দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনার আবহে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। বুধবার বিকেল ৫টায় “কাউন্সিল অফ মিনিস্টার্স” বা মন্ত্রীপরিষদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন তিনি। একাধিক সূত্রের মতে, এই বৈঠক শুধুমাত্র নিয়মরক্ষার উদ্দেশ্যে নয়, বরং এর মাধ্যমে বড় রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছেন মোদী। আর এই বৈঠক ঘিরে শুরু হয়েছে চরম কৌতূহল এবং নানা জল্পনা।
সূত্র অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে মন্ত্রীদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে, যাতে তাঁরা সময়মতো উপস্থিত থাকেন এবং নির্দিষ্ট তিনটি বিষয়ে দিকনির্দেশনার জন্য প্রস্তুত থাকেন। এই তিনটি বিষয় হল:
1. অপারেশন সিন্দুরের প্রচার:
সদ্য সমাপ্ত সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোপন অভিযান ‘অপারেশন সিন্দুর’ ঘিরে জাতীয়তাবাদী আবেগ চাঙ্গা হয়েছিল। বিজেপি চাইছে, এই বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আরও জোরদার প্রচার হোক, যাতে জনগণের মনে বিজেপির ‘সুরক্ষা-নায়ক’ ভাবমূর্তি আরও গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। মোদী মন্ত্রীদের এই প্রচারের রূপরেখা বুঝিয়ে দিতে পারেন বলে জানা যাচ্ছে।
2. মোদি ৩.০-র বর্ষপূর্তি উদযাপন:
আগামী দিনে মোদী সরকারের তৃতীয় মেয়াদের এক বছর পূর্ণ হবে। সেই উপলক্ষে দেশজুড়ে একটি বড় মাপের জনসংযোগ কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে বিজেপি। “এক বছর, নয়া দিশা”—এই বার্তা সামনে রেখে সরকারের সাফল্য, নীতিগত অর্জন ও আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের অবস্থান তুলে ধরতে চাইছে সরকার। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মন্ত্রীদের সক্রিয় ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশ দিতে পারেন মোদী।
3. ইমার্জেন্সির ৫০ বছর:
১৯৭৫ সালের ২৫ জুন ভারতের ইতিহাসে একটি কালো দিন, যেদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। সেই ঘটনার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিজেপি একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে চলেছে, যার মাধ্যমে ‘অসংবিধানিক’ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচার বাড়ানো হবে। মোদী সরকারের লক্ষ্য—নতুন প্রজন্মকে সেই সময়ের ইতিহাস সম্পর্কে জানানো ও কংগ্রেসের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে ফেলা। মন্ত্রীদের সেই প্রচারের মুখ করে তোলা হতে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার থেকেই দিল্লির রাজনীতিতে বাড়ছে চাপানউতোর। পরপর দফায় দফায় বৈঠকে বসেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়ালের সঙ্গে। ছয়টায় অমিত শাহ যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে। রাত ৮টায় তিনি বৈঠকে বসেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গে। আজ সকালেই জানা গেছে, অমিত শাহ ও নাড্ডা একসঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে।
এই টানা বৈঠকের ধারা এবং প্রধানমন্ত্রীর ডাকা মন্ত্রীসভা বৈঠক ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিজেপি কোনও বড় রাজনৈতিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এটি হতে পারে একদিক থেকে নতুন সরকারের কর্মসূচির শক্তিশালী সূচনা, অন্যদিকে ২০২৯ লোকসভা নির্বাচন বা পরবর্তী রাজনৈতিক লড়াইয়ের মঞ্চ প্রস্তুতির কৌশল।
সব মিলিয়ে বলা যায়, মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি ফের একবার জনমতকে প্রভাবিত করতে ও রাজনৈতিক পাল্লা ভারী করতে ময়দানে নামছে। আর সেই অভিযান শুরু হতে চলেছে আজ বিকেল ৫টার বৈঠক থেকেই।