সুন্দরবনে বাড়ছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, আশার আলো বন-সুমারিতে

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন (Sundarbans) থেকে মিলল পরিবেশপ্রেমীদের জন্য সুখবর। বন দফতরের সাম্প্রতিক বাঘ সুমারিতে দেখা গেছে, সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের (Royal Bengal…

Royal Bengal Tiger Count Rises in Sundarbans: Forest Survey Brings Hope

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন (Sundarbans) থেকে মিলল পরিবেশপ্রেমীদের জন্য সুখবর। বন দফতরের সাম্প্রতিক বাঘ সুমারিতে দেখা গেছে, সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের (Royal Bengal Tiger) সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বন দফতরের দাবি, এই বৃদ্ধির প্রবণতা আগামী কয়েক বছরেও বজায় থাকবে।

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের তরফে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে করা হয়েছিল এই বাঘ গণনা। মোট ৭২২টি ইনফ্রারেড প্রযুক্তিসম্পন্ন স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা বসানো হয়েছিল সুন্দরবনের গভীর অরণ্যে। ৪৫ দিন ধরে এই ক্যামেরাগুলি জঙ্গলে বাঘের চলাচলের ছবি তুলেছে। এরপর সেই ছবি বিশ্লেষণ করে বন দফতরের আধিকারিকরা জানান, অন্তত ১০ থেকে ১২টি নতুন বাঘ সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা গেছে।

   

প্রসঙ্গত, ২০২১-২২ সালের সর্বশেষ অল ইন্ডিয়া টাইগার এস্টিমেশনে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ছিল ১০১। কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি চার বছর অন্তর এই জাতীয় ব্যাঘ্র গণনা করে থাকে, যেখানে দেশের প্রতিটি ব্যাঘ্র প্রকল্প অংশ নেয়। তবে, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প প্রতিবছর নিজেদের উদ্যোগে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে অঞ্চলভিত্তিক বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করে।

বন দফতর সূত্রে খবর, এবারের বাঘ সুমারিতে প্রাপ্ত তথ্য যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। বনকর্মীদের মতে, গত কয়েক বছর ধরেই ক্যামেরার ছবিতে বাঘের শাবকের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। ২০২১-২২ সালে যে সব শাবকের ছবি উঠেছিল, তাদের অনেকেই এখন প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে। এমনকি তার পরবর্তী বছরগুলোতেও নতুন শাবকদের ছবি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এক বছরের নিচে বয়স যাদের, সেই সব শাবক গণনায় ধরা না পড়লেও জঙ্গলে তাদের উপস্থিতি সুস্পষ্ট। বন দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে সুন্দরবনের বাঘ জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ ১ থেকে ৩ বছর বয়সী তরুণ বাঘ। এই তথ্য থেকে সহজেই বোঝা যায়, সুন্দরবনে বাঘের প্রজনন পরিবেশ অত্যন্ত অনুকূল।

বন আধিকারিকদের দাবি, সুন্দরবনের পরিবেশ এবং খাদ্য চক্র বাঘেদের টিকে থাকার ও বংশ বিস্তারের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ ও উপযুক্ত। তাই বাঘেরা এখানে স্থায়ী বসবাসের জন্য সুন্দরবনকেই বেছে নিচ্ছে। এই কারণে প্রতি বছরই নতুন শাবকের জন্ম হচ্ছে এবং ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়ছে।
গণনার কাজে যুক্ত ছিলেন ৩৫০ জনেরও বেশি বনকর্মী। দুর্গম জঙ্গল, নদীঘেরা অঞ্চল, হিংস্র প্রাণীর উপস্থিতি—সব কিছু সামলে তাঁরা নিরলসভাবে ক্যামেরা বসানোর কাজ সম্পন্ন করেন।

Advertisements

বন দফতরের মুখপাত্র জানান, “এই ফলাফল আমাদের অনুপ্রাণিত করছে। সুন্দরবনকে আরও নিরাপদ করে তোলার চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী বছরগুলোতে আরও বেশি বাঘ দেখা যাবে, সেই আশা করাই যায়।”

এদিকে, এই খবরে খুশি পরিবেশবিদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণকারীরা। তারা মনে করছেন, এটি ভারতবর্ষের বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক সংকেত। তবে, তারা সতর্ক করছেন যে, বাঘের সংখ্যা বাড়লেও মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষ, চোরাশিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি এখনও রয়ে গেছে।

সুন্দরবনের বাঘ শুধু পশ্চিমবঙ্গ বা ভারত নয়, গোটা বিশ্বের জন্য এক মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। তাই তাদের সংরক্ষণে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং সহযোগিতাও প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সব মিলিয়ে, সুন্দরবনে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা বৃদ্ধির খবর বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক বড় সাফল্য বলেই মনে করা হচ্ছে।