প্রসেনজিৎ চৌধুরী: করোনাকে (Covid 19) আটকাব। এই ছিল রাষ্ট্রীয় নীতি। এই আলোচিত গণস্বাস্থ্য কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য ছিল নিজেকে আইসোলেশনে রাখা। সেই কারণে টানা তিরিশ মাস দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন ‘ড্রাগনভূমি’ ভুটান (Bhutan)। গত আড়াই বছরের এই বিচ্ছিন্নতা ছিল সড়ক সংযোগে। অর্থাৎ আকাশ পথে জরুরি পরিষেবা ও জরুরিকালীন যাতায়াত ছাড়া ভুটানবাসী কোনওভাবেই তাঁদের অতি দরকারি কাজের জন্য ভারতে বা অন্যত্র যেতে পারতেন না। করোনা ছোঁয়া থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে একেবারে বিচ্ছিন্ন থাকা ভুটান অবশেষে তার সীমান্ত দরজাগুলি (Bhutan Gate) খুলে দিচ্ছে।
থিম্পুর ঘোষণা, শুক্রবার দুটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভুটান গেটের স্থলবন্দর ফুন্টশোলিং ও জেলেফু ফের সচল হবে। ভুটানের চুখা জেলার ফুন্টশোলিংয়ের লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার জয়গাঁ। একইভাবে ভুটানি সামসি জেলা লাগোয়া জলপাইগুড়ি। এদিকেও আছে চামুর্চির ভুটান গেট। আর ভুটানি সামদ্রুপজংখার ও জেলেফু জেলার সংলগ্ন অসম। গত কয়েকদিনে দুই দেশের মধ্যে পর পর আলোচনা হয় ভুটান গেট খোলা ও পরবর্তী বিভিন্ন বিষয়ে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম স্থলবন্দর ভুটানের ফুন্টশোলিং ভারতের জয়গাঁ। এই স্থলবন্দর একদিন বন্ধ থাকায় সীমান্তের দুই পারের বাণিজ্য ও স্থানীয় ব্যবসায়িক লেনদেনে বিরাট প্রভাব পড়েছিল। বারবার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ড.লোটে শেরিং ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেচেন ওয়াংমো সর্বশেষ সিদ্ধান্তের জন্য রাজা জিগমে খেসর নামগিয়াল ওয়াংচুককের সঙ্গে আলোচনা করেন। এর পর ভারত সরকারের সঙ্গে কয়েক দফার আলোচনা। ভারতের বিদেশমন্ত্রীর এস জয়শংকরের সঙ্গে দেখা করেন নয়াদিল্লির ভুটানি রাষ্ট্রদূত। আর সর্বশেষ ভুটানের রাজা জিগমে লন্ডনে ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যাওশ্রার আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কূটনৈতিক বৈঠক করেন। থিম্পু-নয়াদিল্লি সহমত হয় দুই দেশের সীমান্ত বাণিজ্য চালু করতে। সেই রেশ ধরে খুলছে ভুটান ফটক।
প্রবল করোনা দাপটে যখন দুনিয়া জুড়ে মৃত্যু মিছিল তখন মাসের পর মাস করোনায় ‘মৃত্যুহীন’ থাকার নজির গড়েছিল ভুটান। করোনা রুখতে পারলেও করোনায় মৃত্যুহীন তকমা একেবারে শেষ পর্বে এসে হারায় ভুটান। ভুটানি সংবাদ সংস্থা বিবিএস জানাচ্ছে, শুক্রবার পর্যন্ত করোনায় গোটা দেশে মৃত ২২ জন। এবার ভুটান গেট খোলার পর ভারত সংলগ্ন জেলাগুলিতে বিশেষ স্বাস্থ্য সচেতনতা চলবে বলে জানান দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেচেন ওয়াংমো।
ভুটান গেট খুললেও প্রতিবেশি দেশের সরকার কিছু নিয়মের কড়াকড়ি করেছে।
(১) এবার থেকে ভুটানে ঢুকতে গেলে প্রি-রেজিস্ট্রেশন করেই ঢুকতে হবে।
(২) ভুটানে ঢোকার জন্য সঙ্গে রাখতে হবে পাসপোর্ট অথবা ভোটার কার্ড।
(৩) বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে ভুটানে ঢোকার ছাড়পত্র মিলবে।
(৪) ভুটানে এক রাত্রি থাকার জন্য দিতে হবে ১২০০ নু (Nu) অথবা ১২০০ ভারতীয় টাকা অথবা সমমূল্যের ডলার।
এই নিয়মের কড়াকড়িতে পর্যটন ব্যবসা মার খাবে বলছেন পশ্চিমবঙ্গের ট্যুর অপারেটররা। তবে এদেরই অনেকের যুক্তি ভুটান নিজেকে দূষণ থেকে বাঁচাতে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। গেট খুললেও খরচের ধাক্কায় হুট করে ভুটান যাওয়া বন্ধ।