South Africa: হীরে-ক্রিকেটের ঝলকে মোড়া দ: আফ্রিকা দারিদ্রের ফাঁদে অসহায়

মাটির নিচে হীরের খনি, তবুও খাবার পায়না দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ। আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দেশটি ক্রিকেটের মাঠে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যায় জর্জরিত।…

poverty in South Africa

মাটির নিচে হীরের খনি, তবুও খাবার পায়না দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ। আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দেশটি ক্রিকেটের মাঠে জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যায় জর্জরিত। দারিদ্র, বৈষম্য, অশিক্ষা এবং অব্যবস্থা দেশটিকে কুরে কুরে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এই দেশটিকে দীর্ঘ সময় বিদেশি শক্তির উপনিবেশ হিসেবে কাটাতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপন্নতার মূলে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি পাথর হীরে। ১৮৬৬ থেকে ১৮৬৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম হীরে আবিষ্কার হয়। এই আবিষ্কারের পর দেশটির কপাল খুলে যাবে মনে করেছে অনেকেই। কিন্তু তা হয়নি। বাস্তবে এই হিরেই এই দেশটির সর্বনাশ ডেকে এনেছে।

হীরে আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রার মাঝে ইউরোপিও বণিকদের বিশ্রামের জায়গা ছিল। হীরে খুঁজে পাওয়ার পর রাতারাতি দেশটি শিল্পক্ষেত্রে পরিণত হয়। একে দক্ষিণ আফ্রিকার খনিজ বিপ্লবও বলা হয়ে থাকে। হীরাতে সেখানকার সাধারণ মানুষ বা বাসিন্দাদের কোন অধিকার ছিল না। বিদেশিরাই হীরার খনি কাজে লাগিয়ে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলে। কারখানায় ব্যবহার করা হয় স্থানীয়দের শ্রম। তবে তারা উপযুক্ত পারিশ্রমিক পেত না।

একাধিক বিদেশি সংস্থা দক্ষিণ আফ্রিকার হীরে শিল্পের দখল নিয়ে ফেলেছিল। তার নামমাত্র পারিশ্রমিক দিয়ে স্থানীয়দের দিয়ে কাজ করিয়ে নিত। এভাবে এক সময় বিশ্বের ৯০ শতাংশ হীরের যোগানদার হয়ে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা। যতদিন গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার আদিবাসীদের উপর বিদেশী শক্তির অত্যাচার বেড়েছে।

হীরে পাচারের সন্দেহে শ্রমিকদের উলঙ্গ করে তল্লাশি চালানো শুরু করে বেধড়ক মারধর বাদ ছিল না কিছুই। এই সময় থেকেই সাদা এবং কালো চামড়ার বিভেদ-বৈষম্য গাঢ হয়ে ওঠে। সময়ের সাথে সাথে কৃষ্ণাঙ্গ এবং শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্য দক্ষিণ আফ্রিকার সমাজে ক্ষত আরও গভীর করেছে। সেখানে একটি আইন পাস হয় যাতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় কৃষ্ণাঙ্গেরা ওই দেশে কোন সম্পত্তির অধিকারী হতে পারবেনা।

কৃষ্ণাঙ্গ-শ্বেতাঙ্গের বিভেদ দক্ষিণ আফ্রিকাকে অন্দর থেকে দুর্বল করে দিয়েছে। দেশটির অর্থনীতির মাজা ভেঙে দিয়েছে। আর সব কিছুরই সূত্রপাত হয়েছিল ওই হীরেকে কেন্দ্র করে। বিপুল হীরের মালিক হওয়া সত্তেও দক্ষিণ আফ্রিকার সাধারণ মানুষ কখনও ওই ভাণ্ডারের সুবিধা ভোগ করতে পারেননি। তারা চিরকাল বিদেশি শাসনের নিচে ছিল।

১৯৯৪ সালে বিদেশি শক্তিকে সরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষমতায় আসে আফ্রিকান ন্যাশন্যাল কংগ্রেস এএনসি। এরপর সমাজে সাম্য ফিরবে বলে আশা করা হয়েছিল কিন্তু চিত্র বদলায়নি। বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় বেকারত্বের হার ৩৫ শতাংশেরও বেশি। দেশের প্রায় ৭ শতাংশ মানুষ কর্মহীন। অপরাধমূলক কাজ সেখানে এতটাই বেশি যে প্রশাসনের উপর ভর্সা করে থাকা যায়না। ঘরে ঘরে চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে কাঁটাতারের জাল বিছিয়ে রাখতে হয়।

বিদ্যুৎ-এর অভাব দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম বড় সমস্যা। প্রতি বাড়িতে দিনে অন্তত ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। গ্রামীণ এলাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ। দেশটিতে বিদ্যুৎ-এর চাহিদা আরও বেশি কিন্তু যোগান কম। এই সকল সমস্যার সমাধানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্নীতি। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে শিল্প, বাণিজ্য, শিক্ষা প্রভৃতি নানা খাতে প্রুযাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করে। কিন্তু তাতে লাভ হয়না। কারণ দুর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতিকরা দেশটিকে শোসন করে চলেছেন আজও। ঔপনিবেসিক শাসন, বিদেশি ঔধ্যত্ব, বর্ণ-বৈষম্যের বিষ ঢেলে কখনও আলোয় মাথায় তুলতে পারেনি এই দেশ। তাই অনেকে বলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান অবস্থার নেপথ্যে দায়ী তারই সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হীরে।