জাপানি গাড়ি নির্মাতা হোন্ডা তাদের জনপ্রিয় হাইব্রিড সেডান হোন্ডা সিটি ই:এইচইভি-র (Honda City e HEV) দাম বৃদ্ধির ঘোষণা করেছে, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হয়েছে। এই দাম বৃদ্ধি শুধুমাত্র শীর্ষস্থানীয় এবং একমাত্র উপলব্ধ জেডএক্স ভেরিয়েন্টকে প্রভাবিত করেছে। ২০২২ সালের মে মাসে ভারতে লঞ্চ হওয়া এই হাইব্রিড পাওয়ারট্রেন সহ সেডানটির প্রাথমিক মূল্য ছিল ১৯.৫০ লক্ষ টাকা (এক্স-শোরুম)। সম্প্রতি, এর দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন এক্স-শোরুম মূল্য ২৯,৯০০ টাকা বেড়ে এখন ২০.৮৫ লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে। তবে, এই দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও হোন্ডা সিটি ই:এইচইভি মিড-সাইজ সেডান বিভাগে একটি প্রিমিয়াম বিকল্প হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে।
হোন্ডা সিটি ই:এইচইভি-র পাওয়ারট্রেন ও পারফরম্যান্স
হোন্ডা সিটি ই:এইচইভি একটি উন্নত হাইব্রিড পাওয়ারট্রেন দিয়ে সজ্জিত, যা একটি ১.৫ লিটার ন্যাচারালি অ্যাসপিরেটেড পেট্রোল ইঞ্জিনের সঙ্গে দুটি বৈদ্যুতিক মোটরের সমন্বয়ে গঠিত। এই সমন্বিত পাওয়ারট্রেন ১২৪.২৭ হর্সপাওয়ার এবং ২৫৩ নিউটন-মিটার টর্ক উৎপন্ন করে। এটি একটি ই-সিভিটি ট্রান্সমিশনের সঙ্গে যুক্ত, যা জ্বালানি দক্ষতা বাড়ানোর পাশাপাশি নির্গমন হ্রাস করে। হোন্ডার দাবি অনুযায়ী, এই গাড়িটি ২৭.১ কিলোমিটার প্রতি লিটার মাইলেজ প্রদান করে, যা এই বিভাগে এটিকে সবচেয়ে জ্বালানি-দক্ষ সেডানগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবেশ-সচেতন ক্রেতাদের কাছে গাড়িটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
উন্নত ফিচার ও নিরাপত্তা
হোন্ডা সিটি ই:এইচইভি অত্যাধুনিক ফিচারে সমৃদ্ধ, যার মধ্যে হোন্ডা সেন্সিং প্রযুক্তি অন্যতম। এই প্রযুক্তিতে রয়েছে অ্যাডভান্সড ড্রাইভার-অ্যাসিস্ট্যান্স সিস্টেম (ADAS), যেমন অ্যাডাপটিভ ক্রুজ কন্ট্রোল, লেন-কিপিং অ্যাসিস্ট, এবং কলিশন মিটিগেশন ব্রেকিং সিস্টেম। এছাড়া, গাড়িটিতে রয়েছে ৮ ইঞ্চি টাচস্ক্রিন ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম, যা ওয়্যারলেস অ্যান্ড্রয়েড অটো এবং অ্যাপল কারপ্লে সমর্থন করে, সেই সঙ্গে সানরুফ, ওয়্যারলেস ফোন চার্জার, এবং রেইন-সেন্সিং ওয়াইপার। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, গাড়িটি ছয়টি এয়ারব্যাগ, ইলেকট্রনিক স্ট্যাবিলিটি কন্ট্রোল, এবং টায়ার প্রেসার মনিটরিং সিস্টেম (TPMS) দিয়ে সজ্জিত। এই বৈশিষ্ট্যগুলো গাড়িটিকে একটি প্রিমিয়াম এবং নিরাপদ ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা প্রদানে সক্ষম করে।
