ঢাকা: বাংলাদেশ সরকার এক অধ্যাদেশে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটির সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করেছে। এই পরিবর্তনের ফলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-সহ মুক্তিযুদ্ধকালীন চার জাতীয় নেতার মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামান-এই পাঁচ কিংবদন্তি নেতাকে আর বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হবে না। তাদের পরিচয় হবে “মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী” (মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা) হিসেবে। এর পাশাপাশি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চারশোর উপর রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের প্রস্তাবে সিলমোহর দেওয়া হয়েছে।
কাদের বলা হবে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’?
নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সেই ব্যক্তি হবেন যিনি ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর মধ্যে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। সেটি হতে পারে দেশের ভেতরে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে, কিংবা ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়ে। এই যোদ্ধাদের হতে হবে নির্ধারিত বয়সসীমার নাগরিক বা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য।
স্বীকৃতি বহাল থাকবে সেইসব নারীদের (বীরাঙ্গনা) যারা পাক হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়েছেন এবং সেইসব চিকিৎসাকর্মীদের যারা যুদ্ধে আহতদের সেবা দিয়েছেন ফিল্ড হাসপাতালে।
প্রশ্ন উঠেছে ইতিহাস বোধ নিয়ে Bangladesh freedom fighter definition
অধ্যাদেশটি প্রকাশের পরপরই ইতিহাসবিদ, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সমালোচকদের মতে, যারা মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল তৈরি করেছেন, যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন এনে দিয়েছেন তাদের ‘সহযোগী’ বলা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে সরলীকরণ এবং বিকৃত করার শামিল।
একজন বিশিষ্ট গবেষক বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এই রাষ্ট্রের ধারণাগত রূপকার। তার কারামুক্তির আগেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল—কিন্তু তার অবদান ছাড়া এই স্বাধীনতা কল্পনাও করা যেত না। তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা না বলা মানে পুরো ইতিহাসের কাঠামোকেই নেড়ে দেওয়া।”
তাজউদ্দীন আহমদের মতো প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী, সৈয়দ নজরুল ইসলামের মতো ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি-তাদের ‘সহযোগী’ ট্যাগে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক না হলেও, তা যে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে, সেটা বলাই যায়।
একটি মৌলিক প্রশ্ন: শুধু রণাঙ্গনেই কি যুদ্ধ হয়?
এই অধ্যাদেশ আমাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে- যুদ্ধ কি শুধুই বন্দুকধারীদের?
নাকি যুদ্ধ মানেই নেতৃত্ব, কৌশল, যোগাযোগ, মনোবল, এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতি? এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সেই প্রশ্নের মুখোমুখি।
Bangladesh: Bangladesh redefines ‘Bir Muktijoddha,’ excluding Bangabandhu and four national leaders, reclassifying them as “Liberation War associates.” This controversial ordinance also cancels recognition for over 400 politicians, sparking debate among historians and citizens about the true history of the Bangladesh Liberation War.