২০ জুন থেকে শুরু হচ্ছে ভারত বনাম ইংল্যান্ড (India vs England) পাঁচ ম্যাচের ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ। ভারতীয় দলের (Indian Cricket Team) নেতৃত্বে রয়েছেন তরুণ শুভমন গিল (Shubman GIll), যাঁর নেতৃত্বে টেস্ট দলে এক নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। এই সিরিজে রয়েছে অনেক চমক, তবে সবথেকে আলোচনার কেন্দ্রে যে নামটি উঠে আসছে, তা হল চায়নাম্য়ান কুলদীপ যাদব (Kuldeep Yadav)। এই সিরিজ যেন তাঁর জীবনের এবং কেরিয়ারের ‘দ্বিতীয় ইনিংস’ হয়ে উঠতে চলেছে।
সম্প্রতি আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দিয়েছেন কুলদীপ। খেলার মাঠে তাঁর পুরোনো মায়াবী স্পিন আবার দেখা গিয়েছে। ঘূর্ণি, গতি পরিবর্তন আর নিখুঁত লাইন ও লেংথ—সবমিলিয়ে যেন পুরোনো কুলদীপ ফিরে এসেছেন। আর তার পরপরই জীবনের আরও এক গুরুত্বপূর্ণ ইনিংসের সূচনা—ছোটবেলার বান্ধবী বংশিকার সঙ্গে বাগদান পর্ব সম্পন্ন করেছেন তিনি। এই দুটি ‘নতুন শুরু’ যেন একসঙ্গে মিশে কুলদীপের কেরিয়ারে আনতে চলেছে এক নতুন আলোর দিশা।
কিন্তু ইংল্যান্ডের পিচে একজন রিস্ট স্পিনার কতটা সফল হতে পারেন? এ নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। কারণ, ইংল্যান্ডের উইকেট সাধারণত পেসারদের বেশি সহায়তা করে। তবে প্রাক্তন ভারতীয় বোলিং কোচ ভরত অরুণ মনে করেন, এই পরিবেশেও কুলদীপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন। তাঁর কথায়, “রিস্ট স্পিনাররা সবসময়ই কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন যে কোনও উইকেটে। বিশেষ করে ম্যাচের শুরুতে, যখন উইকেট একটু শক্ত থাকে। তখন রিস্ট স্পিনাররা উইকেট থেকে সাহায্য পায় এবং সেখান থেকে উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে তাঁরা।”
আট বছর পর জাতীয় দলে সুযোগ, ঘরোয়া ক্রিকেটে দল পরিবর্তনের পথে এই ক্রিকেটার
ভরত অরুণ আরও উদাহরণ দেন কিংবদন্তি অস্ট্রেলিয়ান লেগস্পিনার শেন ওয়ার্নের। তিনি বলেন, “ইংল্যান্ডে রিস্ট স্পিনারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য বলতে গেলে সবার আগে শেন ওয়ার্নের নাম উঠে আসে। তবে কুলদীপের মধ্যেও সেই দক্ষতা ও মানসিকতা রয়েছে, যা তাঁকে ইংল্যান্ডের পিচে কার্যকরী করে তুলতে পারে।”
এবারের ভারতীয় দলে কুলদীপ ছাড়া আর কোনও বিশেষজ্ঞ স্পিনার রাখা হয়নি, যা স্পষ্ট করে যে টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছে। অন্যদিকে পেস আক্রমণে রয়েছেন বুমরাহ, কিন্তু অভিজ্ঞ মহম্মদ শামি নেই। অনেকেই মনে করছেন, এতে ভারতের বোলিং লাইনআপ কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তবে এই বিষয়ে ভরত অরুণ বলেন, “আমি মনে করি না বোলিং আক্রমণ দুর্বল। হয়তো কিছুটা অনভিজ্ঞ, কিন্তু প্রত্যেকটি তরুণ বোলারের মধ্যেই সেই আগুন রয়েছে, যা দিয়ে তারা ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারে।”
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ মানেই চ্যালেঞ্জে ভরা টেস্ট ক্রিকেট। সুইং, সিম ও বাউন্স—সব মিলিয়ে ব্যাটারদের জন্য যেমন কঠিন, স্পিনারদের জন্যও তেমনই কঠিন। কিন্তু ঠিক এই পরিস্থিতিতেই নিজেকে প্রমাণ করার আসল মঞ্চ তৈরি হয়। কুলদীপ যাদবের জন্য এ এক সুবর্ণ সুযোগ—নিজেকে আন্তর্জাতিক টেস্ট ফর্ম্যাটে একজন ধারাবাহিক ম্যাচ উইনার হিসেবে তুলে ধরার।
২০১৭-১৮ সালে টেস্ট অভিষেকের সময় কুলদীপ ছিলেন ভারতের স্পিন অ্যাটাকের নতুন রত্ন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ফর্ম ওঠানামা করেছে। কখনও চোট, কখনও আত্মবিশ্বাসের অভাবসব মিলিয়ে জাতীয় দল থেকে অনেকটা সময় দূরে থেকেছেন তিনি। তবে ২০২৫ আইপিএলে ফিরে এসে প্রমাণ করেছেন, তিনি এখনও সেই পুরোনো মায়াবী স্পিনার, যিনি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।