পশ্চিমবঙ্গের মানুষের আবেগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা মাছের নাম ইলিশ (Hilsa) । প্রতিবছর বর্ষার মরশুমে গৃহস্থের পাতেই নয়, হাটে-বাজারে, এমনকি রাজনৈতিক বিতর্কেও উঠে আসে এই রুপালি মাছের নাম। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। যদিও এ বছর মাছ ধরার সময় প্রকৃতি ততটা সহানুভূতিশীল ছিল না(Hilsa)
মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ জুন গভীর সমুদ্রে মাছ(Hilsa) ধরার মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু ৩১ জুলাই পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় দেড় মাসের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য বেশির ভাগ সময়ই মাছ ধরতে পারেননি মৎস্যজীবীরা। একের পর এক নিম্নচাপ, ঝোড়ো হাওয়া, সমুদ্র উত্তাল থাকায় ট্রলারগুলো বহু দিন উপকূলে আটকে ছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫–২০ দিনের মতোই গভীর সমুদ্রে জাল ফেলতে পেরেছেন মৎস্যজীবীরা।(Hilsa)
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এত অল্প সময়ের মধ্যেই প্রচুর পরিমাণ ইলিশ(Hilsa) ধরা পড়েছে। অনেকের আশা ছিল, এত মাছ বাজারে এলে তার দাম খানিকটা হলেও কমবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ঠিক উলটো। ইলিশের দাম এখনও সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে। কেন(Hilsa)
অর্থনীতির সাধারণ সূত্র বলছে, কোনও পণ্যের জোগান বাড়লে তার দাম কমে। তাহলে ইলিশের ক্ষেত্রে সেই সূত্র কার্যকর হচ্ছে না কেন?(Hilsa)
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে উঠে (Hilsa) আসছে এক অন্য বাস্তব। ট্রলার মালিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, সমুদ্র থেকে যেসব ইলিশ ধরা পড়ছে, তার বড় অংশই সরাসরি বাজারে না এসে যাচ্ছে কোল্ড স্টোরেজে। বৃহৎ ব্যবসায়ীরা, যাঁরা ইতিমধ্যেই আলু, পেঁয়াজের মতো কৃষিপণ্যে পুঁজির বিনিয়োগ করে থাকেন, তাঁরাই এখন ইলিশ ব্যবসাতেও বিপুল টাকা ঢালছেন। মাছ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা কিনে সংরক্ষণ করছেন কোল্ড স্টোরেজে। পরে সঠিক সময় দেখে সেই মাছ বাজারে ছাড়া হচ্ছে উচ্চ(Hilsa) দামে।
ফলে বাজারে প্রকৃত জোগান বাড়ছে না, বরং কৃত্রিমভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বাজারে যেখানে ৫০০–৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬০০ টাকায়, সেই মাছই খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০০–১০০০ টাকা কেজি দরে। ফলে শেষ পর্যন্ত ক্ষতির মুখে পড়ছেন সাধারণ ক্রেতারা।(Hilsa)
একজন বর্ষীয়ান মৎস্যজীবী জানাচ্ছেন, “আমরা যে মাছ ধরি, তার অনেকটাই বড় ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যায়। ওরা একবারে হাজার হাজার কেজি কিনে ফেলে। ফলে বাজারে চাহিদা থাকলেও জোগান কমে যায়। তখন দাম বাড়ে।”
এই অবস্থার জন্য বিশেষজ্ঞরা সরকারি নজরদারির অভাবকেই দায়ী করছেন। তাঁদের মতে, শুধু ধরা পড়া মাছের পরিমাণ নয়, বাজারে তার সঠিক ও ন্যায্য বণ্টনও নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। নাহলে ভবিষ্যতেও বড় ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হবেন(Hilsa)
তবে এই পরিস্থিতির মধ্যেও আশার কথা একটাই—এখনও মাছ ধরার মরশুম শেষ হয়নি। সামনে যদি আবহাওয়া অনুকূল থাকে এবং আরও বেশি ট্রলার সমুদ্রে যেতে পারে, তাহলে প্রকৃত জোগান বাড়বে। তবে তাতেও যদি দাম না কমে, তাহলে বোঝা যাবে, সমস্যা শুধুমাত্র আবহাওয়া বা ধরা পড়া মাছের পরিমাণে নয়, বরং বাজার ব্যবস্থার অন্দরের ‘খেলা’-তেই।
সেই ‘খেলা’ বন্ধ করতে না পারলে, ইলিশ হয়তো অচিরেই শুধুই ‘শো-পিস’ হয়ে দাঁড়াবে মধ্যবিত্তের কল্পনায়, পাতের বাস্তবতায় নয়।