প্রখ্যাত অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা কমল হাসান (kamal-haasan) তাঁর আসন্ন চলচ্চিত্র থাগ লাইফ-এর কর্নাটকে মুক্তি ও প্রদর্শন নিশ্চিত করতে কর্নাটক হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। সম্প্রতি কন্নড় ভাষার উৎপত্তি নিয়ে তাঁর মন্তব্যের জেরে রাজ্যে তীব্র বিতর্কের মুখে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কমল হাসান দাবি করেছিলেন যে কন্নড় ভাষার উৎপত্তি তামিল ভাষা থেকে, যা কর্নাটকে ব্যাপক বিরোধিতার মুখে পড়েছে।
বিতর্কের সূত্রপাত (kamal-haasan)
গত ২৪ মে চেন্নাইয়ে থাগ লাইফ-এর অডিও লঞ্চ অনুষ্ঠানে কমল হাসান (kamal-haasan)বলেছিলেন, “কন্নড় ভাষা তামিল থেকে জন্ম নিয়েছে।” এই মন্তব্যের পর থেকে কর্নাটকে তাঁর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হয়। রাজ্যে ৫ জুন মুক্তির জন্য নির্ধারিত এই চলচ্চিত্রের প্রদর্শন বন্ধের দাবি উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে কমল হাসান আইনি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে চলচ্চিত্রটির মুক্তি এবং নিরবচ্ছিন্ন প্রদর্শন নিশ্চিত করতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
তাঁর প্রযোজনা সংস্থা রাজ কমল ফিল্মস ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে দায়ের করা আবেদনে কমল হাসান (kamal-haasan)কর্নাটক রাজ্য সরকার, পুলিশ বিভাগ এবং চলচ্চিত্র বাণিজ্য সংগঠনগুলিকে চলচ্চিত্রটির মুক্তিতে বাধা না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এছাড়াও, তিনি পুলিশ মহাপরিদর্শক এবং নগর পুলিশ কমিশনারকে চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
কর্নাটক ফিল্ম চেম্বার অফ কমার্স (কেএফসিসি) কন্নড়পন্থী প্রতিবাদকারীদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে ৩০ মে থাগ লাইফ-এর কর্নাটকে মুক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই সিদ্ধান্ত কমল হাসানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার জন্য দেওয়া আলটিমেটামের পর নেওয়া হয়। তবে, কমল হাসান ক্ষমা চাওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কমল হাসান বলেছেন
তিনি (kamal-haasan)বলেছেন, “আমাকে আগেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি ভুল করলে ক্ষমা চাইব। কিন্তু আমি ভুল না করলে ক্ষমা চাইব না। এটাই আমার জীবনধারা, দয়া করে এটি নিয়ে হস্তক্ষেপ করবেন না।” কমল হাসানের এই মন্তব্য কর্নাটকে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। কন্নড় ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গর্বিত রাজ্যবাসীরা তাঁর এই দাবিকে অপমানজনক হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
কন্নড় ভাষার ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের, এবং কমল হাসানের মন্তব্য এই সংবেদনশীল বিষয়টিকে আরও উসকে দিয়েছে। ফলে, তাঁর চলচ্চিত্রের মুক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন অংশে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে।
কমল হাসানের (kamal-haasan)পক্ষ থেকে আদালতে দায়ের করা আবেদনে বলা হয়েছে যে, তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং এটি রাজ্যে চলচ্চিত্রটির মুক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য অপব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে, চলচ্চিত্রটি একটি শৈল্পিক সৃষ্টি এবং এর মুক্তি বন্ধ করা শিল্পীদের মুক্ত মত প্রকাশের অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ।
থাগ লাইফ একটি বাণিজ্যিক প্রকল্প
তিনি আরও জানিয়েছেন যে, থাগ লাইফ একটি বাণিজ্যিক প্রকল্প, যা বহু মানুষের জীবিকার সঙ্গে জড়িত, এবং এর প্রদর্শন বন্ধ করা অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। কর্নাটক ফিল্ম চেম্বার অফ কমার্সের সিদ্ধান্তের পর রাজ্যের চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা থাগ লাইফ-এর প্রদর্শনী বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কন্নড়পন্থী সংগঠনগুলোর দাবি, কমল হাসানের মন্তব্য কন্নড় জনগণের সংস্কৃতি ও পরিচয়ের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করেছে, এবং তিনি ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাঁর চলচ্চিত্র রাজ্যে মুক্তি পাওয়া উচিত নয়।
কমল হাসানের (kamal-haasan)আইনি পদক্ষেপ এই বিতর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। আদালত এখন এই মামলার শুনানি করবে, এবং এর ফলাফল রাজ্যে চলচ্চিত্রটির ভাগ্য নির্ধারণ করবে। আইনজ্ঞরা মনে করেন, আদালত মুক্ত মত প্রকাশের অধিকার এবং জনগণের সংস্কৃতিগত সংবেদনশীলতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করবে। এই মামলা শুধুমাত্র থাগ লাইফ-এর মুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং ভারতের বিভিন্ন ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচয় নিয়ে চলমান উত্তেজনার প্রতিফলন।
থাগ লাইফ একটি অ্যাকশন-ড্রামা চলচ্চিত্র, যা কমল হাসানের প্রযোজনা সংস্থা এবং পরিচালক মণিরত্নমের সহযোগিতায় নির্মিত। চলচ্চিত্রটিতে তামিল চলচ্চিত্র শিল্পের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট অভিনেতা রয়েছেন, এবং এটি দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক প্রত্যাশা সৃষ্টি করেছে। তবে, কর্নাটকে এই বিতর্কের কারণে চলচ্চিত্রটির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এয়ার ফোর্স কমন অ্যাডমিশন পরীক্ষার আবেদন শুরু, এভাবে অ্যাপ্লাই করুন
কর্নাটকের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে আলোচনা
কর্নাটকের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এই ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কন্নড় ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি গর্বিত সংগঠনগুলো এই বিষয়ে তাদের অবস্থান বজায় রেখেছে, যখন কমল হাসান তাঁর বক্তব্যের পক্ষে অটল রয়েছেন। এই পরিস্থিতি ভারতের বহুসংস্কৃতির সমাজে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সংবেদনশীলতাকে তুলে ধরেছে।
কর্নাটক হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত এই বিতর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হবে। যদি আদালত কমল হাসানের (kamal-haasan)পক্ষে রায় দেয়, তবে এটি শিল্পীদের মুক্ত মত প্রকাশের অধিকারের পক্ষে একটি নজির স্থাপন করতে পারে। অন্যদিকে, যদি নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে, তবে এটি কন্নড় ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি স্থানীয় সংবেদনশীলতার জয় হিসেবে বিবেচিত হবে। এই মামলার ফলাফল শুধুমাত্র থাগ লাইফ-এর ভাগ্য নির্ধারণ করবে না, বরং ভবিষ্যতে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বিতর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।