দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরে আবারও পুরনো মেজাজে দেখা গেল বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষকে (Dilip Ghosh)। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে তাঁর বৈঠকের পরই শোনা যাচ্ছিল, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দিলীপ ঘোষের উপর অসন্তুষ্ট। এমনকি সূত্রের খবর, তাঁকে ‘মুখ বন্ধ রাখতে’ পর্যন্ত বলেছেন জে পি নাড্ডা।
কিন্তু কলকাতায় ফিরে ফের একরকম ইঙ্গিতে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন দিলীপ। শুক্রবার দুর্গাপুরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভায় আমন্ত্রণ না পাওয়া নিয়ে দলের রাজ্য নেতৃত্বকে ঘুরিয়ে কটাক্ষ করতেও পিছপা হলেন না তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর সভায় কেন তাঁকে দেখা গেল না—এই প্রশ্নের উত্তরে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আমার মনে হয় আমি গেলে আমাকে কোথায় রাখা হবে সেটা দলের নেতৃত্ব ঠিক করতে পারছে না। তাই ভেবেই ছিলাম আমি যাবো না। তারপর সভাপতি ডাকলেন, তাই দিল্লি চলে গেলাম।’
এর আগেও দিলীপ বলেছিলেন, ‘আমাকে কর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর সভায় ডেকেছিলেন, তাই আমি হ্যাঁ বলেছিলাম। দল আমাকে ডাকেনি, হয়তো চায় না আমি যাই, তাহলে অস্বস্তি হবে। তাই আমি দিল্লি চলে যাচ্ছি।’
বিষয়টা এখানেই থেমে থাকেনি। দিল্লি থেকে ফিরে এ দিন আবারও একুশে জুলাই নিয়ে জল্পনা জিইয়ে রাখলেন তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে দিলীপ বলেন, ‘একুশ তারিখ তো এখনও চলে যায়নি।’
এই মন্তব্য ঘিরে দলের অন্দরে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, রাজ্যে তৃণমূলের শহিদ দিবসের পালটা কর্মসূচি হিসেবে বিজেপি আগে থেকেই পরিকল্পনা করছিল কিছু রাজনৈতিক পদক্ষেপের। সেক্ষেত্রে দিলীপ ঘোষ আদৌ কোনও রাজনৈতিক চমক আনতে চলেছেন কি না, তা নিয়েও জল্পনা তুঙ্গে।
যদিও দিলীপ ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, তিনি একুশে জুলাই খড়্গপুরেই থাকবেন এবং বিজেপির একটি আঞ্চলিক কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। তবে তাঁর ‘চমক’ মন্তব্য যে শুধু কর্মসূচির কথাই ইঙ্গিত করে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ অতীতেও একাধিকবার নিজের মন্তব্যের মাধ্যমে দলকে বিব্রত করেছেন দিলীপ।
বিজেপির একাংশ মনে করছে, দিলীপ ঘোষের এই বক্তব্য আসলে ইচ্ছাকৃত। কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ থাকায় তিনি প্রায়শই রাজ্য নেতৃত্বকে পাশ কাটিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নেন বা মন্তব্য করেন। ফলে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মধ্যে ফাটল আরও প্রকট হচ্ছে।
বিরোধীদের দাবি, এই ঘটনা থেকেই পরিষ্কার বিজেপির অন্দরেই চলছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। রাজ্য বিজেপি নেতারাও যে দিলীপ ঘোষকে নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন, তা তাঁর একাধিক মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট। এখন দেখার বিষয়, একুশে জুলাই আদৌ দিলীপ ঘোষ কোনও ‘চমক’ আনেন কিনা, না কি তাঁর এই মন্তব্য শুধুই ‘রাজনৈতিক দৃষ্টি ঘোরানো’ চাল মাত্র।