আমির খানের (Aamir Khan) সন্তানরা দীর্ঘদিন ধরে স্পটলাইট থেকে দূরে থেকেছেন। তবে তার ছেলে জুনেইদ খান যখন ২০২৪ সালে ‘মহারাজ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বলিউডে অভিনয় শুরু করেন, তখন ভক্তদের কৌতূহলের অন্ত ছিল না। জুনেইদ তার প্রথম ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। কিন্তু তার দ্বিতীয় ছবি ‘লাভযাপা’, যেখানে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন খুশি কাপুর, তা নিয়ে দর্শকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে—কেউ পছন্দ করেছেন, আবার কেউ সমালোচনা করেছেন। সম্প্রতি আমির খান তার ছেলে জুনেইদের অভিনয় নিয়ে তার সৎ মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং তার শক্তি ও দুর্বলতা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন।
আমিরের সমর্থন ও জুনেইদের অভিনয়ের প্রশংসা
নিউজ ১৮-এর সঙ্গে একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে আমির খান তার ছেলে জুনেইদের অভিনয় দক্ষতার প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছেন। তিনি মনে করেন, জুনেইদ অত্যন্ত প্রতিভাবান অভিনেতা এবং তার প্রথম দুটি চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দেখে তিনি গর্বিত। আমির বলেন, ‘মহারাজ’ ছবিতে জুনেইদের অভিনয় দেখে তিনি মনে করেছেন যেন কারসান নামক চরিত্রটি জীবন্ত হয়ে উঠেছে। জুনেইদ এই চরিত্রে যে আন্তরিকতা ও নিষ্পাপ ভাব ফুটিয়ে তুলেছেন, তা আমিরের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জুনেইদের দ্বিতীয় ছবি ‘লাভযাপা’য় তিনি একটি দুষ্টুমিভরা চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যা তার বাস্তব জীবনের ব্যক্তিত্বের সম্পূর্ণ বিপরীত। তবুও জুনেইদ এই চরিত্রটিকে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আমির জানান, জুনেইদের পরবর্তী প্রকল্প হলো ‘এক দিন’ নামের একটি রোমান্টিক চলচ্চিত্র, যেখানে তার বিপরীতে অভিনয় করবেন জনপ্রিয় দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেত্রী সাই পল্লবী। এই ছবির মাধ্যমে জুনেইদ তার অভিনয়ের বহুমুখিতা আরও একবার প্রমাণ করতে প্রস্তুত। আমির মনে করেন, জুনেইদের অভিনয় দক্ষতা এবং নিষ্ঠা তাকে বলিউডে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
জুনেইদের দুর্বলতা নিয়ে আমিরের সৎ মতামত
আমির খান তার ছেলের প্রশংসা করলেও তার কিছু দুর্বলতা নিয়েও খোলাখুলি কথা বলেছেন। তিনি জানান, জুনেইদ সাক্ষাৎকার দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হন। তার অত্যধিক আন্তরিকতার কারণে কখনও কখনও তিনি এমন কিছু বলে ফেলেন, যা ভুলভাবে বোঝানোর সম্ভাবনা তৈরি করে। এই বিষয়টি জুনেইদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও, আমির স্বীকার করেছেন যে জুনেইদ সাধারণ হিন্দি ছবির নায়কের ছাঁচে পুরোপুরি ফিট করেন না। তিনি আরও বলেন, নাচের ক্ষেত্রে জুনেইদের দক্ষতা তেমন নেই, যা হিন্দি চলচ্চিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে আমির মনে করেন, জুনেইদের অভিনয়ের গভীরতা এবং চরিত্রের প্রতি নিষ্ঠা এই সীমাবদ্ধতাগুলোকে ছাপিয়ে যায়।
জুনেইদের ভবিষ্যৎ ও আমিরের আসন্ন প্রকল্প
আমির খান দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে জুনেইদ এখনও তার প্রাপ্য সাফল্য পুরোপুরি অর্জন করেননি। তবে তার দৃঢ়তা, নিষ্ঠা এবং অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা তাকে বলিউডে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সাহায্য করবে। জুনেইদের প্রতিভার উপর আমিরের পূর্ণ আস্থা রয়েছে, এবং তিনি মনে করেন যে আগামী দিনে জুনেইদ আরও বড় সাফল্য অর্জন করবেন।
অন্যদিকে, আমির খান নিজেও তার আসন্ন চলচ্চিত্র ‘সিতারে জমিন পর’ দিয়ে বড় পর্দায় ফিরছেন। এই ছবিতে তার বিপরীতে অভিনয় করছেন প্রতিভাবান অভিনেত্রী জেনেলিয়া দেশমুখ। ২০২২ সালে ‘লাল সিং চাড্ডা’র পর এটি আমিরের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হতে চলেছে। আমিরের ভক্তরা তার এই প্রত্যাবর্তনের জন্য উৎসুকভাবে অপেক্ষা করছেন।
জুনেইদের যাত্রা: একটি নতুন তারকার উত্থান
জুনেইদ খানের বলিউড যাত্রা সবে শুরু হয়েছে, তবে তার প্রথম দুটি ছবিতেই তিনি দর্শকদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। তার অভিনয়ের গভীরতা এবং চরিত্রের প্রতি নিষ্ঠা তাকে একজন সম্ভাবনাময় অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমির খানের মতো একজন অভিনয় কিংবদন্তীর সমর্থন এবং নির্দেশনা জুনেইদের পক্ষে একটি বড় শক্তি। তবে জুনেইদ নিজেও তার কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে তিনি শুধু আমির খানের ছেলে নন, বরং একজন স্বতন্ত্র প্রতিভার অধিকারী।
‘এক দিন’ ছবির মাধ্যমে জুনেইদের রোমান্টিক অভিনেতা হিসেবে নতুন রূপ দেখার জন্য দর্শকরা উৎসুক। সাই পল্লবীর সঙ্গে তার জুটি কেমন হবে, তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা। এদিকে, আমির খানের ‘সিতারে জমিন পর’ নিয়েও দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। বাবা-ছেলের এই দুই তারকার আসন্ন প্রকল্পগুলো বলিউডে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করতে প্রস্তুত।
জুনেইদের সাক্ষাৎকারের দুর্বলতা এবং নাচের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তার অভিনয়ের প্রতি নিষ্ঠা এবং প্রতিভা তাকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমির খানের আস্থা এবং দর্শকদের সমর্থন জুনেইদকে আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাবে। বলিউডের নতুন এই তারকার যাত্রা কোন পথে এগোবে, তা দেখার জন্য ভক্তরা মুখিয়ে আছেন।