ভারতের একমাত্র সমাজতত্ত্ববিদের রক্তে বইছে নীল চাষ এবং কুলীন ব্রাহ্মণের রক্ত

বিশেষ প্রতিবেদন: একদিকে ফরাসি নীল চাষী। অ ন্যদিকে কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারের ঐতিহ্য। দুই রক্তই বইছে তার শরীরে। আর তা নিয়েই তিনি এগিয়ে গিয়েছেন। সৃষ্টি করেছেন…

Andrea-Bitai-APJ-kalam

বিশেষ প্রতিবেদন: একদিকে ফরাসি নীল চাষী। অ ন্যদিকে কুলীন ব্রাহ্মণ পরিবারের ঐতিহ্য। দুই রক্তই বইছে তার শরীরে। আর তা নিয়েই তিনি এগিয়ে গিয়েছেন। সৃষ্টি করেছেন সাহিত্য তিনি আন্দ্রে বেতেই , বাঙালি পরিবারের দেওয়া নাম সলিল। ভারতের একমাত্র সমাজতত্ত্ববিদ।

চন্দননগরের গঙ্গার ঘাটে এক বৃদ্ধা রোজ ভোরে স্নান করতে যান। কুলীন ব্রাহ্মণ বিধবা। নাম শিবানী মুখোপাধ্যায়। মাথার চুল ছোট করে ছাঁটা, পরনে শুধু সাদা থান। ঘাট থেকেই দেখা যায় ঘড়ির টাওয়ারটা। তার লাগোয়া একটা পুরোনো কলোনিয়াল স্টাইলের বাড়িতে থাকেন এক ফরাসি বৃদ্ধা। বৃদ্ধাকে লোকে ডাকে “মাদাম বেতেই” বলে। তিনি চন্দননগরেই জন্মেছেন। ওই ক্লক টাওয়ারটা তাঁর দাদুর অথবা তার কাকারই তৈরি। তাঁর বাবা মা নীল চাষ করতে এই শহরে এসেছিলেন তারপর এখানেই রয়ে যান। চন্দননগরে জন্মালে কি হবে মাদাম বেতেই বাংলা খুব সামান্যই জানতেন।

Andrea-Bitai

মাদাম বেতেই এর বিয়ে হয়েছিল ফ্রান্স থেকে আসা এক অফিসারের সঙ্গে। কিন্তু এদেশের কলেরায় এক শিশু পুত্র রেখে ম‍‌ঁসিয়ে বেতেই যখন মারা যান তখন মাদাম বেতেই কুড়ির কোঠা পেরোননি। শহরের অন্য ফরাসি নাগরিকরা মাদামের সাহায্যার্থে একটা স্কুল খুলে দেন école de jeunes filles নামে। মাদাম ওই বাড়ির একটা অংশে থাকতেন আর একটা অংশ স্কুল হিসাবে ব্যবহার করতেন। শিবানী দেবী আর মাদাম বেতেই দুজন দুই গ্রহের বাসিন্দা হলেও তাঁদের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে। মাদাম বেতেই এর ছেলের সঙ্গে শিবানী দেবীর মেয়ের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এত কাছাকাছি থেকেও তাঁরা কখনো একে অপরের সাথে দেখা করেননি বা কথা বলেননি। বলবেন কি করে একে দুই পরিবার ছিল এই বিয়ের বিরুদ্ধে এবং শিবানী দেবী আর মাদাম বেতেই একে অপরের ভাষা জানতেন না। এই ছোট শহরে কাছাকাছি থেকেও তাঁরা ছিলেন আগন্তুক।

আজ থেকে নব্বই-একশো বছর আগে এই ছোট শহরে দুটো সম্পূর্ণ আলাদা জগতের, আলাদা ধর্মের দুই পরিবারের ছেলে আর মেয়ের প্রেমই কিভাবে হয়েছিল এবং বিয়েই কিভাবে হয়েছিল সেটাই আশ্চর্যের বিষয়। মাদাম বেতেই এবং শিবানী দেবীর নাতি হলেন আন্দ্রে বেতেই। যিনি ভারতের একজন বিখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ।

মনে হয় তার নিজের জীবনের দুটো সম্পূর্ণ আলাদা পরিবারের মিলনের রহস্যই তাকে সমাজতত্ত্ববিদ হতে প্রভাবিত করেছিল। আন্দ্রে বেতেই এর জীবনের প্রথম ৯ বছর কেটেছিল এই শহরেই। একদম বাঙালি পরিবেশে। তখন তিনি বাংলা ছাড়া আর কোন ভাষাই জানতেন না। বাবা ফরাসি হলেও চোস্ত বাংলা জানতেন। আন্দ্রের দিদা অর্থাৎ শিবানী দেবী মেয়ে জামাইয়ের কাছেই থাকতেন এবং রামায়ণ মহাভারতের গল্প বলে আন্দ্রে কি ঘুম পাড়াতেন। তিনি আন্দ্রের বাঙালি নাম দিয়েছিলেন সলিল। আন্দ্রে বেতেই তাঁর জীবনের কাহিনী নিয়ে বই লিখেছেন। তার নাম Sunlight on the garden। এই বইতেই তাঁর ছোটবেলার কথা আছে।