পুজোয় অনিশ্চিত পদ্মার ইলিশ! মোদীতেই ভরসা মমতার

কলকাতা: বর্ষাকাল মানেই বাঙালির পাতে রুপোলি শস্য, ইলিশ। ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে ইলিশের ঝোল, পাতুরি কিংবা ভাজা মানেই যেন এক গন্ধমাদন! কিন্তু এ বছর সে…

hilsa demand west bengal

কলকাতা: বর্ষাকাল মানেই বাঙালির পাতে রুপোলি শস্য, ইলিশ। ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে ইলিশের ঝোল, পাতুরি কিংবা ভাজা মানেই যেন এক গন্ধমাদন! কিন্তু এ বছর সে স্বাদ যেন অধরাই থেকে যাচ্ছে। দিঘা ও কোলাঘাটে কিছুটা ইলিশ উঠলেও তা সারা বাংলার চাহিদা মেটানোর মতো নয়। উপরন্তু, বাংলাদেশের পদ্মা থেকে ইলিশ রফতানি নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। ফলে এবার রাজ্যের চাহিদা মেটাতে ভরসা করতে হচ্ছে গুজরাত ও মায়ানমার থেকে আমদানি হওয়া ইলিশের উপর।

বাংলাদেশ সরকারের তরফে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, চলতি মরশুমে ভারতে ইলিশ রফতানির কোনও পরিকল্পনা নেই। এমন অবস্থায় কলকাতা সহ গোটা রাজ্যে প্রতিদিনই গুজরাতের নর্মদা মোহনা থেকে ট্রাকে বোঝাই হয়ে আসছে ইলিশ। প্রতিদিন প্রায় ৬০ টন মাছ আসছে গুজরাত থেকে। পাশাপাশি মায়ানমার থেকেও হিমায়িত ইলিশ পৌঁছচ্ছে কলকাতায়।

   

মূল্য কত? গুণমান কেমন?

গুজরাতের ডিমওলা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৯০০-১,০০০ টাকায়, আর ডিমছাড়া ইলিশের দাম ১,২০০–১,৪০০ টাকা। মায়ানমার থেকে আসা হিমায়িত ইলিশ বাজারে উঠছে ১,৪০০-১,৬০০ টাকা দরে। হাওড়া পাইকারি বাজার সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই সেখানকার কোল্ড স্টোরেজে ৬২৫ টন মায়ানমার ইলিশ সংরক্ষিত।

ডায়মন্ড হারবার, দিঘা থেকে স্থানীয় ইলিশও বাজারে উঠছে। ওজন ৪৫০–৫০০ গ্রাম হলে দাম ৬০০–৮০০ টাকা। এক কেজি ওজনের বড় ইলিশের দাম ছুঁয়েছে ১,৮০০ টাকা।

তবু স্বাদে ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে

গুজরাত ও মায়ানমার থেকে আসা ইলিশে স্বাদের ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মাছগুলি মূলত নোনা জলের, ফলে সেগুলির স্বাদ ও গন্ধ পদ্মা বা রূপনারায়ণের ইলিশের মতো নয়। কলকাতার ভোজনরসিকরা যেভাবে বছরভর পদ্মার ইলিশের জন্য অপেক্ষা করেন, তা এবার ভরাট হবে না বলেই আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

Advertisements

রাজ্য সরকারের অবস্থান

এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের মৎস্য দফতর জানাচ্ছে, বাংলার মানুষের ইলিশ চাহিদা মেটাতে দেশের অন্য রাজ্য থেকে আমদানি ছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজার থেকেও বিকল্প খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, “আমরা চাই এপার বাংলার প্রতিটি মানুষই যেন সঠিক মূল্যে ইলিশের স্বাদ পান। তাই নিজের নদীগুলির পাশাপাশি অন্য রাজ্য ও দেশ থেকেও ইলিশ আনার পরিকল্পনা চলছে।”

রাজনৈতিক আবহেও প্রতিফলন

বাংলাদেশ-ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সম্পর্কের উত্তেজনাও পদ্মার ইলিশ আমদানিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর দুর্গাপুজোর আগে কিছুটা সময়ের জন্য পদ্মার ইলিশ ভারতের বাজারে ঢুকলেও এবার সেই সম্ভাবনাও ম্লান।

সুমিষ্ট ইলিশের স্বাদ হয়তো এবার কিছুটা বদলে যাবে, কিন্তু বাঙালির মন থেকে ইলিশপ্রেম মুছে যাবে না। গুজরাত, মায়ানমার, কিংবা দেশের অন্যপ্রান্ত, যেখান থেকেই হোক না কেন, রুপোলি শস্যর টানেই এখনও বাজারমুখো হচ্ছেন ভোজনরসিকরা।