ধর্ষণ কাণ্ডে তিন ঘণ্টার বিভীষিকা! গার্ডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তদন্তকারীদের

কলকাতা: কসবা আইন কলেজ (Kasba Law College) ধর্ষণ কাণ্ডে একের পর এক নয়া তথ্য উঠে আসছে। নির্যাতিতার অভিযোগপত্রে রয়েছে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা…

ধর্ষণ কাণ্ডে তিন ঘণ্টার বিভীষিকা! গার্ডের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তদন্তকারীদের

কলকাতা: কসবা আইন কলেজ (Kasba Law College) ধর্ষণ কাণ্ডে একের পর এক নয়া তথ্য উঠে আসছে। নির্যাতিতার অভিযোগপত্রে রয়েছে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এক নির্মম নির্যাতনের বিবরণ। জানা গিয়েছে, গত ২৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত প্রায় ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত কলেজের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয় ওই তরুণীর উপর।

তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছেন। বিশেষ করে, ঘটনার সময় কলেজের (Kasba Law College) ভিতরে ঠিক কে কে ছিল, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ। বেশ কয়েকজন কর্মী এবং ছাত্র পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে।

   

নির্যাতিতার অভিযোগ অনুযায়ী, সেদিন সন্ধ্যায় তিনি অন্য ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ইউনিয়ন রুমে বসেছিলেন। সেই সময় অভিযুক্ত ‘J’ তাঁকে বাইরে ডেকে নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। নির্যাতিতা সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং নিজের সম্পর্কের কথা জানান। এরপরে তিনি ইউনিয়ন রুমে ফিরে আসেন।

কিন্তু খানিক বাদেই যখন সবাই বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন অভিযুক্ত ‘J’ চোখের ইশারায় ‘M’ ও ‘P’ কে ইউনিয়ন রুম (Kasba Law College) বাইরে থেকে বন্ধ করতে বলে। দরজা বন্ধ করে দেওয়ার পর অভিযুক্ত ‘J’ নির্যাতিতাকে জোর করে ইউনিয়ন রুমের ওয়াশরুমের কাছে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে।

নির্যাতিতা প্রাণপণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবুও অভিযুক্ত ক্ষান্ত হয়নি। ভয় ও আতঙ্কে নির্যাতিতার প্যানিক অ্যাটাক শুরু হয়। শ্বাসকষ্টের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তখন অভিযুক্ত ‘J’ বাইরে থাকা দুই অভিযুক্ত ‘M’ এবং ‘P’-কে ভিতরে ডাকে।

নির্যাতিতা জানান, তিনি বারবার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু অভিযুক্তরা কোনও কর্ণপাত করেনি। পরে নির্যাতিতা যখন ব্যাগ গুছিয়ে কলেজ (Kasba Law College) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তখন দেখেন কলেজের মূল গেটও বন্ধ করে দিয়েছে ‘M’ এবং ‘P’।

Advertisements

নিরাপত্তারক্ষীর ভূমিকা নিয়েও উঠছে বড় প্রশ্ন। অভিযোগ, ওই সময় নির্যাতিতা নিরাপত্তারক্ষীর কাছে সাহায্য চাইলে তিনিও কোনও সাহায্য করেননি। বরং অভিযোগ, অভিযুক্ত ছাত্রনেতাদের নির্দেশে গার্ড গার্ড রুমের বাইরে বসে থাকেন।

এরপর অভিযুক্তরা নির্যাতিতাকে ফের জোর করে ইউনিয়ন রুমের মধ্যে নিয়ে যায় এবং পরে গার্ড রুমে আটকে রেখে চলে আরও ভয়ঙ্কর অত্যাচার।

নির্যাতিতা আরও অভিযোগ করেছেন, ঘটনার সময় তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। বলা হয়, অভিযুক্তের এত ক্ষমতা আছে যে চাইলে তার বাবা-মাকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসাতে পারে। এমনকি, ধর্ষণের সময় গোপনে তোলা ভিডিও দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করা হয়। বলা হয়, যদি সে কাউকে কিছু বলে কিংবা অভিযুক্ত যেখানে ডাকে সেখানে না যায়, তাহলে সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করে দেওয়া হবে।

ঘটনার সময় কলেজের নিরাপত্তা, গেট বন্ধ থাকার রহস্য এবং গার্ডের নিরব ভূমিকা নিয়ে তদন্তকারীরা এখন জোরদার অনুসন্ধান চালাচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের জেরা করে সিসিটিভি ফুটেজ, কলেজের উপস্থিতি রেজিস্টার এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

শিক্ষা মহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, সকলেই একটাই দাবি— নির্যাতিতার জন্য বিচার এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।