মাত্র পাঁচটি টেস্ট (Test-Bowler) খেলেছিলেন দেশের হয়ে, কিন্তু ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে তিনি ছিলেন অনেক বড়ো জায়গা জুড়ে। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ফাস্ট বোলার ও গ্লুচেস্টারশায়ারের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ডেভিড ভ্যালেন্টাইন ‘সিড’ লরেন্স প্রয়াত হয়েছেন। ২২ জুনমাত্র ৬১ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে মোটর নিউরোন ডিজিজে (MND) ভুগছিলেন। এই দুরারোগ্য অসুখের সঙ্গেও তিনি লড়াই করেছেন অদম্য সাহসিকতায়, যেমনটা করেছেন তার ক্রিকেটজীবনেও।
১৯৬৪ সালের ২৮ জানুয়ারি, গ্লুচেস্টারে জন্মগ্রহণ করেন লরেন্স। মাত্র ১৭ বছর বয়সে গ্লুচেস্টারশায়ারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। একসময় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি পেসার কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন এক ভয়ঙ্কর নতুন বলের জুটি। লরেন্সের (Test-Bowler) অন্যতম বড় পরিচয় ছিল তাঁর গতি। সেই গতির জোরেই প্রাক্তন ক্যারিবিয়ান ব্যাটার ফিল সিমন্সের মাথায় একটি বাউন্সার লেগে সাময়িকভাবে হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে গিয়েছিল — এমন ভয়ংকর স্মৃতি এখনও কাঁপিয়ে তোলে ক্রিকেটবিশ্বকে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গ্লুচেস্টারশায়ারের হয়ে ১৮৫ ম্যাচে ৫১৫টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। একদিনের ক্রিকেটেও ১১৩ ম্যাচে ১৫৫ উইকেট তাঁর ঝুলিতে। তাঁর সেরা বোলিং পারফরম্যান্সগুলির মধ্যে ছিল ১৯৯১ সালে ৬/২০ এবং ১৯৯০ সালে নটিংহ্যামের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক-সহ ৫/৫১। ১৯৮৮ সালে লর্ডসে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেকে নামেন লরেন্স।
ইংল্যান্ডের হয়ে প্রথম ব্রিটিশজন্ম কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট খেলেছিলেন তিনি। পাঁচটি টেস্টে ১৮টি উইকেট, যার মধ্যে সবচেয়ে স্মরণীয় ১৯৯১ সালে ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নেওয়া। ঐ ইনিংসে তিনি বিদায় দেন স্বয়ং ভিভ রিচার্ডসকেও।
তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৯৯২ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে একটি টেস্ট ম্যাচে মারাত্মক হাঁটুর চোট তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার হঠাৎই শেষ করে দেয়। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৮।
ক্রিকেট ছাড়ার পরেও লরেন্স (Test-Bowler) নিজেকে গুটিয়ে নেননি। হয়ে ওঠেন নাইটক্লাব মালিক, প্রতিযোগিতামূলক বডি বিল্ডার, এবং সর্বোপরি এক মানবিক নেতা। ২০২২ সালে গ্লুচেস্টারশায়ার ক্রিকেট ক্লাবের ইতিহাসে প্রথম ব্রিটিশজন্ম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হন তিনি। সেই পদ তিনি মৃত্যুর দিন পর্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে গ্লুচেস্টারশায়ার ক্লাব আরও সামাজিকভাবে সক্রিয় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে ওঠে।
S-400 এর চেয়েও শক্তিশালী দেশীয় বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করছে ভারত
২০২৩ সালে MND ধরা পড়লেও, লরেন্স নিজের অভিজ্ঞতা মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে দ্বিধা করেননি। সহলেখক ডিন উইলসনের সঙ্গে লেখা আত্মজীবনী ‘In Syd’s Voice’ বইটিতে তিনি প্রযুক্তির সাহায্যে নিজের কথা বলেছিলেন — সাহস, স্বচ্ছতা, ও মানবিকতায় ভরপুর সেই লেখা ইতিমধ্যেই পাঠকের মন জয় করেছে।
২০২৫ সালে তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে MBE সম্মানে ভূষিত করা হয় এবং ECB-এর পক্ষ থেকে আজীবন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদও দেওয়া হয়। সিড লরেন্সের সম্মানে ২০ জুন ব্রিস্টলে অনুষ্ঠিত হয় Pink 4 Syd ম্যাচ, যেখানে গ্লুচেস্টারশায়ার দল পরেছিল গোলাপি জার্সি, ও সেই রাতেই তহবিল তোলা হয় MNDA-র জন্য।
ডেভিড লরেন্সের (Test-Bowler) মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড। লিডস টেস্টের তৃতীয় দিনে ভারত ও ইংল্যান্ড দলের খেলোয়াড়েরা কালো ব্যাজ পরে শ্রদ্ধা জানান এই কিংবদন্তিকে।
Everyone at the ECB is deeply saddened to learn of the passing of David ‘Syd’ Lawrence MBE.
All of our thoughts are with David’s family and friends during this difficult time.
— England Cricket (@englandcricket) June 22, 2025
পরিবারের পক্ষ থেকে স্ত্রী গেইনার ও পুত্র বাস্টার জানান, “তিনি আমাদের কাছে শুধু ক্রিকেটার নয়, একজন অসাধারণ মানুষ ছিলেন। আমরা কৃতজ্ঞ, সারা বিশ্বের মানুষ যেভাবে তাঁকে ভালোবেসেছে, সম্মান জানিয়েছে। এখন আমরা চাই কিছুটা সময় ও নির্জনতা, যাতে তাঁকে শান্তিতে বিদায় জানাতে পারি।”
সিড লরেন্স শুধু বল হাতে প্রতিপক্ষের মাথায় বাজ পড়ানোর ক্ষমতা রাখতেন না, তাঁর জীবনেও বাজ ছিল — সাহস, লড়াই, এবং ভালোবাসার। ক্রিকেটপ্রেমীরা আজ হারাল এক সত্যিকারের যোদ্ধাকে।