সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ও সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে (Madan-Mitra)। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মদন মিত্র এক বিতর্কিত মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তিনি বলেছেন, “নিন্দার কোনো ভাষা নেই।
কিন্তু যেদিন কলেজ বন্ধ ছিল পরীক্ষা চলছিল, অভিযোগকারিণী কেন সেদিন কলেজে গিয়েছিলেন? আর গেলেন যদি, তাহলে বাড়ির কাউকে জানালেন না কেন? সঙ্গে কয়েকজন বান্ধবীকে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।”
এই মন্তব্যের মাধ্যমে মদন মিত্র (Madan-Mitra) প্রকারান্তরে অভিযোগকারী ছাত্রীকেই দোষারোপ করেছেন, যা সমাজের বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের সৃষ্টি করেছে। এই প্রতিবেদনে আমরা মদন মিত্রের মন্তব্য, গণধর্ষণ মামলার তদন্ত, তৃণমূল সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং সমাজে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।
ঘটনার বিবরণ
২৫ জুন, ২০২৫-এ কলকাতার কসবা এলাকায় অবস্থিত সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে এক ২৪ বছর বয়সী প্রথম বর্ষের ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হন। কলকাতা পুলিশ তিনজন অভিযুক্ত—মনোজিৎ মিশ্র (৩১), জায়েব আহমেদ (১৯), এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০)—কে গ্রেপ্তার করেছে। মৌলিক তথ্য অনুযায়ী, মনোজিৎ মিশ্র তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা এবং দক্ষিণ কলকাতার সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পরিচিত।
এই ঘটনার পর জাতীয় মহিলা কমিশন (এনসিডব্লিউ) কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখে দ্রুত এবং সময়বদ্ধ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। এই ঘটনা গত বছরের আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে একজন ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গে মহিলা নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
মদন মিত্রের মন্তব্য এবং সমালোচনা (Madan-Mitra)
মদন মিত্র, যিনি তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক এ(Madan-Mitra) বং রাজ্যের রাজনীতিতে একটি পরিচিত মুখ, তাঁর মন্তব্যে অভিযোগকারী ছাত্রীর উপর দায় চাপিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে, কলেজ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রী কেন সেখানে গিয়েছিলেন এবং কেন তিনি বাড়ির কাউকে না জানিয়ে বা বান্ধবীদের সঙ্গে না নিয়ে গিয়েছিলেন। এই মন্তব্য নারী নিরাপত্তার প্রতি সংবেদনশীলতার অভাব প্রকাশ করে এবং ভিকটিম ব্লেমিং-এর একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে বিজেপি, এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে। বিজেপি নেতা অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “মদন মিত্রের মন্তব্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। একজন নারীকে দোষারোপ করার পরিবর্তে সরকারের উচিত অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।”
সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “এই ধরনের মন্তব্য তৃণমূলের নারী নিরাপত্তার প্রতি উদাসীনতার প্রমাণ।” সামাজিক মাধ্যমে মদন মিত্রের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে, এবং অনেকে তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
পাখতুনখোয়া প্রদেশে আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত ১৩ পাকিস্তানি সেনা
তৃণমূল সরকারের প্রতিক্রিয়া
তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে এবং (Madan-Mitra) অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ বলেন, “এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল অপরাধীদের কঠোর শাস্তির পক্ষে।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য জানান, মনোজিৎ মিশ্রের সঙ্গে দলের কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই। তৃণমূল আরও দাবি করেছে যে, তারা ‘অপরাজিতা উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড বিল’-এর মাধ্যমে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান করেছে, যদিও এই বিল এখনও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র আমিক জামেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহিলা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতার নীতি রয়েছে। রাজ্যে কঠোর আইন রয়েছে।” তবে, মদন মিত্রের মন্তব্য তৃণমূলের এই অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে সমালোচিত হচ্ছে।
কলকাতার গণধর্ষণ মামলা এবং মদন মিত্রের (Madan-Mitra) বিতর্কিত মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গে নারী নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। তৃণমূল সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিলেও, মদন মিত্রের মন্তব্য তাদের নারী নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করেছে। এই ঘটনা সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং ন্যায়বিচারের দাবিকে আরও জোরালো করেছে।