আবারও ধরা পড়ল পুলিশের ভয়ঙ্কর চেহারা (Suvendu)। এবারের ঘটনাস্থল পুরুলিয়ার আড়ষা গ্রাম। এই গ্রামেই পুলিশের নির্যাতনে বিষ্ণু কুমার নামে এক ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গিয়েছে মোবাইল চুরির একটি মিথ্যা অভিযোগের জেরে আড়ষা থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে বিষ্ণুকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়।
থানায় তাঁর ভাইয়ের সামনেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়, যার ফলে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং শেষ পর্যন্ত সিরকাবাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এই ঘটনায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, গত ১৬ জুলাই বিষ্ণু কুমারকে মোবাইল চুরির মিথ্যা অভিযোগে আড়ষা থানায় ডেকে পাঠানো হয়। বিষ্ণুর পরিবারের দাবি, তিনি মোবাইলটি কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এবং থানার ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে থানায় হাজির হন। কিন্তু থানায় তাঁকে নির্মমভাবে মারধর করা হয়।
মারধরের পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হলেও, বাড়ি ফিরে তিনি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। গতকাল সন্ধ্যায় তাঁকে সিরকাবাদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরিবারের অভিযোগ, এই মৃত্যু পুলিশি নির্যাতনের সরাসরি ফল।বিষ্ণুর পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, “শুধুমাত্র গরিব মানুষ বলে কি এমন নৃশংস আচরণ করা হল? বিষ্ণু মোবাইলটি কুড়িয়ে পেয়েছিলেন, এবং থানার ডাকে তিনি নিজেই হাজির হয়েছিলেন। তবুও কেন তাঁকে এভাবে মারা হল?” শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ আসলে তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন অনুব্রতর মত দুষ্কৃতীরা যখন পুলিশের স্ত্রী-মায়ের ধর্ষণের হুমকি দেয় তখন পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকে কেন।
শুভেন্দু অধিকারী তাঁর এক্স পোস্টে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, “এই হল পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের প্রকৃত রূপ। শাসক দলের দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস তাদের নেই, কিন্তু গরিব মানুষ দেখলে তাদের হাত নিশপিশ করে।” তিনি আরও বলেন, “থানায় কোনো আসামীর উপর মারধর বা অত্যাচার আইনত অপরাধ।
তবুও থানা কেন অভিযোগ গ্রহণ করল না? নিজেদের দোষ ঢাকতে?” শুভেন্দু আড়ষা থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি), ডিউটি অফিসার, সিভিক ভলান্টিয়ার এবং অন্যান্য কর্মচারীদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তিনি প্রয়োজনে বিচারবিভাগীয় তদন্তেরও দাবি করেছেন এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বিষ্ণু কুমারের পরিবার ইতিমধ্যে ন্যায়বিচারের জন্য কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী তাঁদের আইনি সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং বলেছেন, “ওই থানার তৎকালীন কর্মকর্তাদের জেল হওয়া উচিত।” এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে পুলিশি নির্যাতন এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
জামশেদপুর এফসির এই সেন্টার ব্যাককে দলে টেনে নিল ডায়মন্ড হারবার
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে, এবং অনেকে পুলিশের এই “মধ্যযুগীয় বর্বরতার” নিন্দা করেছেন।এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সাধারণ মানুষের প্রতি তাদের আচরণের একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। বিষ্ণুর পরিবারের অভিযোগ এবং শুভেন্দু অধিকারীর দাবি পুলিশ প্রশাসনের জবাবদিহিতার প্রশ্ন তুলেছে। তদন্তে কী ফলাফল আসে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা এখন দেখার বিষয়।