গাড়ির অভ্যন্তরীণ নকশা প্রশস্ত এবং আরামদায়ক, যা দীর্ঘ যাত্রার জন্য আদর্শ। ৪১০ লিটারের বুট স্পেস এবং ১৬৫ মিলিমিটারের গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স এটিকে শহর এবং হাইওয়ে উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। গাড়িটি ছয়টি রঙে পাওয়া যায়: অবসিডিয়ান ব্লু পার্ল, রেডিয়েন্ট রেড মেটালিক, প্ল্যাটিনাম হোয়াইট পার্ল, মডার্ন স্টিল মেটালিক, লুনার সিলভার মেটালিক, এবং গোল্ডেন ব্রাউন মেটালিক।
বাজারে প্রতিযোগিতা
দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও, হোন্ডা সিটি ই:এইচইভি তার প্রাইস সেগমেন্টে ভারতের একমাত্র হাইব্রিড পাওয়ারট্রেন সহ সেডান হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে, এটি স্কোডা স্লাভিয়া, হুন্ডাই ভার্না, এবং ফক্সওয়াগেন ভার্টাসের মতো শক্তিশালী প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এই প্রতিযোগী মডেলগুলো পেট্রোল এবং টার্বোচার্জড ইঞ্জিন বিকল্পের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে কম দামে উপলব্ধ, যা ক্রেতাদের ক্রয় সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, হাইব্রিড প্রযুক্তি এবং উচ্চ জ্বালানি দক্ষতার কারণে হোন্ডা সিটি ই:এইচইভি পরিবেশ-সচেতন এবং দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয়ের দিকে ঝুঁকি ক্রেতাদের কাছে আকর্ষণীয় থাকবে।
দাম বৃদ্ধির প্রভাব
নতুন দাম বৃদ্ধি ক্রেতাদের সিদ্ধান্তকে কিছুটা প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে যারা বাজেট-সচেতন। তবে, হোন্ডা সিটি ই:এইচইভি-র প্রিমিয়াম ফিচার, উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি, এবং হাইব্রিড পাওয়ারট্রেনের সুবিধা এটিকে এখনও একটি আকর্ষণীয় বিকল্প করে রেখেছে। হোন্ডার একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড ইমেজ এবং নির্ভরযোগ্যতার জন্য খ্যাতি এই গাড়ির চাহিদা ধরে রাখতে সহায়তা করবে। এছাড়া, গাড়িটি ৭ বছরের বা সীমাহীন কিলোমিটারের একটি শিল্প-প্রথম এক্সটেন্ডেড ওয়ারেন্টি প্রোগ্রামের সঙ্গে আসে, যা ক্রেতাদের জন্য অতিরিক্ত মানসিক শান্তি প্রদান করে।
হোন্ডা সিটি ই:এইচইভি-র সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধি এটিকে মিড-সাইজ সেডান বিভাগে একটি প্রিমিয়াম পছন্দ হিসেবে অবস্থান করেছে। এর হাইব্রিড পাওয়ারট্রেন, অত্যাধুনিক ফিচার, এবং উচ্চ জ্বালানি দক্ষতা এটিকে পরিবেশ-সচেতন এবং প্রযুক্তি-প্রিয় ক্রেতাদের জন্য একটি আদর্শ বিকল্প করে তুলেছে। যদিও প্রতিযোগী মডেলগুলো কম দামে পাওয়া গেলেও, হোন্ডা সিটি ই:এইচইভি-র একমাত্র হাইব্রিড সেডান হিসেবে অনন্যতা এবং হোন্ডার নির্ভরযোগ্যতার উত্তরাধিকার এটিকে বাজারে প্রাসঙ্গিক রাখবে। যারা স্টাইল, আরাম, এবং ইকো-ফ্রেন্ডলি ড্রাইভিং অভিজ্ঞতার সমন্বয় চান, তাদের জন্য এই গাড়িটি একটি শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসেবে রয়ে গেছে।