মুল্লানপুর, চণ্ডীগড়ে বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত কোয়ালিফায়ার ১ ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) পাঞ্জাব কিংসকে আট উইকেটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে তাদের চতুর্থ আইপিএল ফাইনালে প্রবেশ করেছে। ২০০৯, ২০১১ এবং ২০১৬ সালে ফাইনালে পৌঁছানো আরসিবি এবার তাদের প্রথম আইপিএল শিরোপার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে মরিয়া। ২০১১ সালে বর্তমান প্লে-অফ সিস্টেম চালু হওয়ার পর থেকে ১৪টি আইপিএলের মধ্যে ১১টিতে কোয়ালিফায়ার ১ জয়ী দল শিরোপা জিতেছে।বিশেষ করে ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত টানা সাত মরশুমে।
আরসিবি এই ম্যাচে ব্যাট ও বলে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। তারা পাঞ্জাবকে মাত্র ১০১ রানে অলআউট করে ৬০ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্য তাড়া করে, যা আইপিএল প্লে-অফের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড। বিরাট কোহলি ১৪ ম্যাচে ৬১৪ রানের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আর পেসার জশ হ্যাজলউড ১১ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়ে বোলিংয়ে দুর্দান্ত। তবে এবারের সাফল্য শুধু কয়েকজন খেলোয়াড়ের উপর নির্ভর করেনি। ফিল সল্ট, জিতেশ শর্মা, ক্রুনাল পান্ড্যা, ভুবনেশ্বর কুমার এবং যশ দয়াল মুখ্য মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
আরসিবির দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পাঁচটি কারণ:
১. কোহলি-সল্টের বিধ্বংসী শুরু
বিরাট কোহলি এই মরশুমেও দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। কিন্তু আরসিবির ব্যাটিংকে আরও শক্তিশালী করেছে তাঁর ওপেনিং পার্টনার ফিল সল্ট। ১১.৫০ কোটি টাকায় কেনা এই ইংলিশ ব্যাটার পাওয়ারপ্লেতে নির্ভীক ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে নিজের মূল্য প্রমাণ করেছেন। ১২ ম্যাচে ৩৮৭ রানের সঙ্গে ১৭৫ স্ট্রাইক রেট এবং কোয়ালিফায়ার ১-এ অপরাজিত অর্ধশতক তাঁর প্রভাব দেখায়। কোহলি-সল্ট জুটি ১২ ইনিংসে ৫৪৭ রান এবং ছয়টি ৫০+ রানের জুটি গড়েছেন, যা আরসিবির শুরুকে শক্তিশালী করেছে।
২. দুর্দান্ত ফিনিশাররা
আরসিবির শীর্ষস্থানীয় ব্যাটাররা যেমন স্থিতিশীল, তেমনি তাদের ফিনিশাররা টানটান ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। ১১ কোটি টাকায় কেনা জিতেশ শর্মা ব্যাট হাতে গেম-চেঞ্জার হয়ে উঠেছেন। লখনউ সুপার জায়ান্টসের ২২৭/৩ তাড়া করতে গিয়ে তাঁর ৩৩ বলে অপরাজিত ৮৫ রান আরসিবিকে অসাধারণ জয় এনে দেয়। টিম ডেভিড ১৮৫ স্ট্রাইক রেটে ১৮৭ রান এবং রোমারিও শেফার্ড চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ১৪ বলে ৫৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে আরসিবির বড় স্কোর এবং কাছাকাছি ম্যাচে জয় নিশ্চিত করেছেন।
৩. পাটিদারের অধিনায়কত্বের দক্ষতা
রজত পাটিদারকে অধিনায়ক করার সিদ্ধান্ত অনেককে অবাক করলেও এটি একটি মাস্টারস্ট্রোক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। পাটিদার শান্ত ও কৌশলগতভাবে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কোহলি, হ্যাজলউড এবং ভুবনেশ্বরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে। তাঁর অধিনায়কত্ব কোহলিকে ব্যাটিংয়ে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে সাহায্য করেছে। পাটিদার নিজেও ২৮৬ রান এবং দুটি অর্ধশতকের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি এখন আরসিবিকে প্রথম আইপিএল শিরোপা জেতানোর এক ম্যাচ দূরে।
৪. নিলামে সফল কৌশল
গত মরশুমে খালি হাতে ফেরার পর আরসিবি তাদের দল পুনর্গঠন করেছে। মেগা নিলামে তারা মাত্র তিনজন খেলোয়াড় ধরে রেখে বাকিদের ছেড়ে দিয়ে প্রমাণিত টি-টোয়েন্টি পারফরমারদের উপর ফোকাস করেছে। তারা জশ হ্যাজলউড (১২.৫০ কোটি) এবং ভুবনেশ্বর কুমার (১০.৭৫ কোটি)-এর মতো অভিজ্ঞ পেসারদের উপর বড় বিনিয়োগ করেছে, যারা পাওয়ারপ্লে এবং ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। হ্যাজলউড পাওয়ারপ্লেতে ৯ উইকেট এবং ৫৫.৮% ডট বল, আর ভুবনেশ্বর ৮ উইকেট ও ৫০% ডট বলের রেকর্ড গড়েছেন। জিতেশ এবং সল্টের মতো বড় ক্রয়ও ফল দিয়েছে।
৫. দিনেশ কার্তিকের মেন্টরশিপ
দিনেশ কার্তিকের ব্যাটিং কোচ এবং মেন্টর হিসেবে নিয়োগ আরসিবির জন্য নতুন প্রাণশক্তি এনেছে। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর আক্রমণাত্মক স্টাইল জিতেশ এবং পাটিদারের মতো খেলোয়াড়দের উপর প্রভাব ফেলেছে। জিতেশ কার্তিকের ‘গেম গভীরে নিয়ে যাওয়ার’ কৌশলের প্রশংসা করেছেন, যা টানটান রান তাড়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে। কার্তিকের ড্রেসিংরুমের অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতাও দলের মনোবল বাড়িয়েছে।
আরসিবি এখন ফাইনালে তাদের দুর্দান্ত ফর্ম ধরে রাখতে এবং প্রথম আইপিএল শিরোপা জয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে প্রস্তুত।