ভালো Vs মন্দ সাংবাদিকতা: বিশ্বের ছ’টি বিখ্যাত কেলেঙ্কারি ফাঁস

বিশেষ প্রতিবেদন: এখন বহু প্রবীণ সাংবাদিকের মুখেই শোনা যায় একটা হতাশার কথা৷ তাঁরা প্রায়শই বলে থাকেন, এখন সাংবাদিকতা (journalism) হয়ে গিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ নির্ভর৷ এখনকার সাংবাদিকতা…

Good vs bad journalism: Six famous scandals in the world

বিশেষ প্রতিবেদন: এখন বহু প্রবীণ সাংবাদিকের মুখেই শোনা যায় একটা হতাশার কথা৷ তাঁরা প্রায়শই বলে থাকেন, এখন সাংবাদিকতা (journalism) হয়ে গিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ নির্ভর৷ এখনকার সাংবাদিকতা মানেই সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর৷ অধিকাংশ সাংবাদিকই আর খুঁড়ে খবর যোগার করে না৷ বরং তারা ফরোয়ার্ড মেসেজে আসা খবরেই ব্যস্ত৷

সাম্প্রতিকালে পেগাসেস ইস্যুতে সংবাদমাধ্যমের একটা বড় ভুমিকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ বিরোধী দল তো বটেই, সাংবাদিকদের ফোন হ্যাক করার পরেই সংবাদমাধ্যমের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷ স্বাভাবিক কারণেই এই ইস্যুতে কার্যত কোনঠাসা শাসকদল প্রশ্ন তুলেছে, পিগাসেস কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আনা সংবাদমাধ্যমটির ভুমিকা নিয়ে৷ প্রশ্ন উঠেছে, তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে৷ অন্যদিকে, গত এক-দেড় দশক ধরে ‘গদি মিডিয়া’ বনাম ‘অগদি মিডিয়ার ঠাণ্ডা লড়াই৷ এখন কর্পোরেট হাতে চলে যাওয়া ভারতের সংবাদমাধ্যমের ভুমিকায় সংবিধানের চতুর্থ স্তম্ভের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে৷ তবে কি সংবাদমাধ্যমে ঢুকে গিয়ে ভালো-মন্দের সাংবাদিকতা? তারই নিরিখে তুলে ধরা হল ভালো-মন্দের মধ্যেই বিশ্বখ্যাত ছ’টি কেলেঙ্কারি ফাঁসে সংবাদমাধ্যমের ভুমিকা৷

media news paper online media girl

ওয়াটারগেট কেলেংকারি: সাংবাদিকতার ইতিহাসে এটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা৷ ১৯৭২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেট কমপ্লেক্সে ডেমোক্রেটদের সদরদপ্তরে আড়ি পাতার অভিযোগ উঠেছিল৷ পরবর্তীতে সেই ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করেছিল প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রশাসন৷ ওয়াশিংটন পোস্টের দুই সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড ও কার্ল ব্যার্নস্টাইনের রিপোর্টিংয়ের কারণে কংগ্রেস ঘটনাটি তদন্ত করেছিল৷ পরে নিক্সন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন৷

ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধে সংবাদমাধ্যম: সাংবাদিক ওয়াল্টার ক্রোনকাইটকে অনেকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক’ মনে করতেন৷ ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে করা প্রতিবেদনে তিনি বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ জিততে পারবে না৷ তাঁর বক্তব্য মার্কিনিদের বিশ্বাসে পরিবর্তন এনেছিল৷ এমনকি প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসনও নাকি বলেছিলেন, ‘‘যখন আমি ক্রোনকাইটের বিশ্বাস হারাই, তখন আমি মধ্যবিত্ত মার্কিনিদের বিশ্বাস হারাই৷’’ ক্রোনকাইটের রিপোর্টিং যুদ্ধ থামাতে বড়সড় ভুমিকা নিয়েছিল৷

শিশু হত্যার ভুয়ো খবর: ১৯৯০ সালে লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের এক প্রতিবেদনে কুয়েতে ইরাকি সেনাদের নির্যাতনের কথা তুলে ধরা হয়েছিল৷ সেনারা নাকি ইনকিউবেটরে থাকা শিশুদের মেরে ফেলছে৷ পরে ওয়াশিংটন পোস্টও এমন তথ্য দিয়েছিল৷ এরপর মার্কিন কংগ্রেশনাল ককাসে একই বর্ণনা দেন ১৫ বছরের কুয়েতি মেয়ে নায়িরাহ৷ এসব তথ্যের ভিত্তিতে ইরাকে যুদ্ধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ পরে জানা যায়, তথ্যগুলো ভুয়ো ছিল৷ আর নায়িরাহ আসলে কুয়েতি রাষ্ট্রদূতের মেয়ে ছিলেন!

ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র: ইরাক যুদ্ধ শুরু করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সে দেশে গণবিধ্বংসী অস্ত্র আছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন৷ প্রথম সারির কয়েকটি পত্রিকাও এমন অভিযোগ তুলেছিল৷ নিউইয়র্ক টাইমসে প্রতিবেদন করেছিলেন জুডিথ মিলার৷ অবিশ্বস্ত সূত্রের উপর ভরসা করে তিনি লিখেছিলেন, ‘‘পুরো ইরাক গণবিধ্বংসী অস্ত্রের এক বড় আধার৷’’ যদিও পরে এমন অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি৷ নিউইয়র্ক টাইমস তাদের রিপোর্টগুলো মানসম্মত ছিল না বলে স্বীকার করেছিল৷

পানামা পেপার্স: পানামার ‘মোসাক ফনসেকা’ নামে আইন বিষয়ক এক প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন কর্মচারীর তথ্যের ভিত্তিতে কর ফাঁকি দেওয়া দুই লক্ষের বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করেছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম’ আইসিআইজে৷ ২০১৬ সালে প্রকাশিত ওই তালিকায় বহু ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছিল৷ তবে আইসিআইজে বলেছে, তালিকায় যাদের নাম এসেছে তারা সকলেই যে অনিয়মে জড়িত, এমন নয়৷

এনএসএ-র নজরদারি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এনএসএ জননিরাপত্তার জন্য যাদের হুমকি মনে করত, তাদের উপর নজরদারি চালাত৷ কিন্তু ২০১৩ সালে জানা গেল ডাকঘরকর্মী, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সবার উপর নজরদারি করছে এনএসএ৷ এডওয়ার্ড স্নোডেনের সহায়তায় ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ান এই তথ্য প্রকাশ করে৷ পরে জানা যায়, জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল, ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওঁলদের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরাও নজরদারির আওতায় ছিলেন৷