ভারতের প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ফুটবলার ও কোচ নৌসাদ মুসা (Naushad Moosa) আবারও দায়িত্ব পেয়েছেন ভারতের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের (U23 Indian Football Team) প্রধান কোচ হিসেবে। এবার তাঁকে দীর্ঘমেয়াদী দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, এক বছরের জন্য। তাঁর মূল কাজ আগামী বছরের এশিয়ান গেমস (Asian Games) ও এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপের (AFC U-23 Asian Cup) জন্য দলকে প্রস্তুত করা। এই প্রতিযোগিতার বাছাইপর্ব হবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে।
গত বছর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে দুইটি প্রীতি ম্যাচে ভারতের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেছিলেন মুসা। তখন তিনি নর্থইস্ট ইউনাইটেডের সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করছিলেন, স্প্যানিশ কোচ হুয়ান পেদ্রো বেনালির অধীনে। এবার তাঁকে পূর্ণকালীন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যাতে তিনি দল নিয়ে গভীরভাবে কাজ করতে পারেন।
এক সাক্ষাৎকারে মুসা বলেন, “দীর্ঘমেয়াদী দায়িত্ব পেলে খেলোয়াড়দের ভালোভাবে বোঝা যায়। আমি এফেডারেশনের সঙ্গে কথা বলেছি, দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প প্রয়োজন যাতে খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন করা যায় এবং প্রতিপক্ষকে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “এই বয়সে খেলোয়াড়দের মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি করানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমি চাই তারা একসাথে খেলতে শিখুক, একে অপরের খেলার ধরন বুঝুক। একমাত্র সেভাবেই আমরা বড় মঞ্চে ভালো করতে পারব।”
সিজনে চরম ব্যৰ্থতার পর কোচ বদলের পরিকল্পনা? নজরে প্ৰাক্তন ভারতীয় কোচ
তবে একটা বড় সমস্যা হল, বেশিরভাগ অনূর্ধ্ব-২৩ খেলোয়াড়ই আইএসএল ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তারা সেভাবে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। এই নিয়ে মুসা বলেন, “অনেক তরুণ খেলোয়াড় আইএসএলে খেলতে চায়, কিন্তু আমি বলি অবশ্যই চেষ্টা করো। তবে যেখানে খেলার সুযোগ পাবে, সেখানে সই করো। বেঞ্চে বসে থাকলে খেলোয়াড় হিসেবে উন্নতি হবে না।”
তিনি আরও জানান, “আই-লিগে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে, যাদের আমরা নজরে রাখছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিভা খুঁজে বের করে তাদের যথাযথভাবে প্রস্তুত করা।”
এই মাসে দুশানবে সফরের আগে মুসা ২৯ জনের সম্ভাব্য দল ঘোষণা করেছেন। এই দলের মধ্যে মাত্র কয়েকজন আইএসএলে নিয়মিত খেলার সুযোগ পেয়েছে। ভিবিন ছাড়া আর কেউ সিনিয়র জাতীয় দলে সুযোগ পাননি। যদিও আয়ুষ ছেত্রী, অভিষেক সিং এবং সুহেল ভাট বর্তমানে জাতীয় দলের কোচ মানোলো মার্কুয়েজের অধীনে আছেন।
সম্ভাব্য দলে রয়েছেন আরও কিছু পরিচিত মুখ, যেমন মহম্মদ সানান ও নিখিল বারলা (জমশেদপুর), কোরু সিং ও বিকাশ ইউমনাম (কেরালা ব্লাস্টার্স), ম্যাকার্টন লুইস নিকসন ও পার্থিব গগৈ (নর্থইস্ট ইউনাইটেড) এবং দীপেন্দু বিশ্বাস (মোহনবাগান)।
মুসা মনে করেন, শুধুমাত্র দক্ষিণ এশীয় সাফল্যের দিকে না তাকিয়ে বড় মঞ্চের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “আমাদের আরও ক্যাম্প দরকার, আরও এক্সপোজার ম্যাচ দরকার। বিদেশে না যেতে পারলে দেশেই শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলতে হবে। হারলেও সমস্যা নেই, কিন্তু উন্নতির জন্য কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলাটা জরুরি।”
আগামী ১৮ ও ২১ জুন ভারত অনূর্ধ্ব-২৩ দল দুশানবেতে তাজিকিস্তান ও কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে। বর্তমানে দল কলকাতায় প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং ১৬ জুন তারা রওনা হবে দুশানবে।
সর্ব ভারতীয় ফুটবল সংস্থার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই সফর ভারতের যুব দলের খেলোয়াড়দের সিনিয়র দলে উত্তরণের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হতে চলেছে। এখন দেখার পালা, নৌসাদ মুসা তাঁর অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারতীয় যুব দলকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।