দিল্লি ট্যুরিজম (Delhi Tourism) বিভাগ ২০২৫-২৬ সালের জন্য দস্তকর নেচার বাজারের (Dastkar Nature Bazaar) ইভেন্ট ক্যালেন্ডার ঘোষণা করেছে, যেখানে রয়েছে হস্তশিল্প, সংস্কৃতি ও খাদ্যের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা উৎসবমুখর মেলার একটি আকর্ষণীয় তালিকা। এই বছরের প্রথম ইভেন্ট হিসেবে মনসুন মেলা ৭ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত কিষাণ হাট, আন্ধেরিয়া মোঢ়ে অনুষ্ঠিত হবে। দিল্লি ট্যুরিজম বিভাগের একজন সিনিয়র আধিকারিক জানিয়েছেন, এই মেলা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের হস্তশিল্প, সংস্কৃতি এবং রন্ধনশৈলীকে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসবে।
দস্তকর নেচার বাজার, যা দিল্লি ট্যুরিজম এবং দস্তকর নামক একটি শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় হস্তশিল্প এনজিও-র যৌথ উদ্যোগ, প্রতি মাসে বিভিন্ন থিমের মাধ্যমে ভারতের সমৃদ্ধ হস্তশিল্প ঐতিহ্য প্রদর্শন করে। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত দস্তকর বিশেষ করে গ্রামীণ ও নারী শিল্পীদের স্বনির্ভর করে তুলতে কাজ করে। আন্ধেরিয়া মোঢ়ের কিষাণ হাটে অবস্থিত এই বাজারে প্রতি মাসে প্রায় ১০০টি স্টলের মাধ্যমে হস্তশিল্প, হাতে বোনা কাপড়, জৈব পণ্য এবং পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ থেকে তৈরি পণ্য প্রদর্শিত হয়। মনসুন মেলা এই বছরের ইভেন্টগুলির মধ্যে প্রথম হলেও, আগামী অক্টোবরে ফেস্টিভাল অফ লাইট, নভেম্বরে গ্রেট হ্যান্ডলুম বাজার এবং ডিসেম্বরে উইন্টার মেলার মতো উৎসবও দর্শকদের জন্য অপেক্ষা করছে।
মনসুন মেলা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্পীদের হাতে তৈরি পণ্য যেমন লাম্বানি এমব্রয়ডারি, সুজিনি এমব্রয়ডারি, গুজরাটের মিরর ওয়ার্ক, হাতে বোনা টেক্সটাইল এবং প্রাকৃতিক ফাইবারের পণ্য প্রদর্শন করবে। এছাড়া, পরিবেশবান্ধব পণ্য যেমন পুনর্ব্যবহৃত কাপড়, জৈব রং এবং হাতে তৈরি ত্বক ও চুলের যত্নের পণ্যও এই মেলার আকর্ষণ হবে। দর্শকরা শুধু কেনাকাটাই নয়, শিল্পীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাঁদের কারুশিল্প সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবেন। এই মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারুশিল্পের কর্মশালা এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের রাস্তার খাবারের স্টলও থাকবে, যা দর্শকদের জন্য একটি সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।
দিল্লি ট্যুরিজম বিভাগের আধিকারিক জানিয়েছেন, “মনসুন মেলা শুধু একটি কেনাকাটার জায়গা নয়, এটি ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উদযাপন। আমরা শিল্পীদের জন্য একটি স্থায়ী বাজার তৈরি করতে চাই, যাতে তাঁরা তাঁদের পণ্য সরাসরি গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতে পারেন এবং ন্যায্য মূল্য পান।” দস্তকরের প্রায় চার দশকের অভিজ্ঞতা এবং দিল্লি ট্যুরিজমের পর্যটন দক্ষতার সমন্বয়ে নেচার বাজার দক্ষিণ দিল্লি ও গুরগাঁওয়ের মধ্যে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে।
মেলার সময়সূচী প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত, এবং প্রবেশমূল্য মাত্র ৪০ টাকা। নিকটতম মেট্রো স্টেশন হল ছত্তরপুর (ইয়েলো লাইন), যা থেকে মেলাস্থল মাত্র ১০ মিনিটের হাঁটা পথ। পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা এবং পরিচ্ছন্ন শৌচাগার ও পানীয় জলের সুবিধা দর্শকদের অভিজ্ঞতাকে আরও সুন্দর করে তুলবে। এছাড়া, গলি-ই-খাস নামে একটি স্থায়ী স্টলের সারি রয়েছে, যেখানে মেলার বাইরেও হস্তশিল্প ও জৈব পণ্য কেনা যায়।
দস্তকর নেচার বাজারের ইভেন্টগুলি শুধু দিল্লির বাসিন্দাদের জন্যই নয়, পর্যটকদের জন্যও একটি বড় আকর্ষণ। এই মেলাগুলি ভারতের গ্রামীণ শিল্পীদের কাজকে শহুরে বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করে, তাঁদের অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলে। ২০২৫-২৬ সালের ক্যালেন্ডারে মোট নয়টি থিমভিত্তিক ইভেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে মার্চ ২০২৬-এ বার্ষিক সেল ইভেন্টে হস্তশিল্পের পণ্যগুলি ছাড়ের মূল্যে পাওয়া যাবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের উদ্যোগ শুধু হস্তশিল্প শিল্পকে প্রচার করে না, বরং পর্যটনের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করে। মনসুন মেলা দর্শকদের জন্য একটি সাংস্কৃতিক উৎসবের পাশাপাশি শিল্পীদের জন্য তাঁদের প্রতিভা প্রদর্শনের একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে। তাই, আগামী ৭ আগস্ট থেকে কিষাণ হাটে এই মনসুন মেলায় অংশ নিয়ে ভারতের সমৃদ্ধ হস্তশিল্প ও সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা নিতে ভুলবেন না।