ডোমের হাতে কালীমন্দিরে পূজো করতেন পর্তুগিজরা

Special Correspondent : তিনি ডোম কিন্তু তিনি চিকিৎসকও। তাঁর হাতেই প্রাণ রক্ষা পেয়েছিল বসন্ত রোগে আক্রান্ত বহু ফিরিঙ্গি বা পর্তুগিজরা। তাঁদের পূজিত দেবী মন্দিরই আজ…

history behind Portuguese worshipped kali temple

Special Correspondent : তিনি ডোম কিন্তু তিনি চিকিৎসকও। তাঁর হাতেই প্রাণ রক্ষা পেয়েছিল বসন্ত রোগে আক্রান্ত বহু ফিরিঙ্গি বা পর্তুগিজরা। তাঁদের পূজিত দেবী মন্দিরই আজ পরিচিত ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি।

দ্বিমত রয়েছে কিন্তু, গ্ৰহণযোগ্য দুটি তত্বই। দুভাবেই সত্য বৌবাজারের কালীমন্দিরের কালীর ফিরিঙ্গি রূপ নেওয়ার ইতিহাস। তবু গবেষকদের মধ্যেই দ্বিমত কলকাতার বৌবাজার ফিরিঙ্গি কালীমন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা আসলে কে!

কিছু তথ্য পাওয়া যায় ‘কলিকাতা দর্পণ’ বইয়ে, রাধারমণ মিত্র লিখেছেন কটন সাহেব তাঁর বইতে লিখেছেন ‘শ্রীমন্ত ডোম নামে এক ব্যক্তি এই কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন৷তিনি তাঁর মৃত্যুসময় পর্যন্ত ৭০বছর ধরে এই কালীর পূজারীর কাজ করেন৷

শ্রীমন্ত ডোম এই অঞ্জলের বসন্ত রোগীদের চিকিৎসা করতেন৷মন্দিরের ভেতর কালীমূর্তির পাশেই এক শীতলার মূর্তি রাখা আছে৷ এই অঞ্চলের ফিরিঙ্গি বাসিন্দাদের মধ্যে শ্রীমন্ত ডোমের খুব খ্যাতি ও প্রতিপত্তি হয়৷ফিরিঙ্গিরা বসন্ত রোগ থেকে সেরে উঠলে কালীর কাছে পুজো পাঠিয়ে দিত৷সেইজন্য এই কালীর নাম হয় ফিরিঙ্গি কালী’৷

ম্যাককাচন সাহেব লিখেছেন এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠার সময় ৯০৪-৯০৫বঙ্গাব্দ,অর্থাৎ ইংরেজি ১৪৯৮ খ্রীস্টাব্দ৷ রাধারমন বাবু তাঁর বইয়ে লিখছেন অনেকের ধারনা এই কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কবিয়াল অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি অথবা তাঁর ঠাকুরদা তিনিও আর এক অ্যান্টনি!যদিও কবিয়ালের ঠাকুরদা ছিলেন অ্যান্টনি বাগানের মালিক৷ অভিধানে ‘ফিরিঙ্গি’ মানে ইউরোপের বাসিন্দা বোঝানো হলেও আমরা অনেকেই মনে করি পুর্তুগিজরা আসলে ফিরিঙ্গি৷ ফিরিঙ্গি কালীবাড়িতে প্রতিষ্ঠিত কালীমূর্তিটি “শ্রীশ্রীসিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানি” নামে পূজিত হয়।

১৪৩৭ খ্রিস্টাব্দে ভাগীরথী নদীর অদূরে একটি শ্মশানের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল শিব ও কালিকার বিগ্রহ।মন্দিরের তখনও প্রতিষ্ঠা হয়নি। ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির সঠিক প্রতিষ্ঠাকাল জানা যায় না। মন্দিরের সামনের দেওয়াল ফলকে লেখা আছে, “ওঁ শ্রীশ্রীসিদ্ধেশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরাণী/ স্থাপিত ৯০৫ সাল, ফিরিঙ্গী কালী মন্দির”।

এর থেকে অনুমান করা হয়, মন্দিরটি ৯০৫ বঙ্গাব্দে স্থাপিত হয়েছিল।মন্দিরটি প্রথমে ছিল শিব মন্দির। ১৮২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শ্রীমন্ত পণ্ডিত এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ছিলেন।তিনি নিঃসন্তান হওয়ায় ১৮৮০ সালে শশিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৬০ টাকায় দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে মন্দিরটি বিক্রি করে দেন। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার এখনও মন্দিরের সেবায়েত।

ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি একটি চাঁদনি স্থাপত্যের মন্দির। এই মন্দিরের কালীমূর্তিটি মাটির তৈরি। এটি প্রায় সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা সবসনা ত্রিনয়না মূর্তি।কালীমূর্তি ছাড়াও মন্দিরে আছে শীতলা, মনসা, দুর্গা, শিব ও নারায়ণের মূর্তি। মন্দিরে প্রতি অমাবস্যায় কালীপূজা ও প্রতি পূর্ণিমায় সত্যনারায়ণ পূজা হয়।