ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে স্পেস স্টেশন থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কি বার্তা শুভাংশুর ?

এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। দীর্ঘ ৪১ বছর আগে দেশের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মহাকাশচারী রাকেশ শর্মাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন মহাকাশ থেকে ভারতকে কেমন লাগে।(Shubhanshu) রাকেশ শর্মা…

Shubhanshu conversation with modi

এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। দীর্ঘ ৪১ বছর আগে দেশের প্রধান মন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী মহাকাশচারী রাকেশ শর্মাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন মহাকাশ থেকে ভারতকে কেমন লাগে।(Shubhanshu) রাকেশ শর্মা বলেছিলেন “সারে জাহাঁ সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা।” ৪১ বছর পর আবার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরী হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এ অবস্থানরত ভারতীয় মহাকাশচারী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লার  (Shubhanshu) সঙ্গে সরাসরি কথোপকথন করেছেন।

এই কথোপকথন ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শুভাংশু শুক্লা, যিনি অ্যাক্সিওম-৪ মিশনের মাধ্যমে আইএসএস-এ পৌঁছেছেন, তিনি ভারতের প্রথম মহাকাশচারী যিনি এই মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছেন এবং ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মার পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে যাত্রা করেছেন (Shubhanshu)। এই প্রতিবেদনে আমরা এই কথোপকথনের বিশদ বিবরণ, শুভাংশু শুক্লার মিশন এবং এর তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করব।

   

কথোপকথনের পটভূমি

গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা, (Shubhanshu) ভারতীয় বায়ুসেনার একজন দক্ষ টেস্ট পাইলট এবং আইএসআরও-র মহাকাশচারী, অ্যাক্সিওম-৪ মিশনের পাইলট হিসেবে ২৫ জুন, ২০২৫-এ নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্স-এর ফ্যালকন ৯ রকেটে করে মহাকাশে যাত্রা করেন।

এই মিশন, যা নাসা, স্পেসএক্স, আইএসআরও এবং অ্যাক্সিওম স্পেস-এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হয়, ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ। শুভাংশু শুক্লা এই মিশনে সাতটি ভারতীয় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সহ মোট ৬০টি পরীক্ষা পরিচালনা করছেন। তিনি ১৪ দিনের এই মিশনে মহাকাশে ভারতের ত্রিবর্ণ রাষ্ট্রীয় পতাকা বহন করছেন, যা ১.৪ বিলিয়ন ভারতীয়র আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

২৮ জুন, ২০২৫-এ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শুভাংশু শুক্লার সঙ্গে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে কথোপকথন করেন। এই কথোপকথন ভারতের মহাকাশ গবেষণায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এই মিশনকে ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি “নতুন অধ্যায়” হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং শুভাংশুকে ১.৪ বিলিয়ন ভারতীয়র শুভকামনার প্রতিনিধি হিসেবে অভিহিত করেছেন।

কথোপকথনের বিশদ বিবরণ

প্রধানমন্ত্রী মোদী শুভাংশু শুক্লার (Shubhanshu) সঙ্গে কথা বলার সময় তাঁর এই ঐতিহাসিক যাত্রার জন্য অভিনন্দন জানান এবং মিশনের সাফল্য কামনা করেন। তিনি বলেন, “আপনি ভারতের ত্রিবর্ণ পতাকা নিয়ে মহাকাশে গিয়েছেন এবং ১.৪ বিলিয়ন ভারতীয়র আশা-আকাঙ্ক্ষা বহন করছেন। এটি আমাদের দেশের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত।”

শুভাংশু শুক্লা (Shubhanshu) প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “মহাকাশে থাকা আমার জন্য একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমি শিশুর মতো শিখছি কীভাবে মহাকাশে চলাফেরা করতে হয়, খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। এটি ভারতের মানব মহাকাশ কর্মসূচির দিকে একটি ছোট কিন্তু দৃঢ় পদক্ষেপ।”

শুভাংশু আরও জানান যে, তিনি মহাকাশ থেকে ভারতের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলার জন্য উৎসাহী এবং তাদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন। তিনি মহাকাশে ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব হিসেবে একটি খেলনা হাঁস “জয়” নিয়ে গিয়েছেন, যা তাঁর ছয় বছরের ছেলে কিয়াসের প্রিয় প্রাণীদের প্রতীক। এই খেলনাটি মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ভাসছে, যা মিশনের একটি আকর্ষণীয় দৃশ্য হয়ে উঠেছে।

Advertisements

মোবাইল নম্বর আপডেট না করলে মিস হবে ২,০০০ টাকা! জেনে নিন আপডেট

মিশনের তাৎপর্য

অ্যাক্সিওম-৪ মিশন ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই মিশনে শুভাংশু শুক্লা (Shubhanshu) সাতটি ভারতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনা করছেন, যার মধ্যে রয়েছে মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে ফসলের বীজের উপর গবেষণা, জৈব-প্রযুক্তি, এবং মানব স্বাস্থ্যের উপর মহাকাশযাত্রার প্রভাব নিয়ে গবেষণা। এই পরীক্ষাগুলো ভারতের গগনযান মিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে, যা ২০২৭ সালে ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ মিশন হিসেবে পরিকল্পিত।

এই মিশনটি ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি এবং পোল্যান্ডের মধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি উদাহরণ। মিশনের কমান্ডার পেগি হুইটসন, যিনি নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী এবং দুইবার আইএসএস-এর কমান্ডার ছিলেন, শুভাংশুকে “অপারেশনালি দক্ষ” এবং “মহাকাশ প্রযুক্তিতে অত্যন্ত বুদ্ধিমান” হিসেবে প্রশংসা করেছেন।

সমাজে প্রভাব

শুভাংশু শুক্লার (Shubhanshu) এই মিশন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে তাঁর কথোপকথন ভারতের জনগণের মধ্যে বিশাল উৎসাহ সৃষ্টি করেছে। লখনউতে তাঁর বিদ্যালয়, সিটি মন্টেসরি স্কুল, এই উৎক্ষেপণ উদযাপনের জন্য একটি পাবলিক ওয়াচ পার্টি আয়োজন করেছিল। তাঁর বাবা-মা এবং পরিবার এই ঘটনায় গর্বিত। তাঁর বোন শুচি মিশ্র বলেন, “আমাদের পরিবার গর্বিত যে ১.৪ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে থেকে আমাদের শুভাংশুকে বেছে নেওয়া হয়েছে।”

সামাজিক মাধ্যমে এই কথোপকথন এবং মিশন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ভারতের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মহাকাশ গবেষণার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, এবং শুভাংশুর এই যাত্রা তাদের জন্য একটি প্রেরণা হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “এই মিশন ভারতের তরুণদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তুলবে।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লার (Shubhanshu) কথোপকথন ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই ঘটনা শুধুমাত্র ভারতের প্রযুক্তিগত ক্ষমতার প্রকাশই নয়, বরং আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের ক্রমবর্ধমান ভূমিকার প্রতীক। শুভাংশু শুক্লার এই মিশন ভারতের গগনযান কর্মসূচির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতে মহাকাশে ভারতের আরও সাফল্যের পথ প্রশস্ত করবে।