পহেলগাঁওয়ে নির্মম পর্যটক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বড়সড় অগ্রগতি৷ জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (NIA)। সংস্থা নিশ্চিত করল, এই হামলায় সরাসরি জড়িত ছিল পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবা (LeT)-র সদস্যরা। শুধু তাই নয়, এই তিন অস্ত্রধারী জঙ্গিকে কাশ্মীরের স্থানীয় দুই বাসিন্দা আশ্রয় ও সহায়তা করেছিলেন, যাঁদের ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ২২ জুনের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ জন নিরীহ পর্যটক। গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ১৬ জন। দেশজুড়ে এই ঘটনা সাড়া ফেলে দেয়৷
আন্তর্জাতিক রুটে ঢুকেছিল জঙ্গিরা
NIA-র সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গিরা পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদ থেকে মুজাফফরাবাদ হয়ে পুঞ্চ-রাজৌরি সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। ভারতে প্রবেশের পর তারা কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় তারা স্থানীয়দের সহায়তায় একাধিকবার অবস্থান পরিবর্তন করে, লুকিয়ে থাকে এবং হামলার জন্য সুযোগ খোঁজে।
তদন্তে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য, পর্যটকদের মধ্যে ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করেই জঙ্গিরা হত্যাকাণ্ড চালায়। অর্থাৎ, এটি শুধু সন্ত্রাস নয়, ধর্মীয় বিদ্বেষে চালানো অত্যন্ত পরিকল্পিত গণহত্যা।
গ্রেফতার দুই স্থানীয়: খাওয়ানো, লুকিয়ে রাখা, পালানোর রাস্তা দেখানো Route Pahalgam Terrorists Take
গ্রেফতার হওয়া দুই কাশ্মীরি পরভেজ আহমদ জোথার (বাটকোট) এবং বাসির আহমদ জোথার (হিল পার্ক) তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তাঁরা জঙ্গিদের হিল পার্ক এলাকার একটি মৌসুমি ‘ঢোক’-এ আশ্রয় দেন। শুধু আশ্রয় নয়, তারা খাবার, পোশাক, অস্ত্র লুকানো এবং নিরাপদে পালানোর রুটও ঠিক করে দিয়েছিলেন।
তাঁরা জানিয়েছেন, জঙ্গিরা ছিল অত্যন্ত প্রশিক্ষিত। তাদের আচরণ, অস্ত্র ব্যবহার ও আত্মগোপনের পদ্ধতিতে সেনা-প্রশিক্ষণের ছাপ স্পষ্ট।
ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ে হাতিয়ার NIA, খতিয়ে দেখা হচ্ছে পুরনো হামলার যোগ
তদন্তকারীরা এখন ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট ও স্যাটেলাইট সিগন্যাল বিশ্লেষণ করে দেখছেন, এই জঙ্গিরা পূর্বের অন্য হামলার সঙ্গেও যুক্ত কি না। সন্দেহ করা হচ্ছে, এই একই মডিউল হয়তো স্পিনার ও জম্মুর অন্যান্য হামলার নেপথ্যেও ছিল।
এছাড়া, NIA ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা খতিয়ে দেখছে-এই জঙ্গিদের সঙ্গে কাশ্মীরের আরও কোনও স্থানীয় মডিউল বা স্লিপার সেলের সংযোগ ছিল কি না।
পাহেলগাঁওর রক্তাক্ত সত্য
এই হামলা থেকে একাধিক ভয়াবহ বাস্তব উঠে এসেছে, পাকিস্তান থেকে প্রশিক্ষিত জঙ্গি ভারতে ঢুকতে পারছে, কাশ্মীরের কিছু স্থানীয় বাসিন্দা এখনও তাদের আশ্রয়-খাবার দিচ্ছে এবং সর্বোপরি, ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে মানুষকে হত্যা করার মতো নিষ্ঠুর মানসিকতা চলছে সীমান্তের ওপার থেকে পরিচালিত চক্রান্তে। NIA জানিয়েছে, তদন্ত এখনও চলছে, আরও কিছু গ্রেফতার ও তথ্যপ্রমাণ সামনে আসতে পারে আগামী দিনে।