বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচন কৌশলী জন সুরাজ পার্টির প্রধান প্রশান্ত কিশোর (Kishor) বলেছেন, বিহারের ভোটে জাতি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলেও এটি একমাত্র নির্ধারক নয়। সংবাদ মাধ্যমকে কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতি ভিত্তিক রাজনীতির প্রশ্নে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা নির্বাচনে বিহারে সাফল্যের উদাহরণ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “বিহারে গত ১৫ বছর ধরে বিজেপি লোকসভা নির্বাচনে অনেক সাফল্য পেয়েছে। অনেকেই মনে করেন, বিজেপি নয়, বরং নরেন্দ্র মোদীর নামে ভোট পড়ছে।” তিনি আরও বলেন, “আপনারা বলছেন, বিহারে প্রত্যেকে জাতের ভিত্তিতে ভোট দেয়।
কিন্তু মোদীর (Kishor) নামে ভোট পড়ছে। লোকেরা জাতের কারণে নয়, ভয়ের কারণে লালু প্রসাদ যাদবের পক্ষে ভোট দেয়। সুতরাং, জাত একটি কারণ, কিন্তু একমাত্র কারণ নয়।” এই বক্তব্য বিহারের রাজনৈতিক গতিশীলতার উপর নতুন আলোকপাত করেছে।
বিহারের রাজনীতিতে জাতের ভূমিকা (Kishor)
বিহারের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে জাতিভিত্তিক সমীকরণ দ্বারা প্রভাবিত। রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)-এর লালু প্রসাদ যাদবের মুসলিম-যাদব (Kishor) (এম-ওয়াই) জোট এবং জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর নীতীশ কুমারের অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া জাতি (ইবিসি) ও মহাদলিতদের সমর্থন এই রাজনীতির মূল ভিত্তি।
বিজেপি উচ্চবর্ণ এবং কিছু অনগ্রসর জাতির সমর্থন পায়। তবে, প্রশান্ত কিশোর (Kishor) দাবি করেছেন, জাত ছাড়াও জাতীয়তাবাদ, উন্নয়ন, এবং নেতৃত্বের ব্যক্তিত্বের মতো বিষয়গুলো ভোটারদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। তিনি মোদীর সাফল্যের উদাহরণ দিয়ে বলেন, মোদীর জাতের সংখ্যা বিহারে নগণ্য হলেও তিনি ভোট পান তাঁর নেতৃত্ব এবং স্ব-নির্মিত ব্যক্তিত্বের কারণে।
জন সুরাজের লক্ষ্য
প্রশান্ত কিশোর (Kishor) ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীতে জন সুরাজ পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ঘোষণা করেন যে তাঁর দল বিহারের ২৪৩টি বিধানসভা আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তিনি জাতভিত্তিক রাজনীতির পরিবর্তে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো উন্নয়নমূলক ইস্যুগুলোর উপর জোর দিয়েছেন।
তাঁর দুই বছরের পদযাত্রায় ৫,৩০০টিরও বেশি গ্রামে সাধারণ মানুষের সমস্যা শোনার পর তিনি বিশ্বাস করেন, বিহারের ভোটাররা জাত এবং ধর্মভিত্তিক ভোটের বাইরে বিকল্প খুঁজছেন। তিনি বলেন, “জাত, ধর্ম, বা ভয়ের ভিত্তিতে ভোট দেওয়ার ফলে বিহারের এই দুর্দশা।”
চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা
প্রশান্ত কিশোরের (Kishor) একটি বড় চ্যালেঞ্জ বিহারে জাতভিত্তিক রাজনীতির প্রভাব। আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিহারের ৫৭% ভোটার নিজ জাতির নেতাদের পছন্দ করেন। তাঁর ব্রাহ্মণ পরিচয় এবং কোনো নির্দিষ্ট জাতিগত ভিত্তির অভাব তাঁর দলের জন্য বাধা হতে পারে। সমালোচকরা তাঁকে বিজেপি’র ‘বি-টিম’ বলে অভিযোগ করেছেন, যিনি বিরোধীদের ভোট ভাগ করার জন্য নির্বাচনে লড়ছেন।
নির্বাচনী ফলাফল ও প্রভাব
২০২৪ সালের উপ-নির্বাচনে জন সুরাজ চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১০% ভোট পেয়েছিল, কিন্তু কোনো আসন জিততে পারেনি। তবে, দুটি আসনে তাদের ভোট বিজয়ী দলের ব্যবধানের চেয়ে বেশি ছিল, যা তাদের প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়। কিশোরের (Kishor) দল মহিলা এবং মুসলিম ভোটারদের উপর জোর দিচ্ছে, এবং তিনি মদ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
জলপাইগুড়িতে বাংলার দ্বিতীয় এইমস এর দাবিতে সোচ্চার বাংলাপক্ষ
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বিহারের রাজনীতিতে এনডিএ (বিজেপি, জেডি(ইউ), এলজেপি) এবং মহাগাঠবন্ধন (আরজেডি, কংগ্রেস, বাম দল) প্রধান শক্তি। কিশোরের জন সুরাজ এই দুই শক্তির মধ্যে তৃতীয় বিকল্প হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। তিনি নীতীশ কুমার ও লালু যাদবের ৩৫ বছরের শাসনের সমালোচনা করে বলেন, এটি বিহারের পিছিয়ে পড়ার কারণ। তবে, তাঁর দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং জাতভিত্তিক ভোটারদের আনুগত্য তাঁর পথে চ্যালেঞ্জ।
প্রশান্ত কিশোরের (Kishor) বক্তব্য বিহারের ভোটারদের জাতভিত্তিক রাজনীতির বাইরে ভাবতে উৎসাহিত করছে। তাঁর জন সুরাজ পার্টি উন্নয়ন ও শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নতুন বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তবে, বিহারের জটিল জাতভিত্তিক রাজনীতি এবং প্রতিষ্ঠিত দলগুলোর আধিপত্য তাঁর পথে বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী নির্বাচনে তাঁর দল কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে, তা সময়ই বলবে।