ওয়ালমার্টে বছরে ৮৩ হাজার কোটির রফতানির ঘোষণায় লক্ষ্মীলাভ বাংলার

আমেরিকার বিশাল খুচরা বাণিজ্য কোম্পানি ওয়ালমার্ট ইনকর্পোরেটেড (Walmart Inc) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ঘোষণা করেছে যে, তাদের ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত থেকে প্রতি…

Walmart Export Plan, West Bengal MSME

আমেরিকার বিশাল খুচরা বাণিজ্য কোম্পানি ওয়ালমার্ট ইনকর্পোরেটেড (Walmart Inc) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ঘোষণা করেছে যে, তাদের ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত থেকে প্রতি বছর ১০ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৩,০০০ কোটি টাকা) মূল্যের পণ্য আমদানি করার লক্ষ্য রয়েছে। এই উদ্যোগটি ভারতের ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ (MSME) এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গ এই ক্ষেত্রে একটি স্বল্প অবস্থানে রয়েছে, এবং এই রফতানির বড় অংশ বাংলা থেকে আসতে পারে, যা রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ‘লক্ষ্মীলাভ’ আনবে।

পশ্চিমবঙ্গের MSME-তে অগ্রগতি
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার জোর দিয়ে বলেছেন যে, MSME ক্ষেত্রে বাংলা দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে। তিনি এই দাবি করেছেন যে, রাজ্যের ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলো দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোর একটি মজবুত ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। বাংলায় ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, তাঁতের শিল্প, মাটির পাত্র, জুট ও টেক্সটাইল শিল্পের গভীর সম্পদ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে। ওয়ালমার্টের এই রফতানি পরিকল্পনায় বাংলার এই শিল্পগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

   

ওয়ালমার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডগ ম্যাকমিলন (Doug McMillon) এই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, তাদের ফ্লিপকার্ট ও ফোনপে প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভারতীয় MSME-কে বিশ্ববাজারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ফ্লিপকার্টের ‘সমর্থ’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে বর্তমানে ১৫০,০০০-এরও বেশি ছোট ব্যবসায়ী অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যোগ দিয়েছে, যা ২০২৩ সালের ফিকি (FICCI) প্রতিবেদন অনুযায়ী ই-কমার্সের প্রভাবকে উল্লেখ করে। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রোগ্রামের প্রভাব বাড়লে শিল্পক্ষেত্রে নতুন চাকরি সৃষ্টি এবং রফতানির মাধ্যমে আর্থিক প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।

বাংলার শিল্প ও রফতানির সম্ভাবনা
পশ্চিমবঙ্গের জুট শিল্প, শান্তিনিকেতনের কার্পেট, বাঁকুড়ার টেরাকোটা, এবং মুর্শিদাবাদের রেশম শিল্প বিশ্ববাজারে একটি আলাদা পরিচয় তৈরি করেছে। ওয়ালমার্টের এই পরিকল্পনায় এই পণ্যগুলোর রফতানি বাড়লে বাংলার গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। বর্তমানে ফ্লিপকার্টের বিক্রেতা বেসে গ্রামীণ এলাকার অংশগ্রহণ ৪৫% ছাড়িয়ে গেছে (২০২৪ সালের তথ্য), যা বাংলার মতো রাজ্যের জন্য একটি বড় সুযোগ। উদাহরণস্বরূপ, মেদিনীপুরের তাঁতী সম্প্রদায় বা কোচবিহারের জুট শিল্পীদের পণ্যগুলো ওয়ালমার্টের মাধ্যমে বিদেশে পৌঁছলে তাদের আয়ের উৎস বৃদ্ধি পাবে।

Advertisements

সরকারি উদ্যোগ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা
পশ্চিমবঙ্গ সরকার MSME উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যেমন ‘ওডিওপ’ (One District One Product) এবং ‘ভবিষ্যত ক্রেডিট কার্ড স্কিম’। এই পরিকল্পনাগুলো স্থানীয় শিল্পীদের আর্থিক সহায়তা ও বাজার অ্যাক্সেস প্রদানে সাহায্য করছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর পক্ষে দৃঢ় ভূমিকা নিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, ওয়ালমার্টের এই চুক্তি বাংলার জন্য একটি আর্থিক বিকাশের সুযোগ, যা রাজ্যের শিল্পী ও কৃষকদের জীবনযাত্রায় উন্নতি আনবে।

চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
তবে এই পরিকল্পনার কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাংলার শিল্পীদের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ এবং আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদনের ক্ষমতা বাড়ানোর দরকার। এছাড়া, গুজরাট বা তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় বাংলার অবস্থান শক্তিশালী করতে সরকারি নীতি আরও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। তবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ওয়ালমার্টের এই চুক্তি বাংলার জন্য একটি ‘লক্ষ্মীলাভ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রফতানির মাধ্যমে বিদেশ থেকে আসা টাকা রাজ্যের অর্থনৈতিক চক্রকে গতিশীল করবে, নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে, এবং স্থানীয় শিল্পগুলোর বিশ্বমঞ্চে পরিচিতি বাড়বে। এটি শুধুমাত্র শহর নয়, গ্রামীণ বাংলার জীবনযাত্রাতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।