দুবারের অলিম্পিক পদকজয়ী (Two-time Olympic Medallist) ভারতীয় ফরোয়ার্ড (Indian Hockey Team) ললিত কুমার উপাধ্যায় (Lalit Upadhyay) রবিবার আন্তর্জাতিক হকি (International Hockey) থেকে অবসরের ঘোষণা করেছেন। তিনি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের হকি মাঠে নিজের দক্ষতা ও নিষ্ঠার ছাপ রেখেছেন। এফআইএইচ প্রো লিগে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ভারতের রোমাঞ্চকর ৪-৩ গোলে জয়ের পরই অবসরের সিদ্ধান্ত নেন। উত্তর প্রদেশের বারাণসীর এই ৩১ বছর বয়সী খেলোয়াড় তার ক্যারিয়ারে দুটি ঐতিহাসিক অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পদক টোকিও ২০২০ এবং প্যারিস ২০২৪ অর্জন করেছেন, যা তার অধ্যবসায় ও প্রতিভার প্রমাণ।
ললিত তার নিজস্ব এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, “একটি ছোট গ্রামে শুরু হয়েছিল, যেখানে সংস্থান ছিল সীমিত। কিন্তু স্বপ্ন ছিল অসীম। একটি স্টিং অপারেশনের মুখোমুখি হওয়ার পরেও দুইবার অলিম্পিক পোডিয়ামে দাঁড়ানো, এই পথ ছিল চ্যালেঞ্জ, উন্নতি এবং অবিস্মরণীয় গৌরব। ২৬ বছর পর আমার শহর থেকে অলিম্পিয়ান হওয়া আমার জন্য গর্ব ও কৃতজ্ঞতার।”
২০১৪ সালে সিনিয়র আন্তর্জাতিক হকিতে অভিষেক করা ললিত ১৭৯ বেশি ম্যাচ খেলেছেন এবং ৪০ বেশি গোল করেছেন। তার দ্রুত স্টিক-ওয়ার্ক, আক্রমণাত্মক সৃজনশীলতা এবং মাঠে নিবেদন তাকে ভারতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ডে পরিণত করেছিল। কিন্তু তার সাফল্যের পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। ২০০৮ সালে, মাত্র ১৭ বছর বয়সে, ভারতীয় হকিতে দুর্নীতি উন্মোচনের একটি স্টিং অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দুতে পড়েন তিনি। যদিও পরে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তবুও জাতীয় প্রোগ্রাম থেকে বাদ পড়েন, যা তার ক্যারিয়ারকে প্রায় ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। এই ধাক্কা তাকে খেলা ছেড়ে দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।
কিন্তু প্রথম কোচ শ্রী পরমানন্দ মিশ্রের নির্দেশনা এবং প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক ধনরাজ পিল্লের অক্লান্ত সমর্থনে ললিত ফিরে আসেন। ২০১০ সালে ধনরাজের সহায়তায় এয়ার ইন্ডিয়ায় চুক্তি পান এবং ২০১৪ সালে তুষার খান্ডকারের মাধ্যমে বিপিসিএলে চাকরি পান। হকি ইন্ডিয়া লিগে কলিঙ্গ ল্যান্সার্সের হয়ে খেলাও তার পুনরুত্থানে ভূমিকা রাখে। এরপর তিনি ভারতের মিডফিল্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন। ২০১৬ ও ২০১৮ সালের এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সোনা, ২০১৭ সালের এশিয়া কাপে সোনা, ২০১৭ সালের হকি ওয়ার্ল্ড লিগ ফাইনালে ব্রোঞ্জ এবং ২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে রুপো জয়ে তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য।
ললিত তার অবসরের ঘোষণায় বলেন, “আজ আমি আন্তর্জাতিক হকি থেকে অবসর নিচ্ছি। এটি একটি কঠিন মুহূর্ত, কিন্তু প্রত্যেক ক্রীড়াবিদের জীবনে এই দিন আসে। আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গৌরব ও সম্মান।”
তিনি তার যাত্রার সঙ্গীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। “আমার প্রথম কোচ শ্রী পরমানন্দ মিশ্র, যিনি আমাকে হকির সঙ্গে পরিচয় করান। হরেন্দর স্যার, যিনি এয়ার ইন্ডিয়ায় আমার প্রথম সুযোগ দেন। সমীর ভাই এবং ধনরাজ স্যার, যারা আমাকে পথ দেখিয়েছেন। বিপিসিএল, যারা আমাকে চাকরি দিয়ে আটটি অর্থপূর্ণ বছর উপহার দিয়েছে। আমার বন্ধু ও সতীর্থদের, যারা এই যাত্রাকে অবিস্মরণীয় করেছে। হকি ইন্ডিয়া, যারা আমাকে জাতীয় জার্সি পরার সুযোগ দিয়েছে। এবং রাজ্য সরকার, যারা আমাকে ডিএসপি পদে নিয়োগ করে সম্মানিত করেছে।”
বিশেষভাবে তিনি বর্তমান ভারতীয় অধিনায়ক হরমনপ্রীত সিংয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লিখেছেন, “হকি আমাকে সবকিছু দিয়েছে, আর তুই তার অন্যতম বড় উপহার, ভাই।” ২০২১ সালে অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত ললিতের গল্প শুধু সাফল্যের নয়, সংগ্রাম, প্রত্যাবর্তন ও প্রেরণার। তিনি বিনয়ী পটভূমির তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য একটি উদাহরণ, যারা দেখিয়েছেন যে দৃঢ়তা ও আবেগ দিয়ে যেকোনো প্রতিকূলতা জয় করা সম্ভব।
Lalit Upadhyay of Indian Hockey Team retires from international hockey