ভারতের সামগ্রিক রফতানি তালিকায় রাজ্যের (West Bengal) কোনও জেলারই নাম নেই শীর্ষ দশে। এটি শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, বরং শিল্প ও বাণিজ্যে পশ্চিমবঙ্গের ক্রমশ পিছিয়ে পড়ারই একটি বাস্তব চিত্র। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে রফতানির নিরিখে দেশের প্রথম ১০টি জেলায় একটি জেলা পর্যন্ত নেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে।
রফতানিতে শীর্ষে যে জেলাগুলি
১. জামনগর (গুজরাত) – ₹৩.৬ লক্ষ কোটি
২. কাঞ্চিপুরম (তামিলনাড়ু) – ₹১.৯ লক্ষ কোটি
৩. পুণে (মহারাষ্ট্র) – ₹১.১ লক্ষ কোটি
৪. মুম্বই শহরতলি – ₹১ লক্ষ কোটি
৫. আহমেদাবাদ (গুজরাত) – ₹৯৭,০০০ কোটি
৬. গৌতম বুদ্ধ নগর (উত্তরপ্রদেশ) – ₹৯৪,০০০ কোটি
৭. মুম্বই (মূল শহর) – ₹৯২,০০০ কোটি
৮. সুরাট (গুজরাত) – ₹৮৯,০০০ কোটি
৯. কচ্ছ (গুজরাত) – ₹৮৬,০০০ কোটি
১০. ভরুচ (গুজরাত) – ₹৭৯,০০০ কোটি
এই তালিকা স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে যে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু এবং উত্তরপ্রদেশের জেলাগুলি রফতানির ক্ষেত্রে বিপুল অগ্রগতি করেছে, অথচ শিল্পের প্রাচীন ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলার নাম সেখানে নেই।
কেন পিছিয়ে পড়ছে বাংলা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পিছিয়ে পড়ার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে—
- পর্যাপ্ত শিল্প পরিকাঠামোর অভাব
- বিনিয়োগ টানতে প্রশাসনিক জটিলতা
- লজিস্টিক এবং বন্দর সংযোগে ঘাটতি
- নতুন শিল্পে নীতিগত অনিশ্চয়তা
- নিরবিচারে জমির ব্যবহার ও বিতর্ক
পশ্চিমবঙ্গ এক সময়ে হুগলি, হাওড়া, দুর্গাপুর, আসানসোলের মতো শিল্প শহরের জন্য পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে কোনও জেলা রফতানিতে ₹৫০,০০০ কোটি টাকার সীমা ছুঁতে পারছে না, যেখানে জামনগরের রফতানি একাই ₹৩.৬ লক্ষ কোটি টাকা!
কোন খাতে রফতানিতে এগিয়ে অন্য রাজ্য?
- গুজরাত – পেট্রোকেমিক্যাল, হীরা, কাপড়
- তামিলনাড়ু – ইলেকট্রনিক্স, গাড়ি, বস্ত্র
- মহারাষ্ট্র – ফার্মাসিউটিক্যাল, গাড়ি
- উত্তরপ্রদেশ – ইলেকট্রনিক্স, খেলনা, গার্মেন্টস
এই রাজ্যগুলিতে সুনির্দিষ্ট শিল্প নীতি, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ), এক্সপোর্ট ইনসেন্টিভ, এবং উন্নত অবকাঠামোর ফলে বিনিয়োগ আকর্ষিত হচ্ছে এবং রফতানিও দ্রুত বাড়ছে।
কী করতে পারে পশ্চিমবঙ্গ?
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
- শিল্পে বিনিয়োগ বান্ধব নীতি গ্রহণ
- আরও SEZ গড়ে তোলা
- বন্দর ও রেল যোগাযোগ উন্নত করা
- ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে এক্সপোর্ট সুযোগ বৃদ্ধি
- Skill development ও প্রযুক্তি উন্নয়নে নজর
ব্যবসায়ী মহলের প্রতিক্রিয়া
ফিকি-র এক সদস্য জানান, “বাংলায় সম্ভাবনা প্রচুর, কিন্তু পরিকল্পনার অভাব, এবং সরকার-শিল্পের মধ্যকার সমন্বয়ের অভাবই প্রধান সমস্যা। রফতানিতে প্রতিযোগিতায় ফিরতে হলে অনেক বেশি সক্রিয়তা দরকার।”
পরিসংখ্যান বলছে ভারতের রফতানি প্রবৃদ্ধি এগিয়ে চলেছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ যেন সেই গতির বাইরে। শিল্পে ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও, রফতানিতে এই অনুপস্থিতি একেবারেই কাম্য নয়। বাংলাকে নতুন করে ভাবতে হবে—নইলে ভবিষ্যতেও এই তালিকায় শুধু ‘অদৃশ্যতা’ই বাংলার নামের পাশে লেখা থাকবে। এই পরিসংখ্যান একটিই বার্তা দিচ্ছে—এখনই জেগে উঠতে হবে বাংলাকে।
