শাহাবুদ্দিন মিলিয়ে গেছে। পরে গুরু লালুপ্রসাদের নির্দেশ নিয়ে পরে ধরা দেয় সে। ১১ বছর জেল খাটে। জেল থেকেই ভোটের দিন অপারেশন চালিয়ে জিতে যায় শাহাবুদ্দিন।

সিওয়ান অ্যায়সা থা।  (চলবে)

গত পর্ব: Pataliputra: লক্ষ্মণপুর বাথের চিতায় পুড়ছিল দলিতরা, ব্রহ্মেশ্বরকে জবাব দিতে বিনোদ মিশ্রর চোখ জ্বলছিল