উত্তর প্রদেশ কংগ্রেস (congress) সভাপতি অজয় রাইয়ের একটি বিতর্কিত মন্তব্য সোমবার ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে ঝড় তুলেছে। জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক একটি মর্মান্তিক জঙ্গি হামলার পর কেন্দ্রীয় সরকারের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে রায় একটি খেলনা রাফাল জেটের সঙ্গে লেবু ও লঙ্কা প্রদর্শন করে মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এই ঘটনা বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে একটি তীব্র রাজনৈতিক সংঘর্ষের সূত্রপাত করেছে।
রাই একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “দেশে জঙ্গি কার্যকলাপ বেড়েছে, মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। পহেলগাঁও হামলায় আমাদের যুবকরা প্রাণ হারিয়েছে। কিন্তু এই সরকার, যারা বড় বড় কথা বলে, তারা বলে তারা সন্ত্রাসীদের নিশ্চিহ্ন করবে। তারা রাফাল এনেছে, কিন্তু সেগুলো হ্যাঙ্গারে লেবু ও লঙ্কা ঝুলিয়ে পড়ে আছে। কবে তারা সন্ত্রাসীদের, তাদের সমর্থকদের এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?”
হিন্দু ঐতিহ্যে লেবু ও লঙ্কা (congress)
হিন্দু ঐতিহ্যে লেবু ও লঙ্কা ‘দৃষ্টি নিবারণ’ এবং সুরক্ষার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রাইয়ের এই বিদ্রুপ যে ২০১৯ সালে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ফ্রান্সে রাফাল জেট গ্রহণের সময়ে ‘অস্ত্র পূজা’র প্রতি ইঙ্গিত তা বলাই বাহুল্য । সে সময় সিং রাফালের চাকার নিচে লেবু এবং উপরে নারকেল রেখেছিলেন। রায়ের এই প্রতীকী প্রদর্শনী সরাসরি সেই ঘটনার উপর কটাক্ষ।
বিজেপির তীব্র প্রতিক্রিয়া
রাই র এই মন্তব্যে বিজেপি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। দলের নেতারা অভিযোগ করেছেন যে কংগ্রেস সশস্ত্র বাহিনীর মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে এবং পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলছে। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এক্স-এ লিখেছেন, “দেখুন অজয় রাইকে , পাকিস্তানপন্থী কংগ্রেসের উত্তর প্রদেশ সভাপতি, যিনি পাকিস্তানি সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়েছেন। মোদীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সেনাবাহিনীর মনোবল ভাঙার জন্য কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র বুঝুন।”
বিজেপি মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা এই আক্রমণকে আরও তীব্র করে বলেন, “চন্নি, প্রিয়াঙ্ক খাড়গে, আরজেডি সাংসদ সুধাকর সিং, অজয় রাই—আমাদের বাহিনীর মনোবলের উপর এই আক্রমণ কোনও সংযোগ নয়, এটি পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে রাহুল গান্ধীর নির্দেশে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
বিজেপি নেতা প্রদীপ ভাণ্ডারীও এক্স-এ লিখেছেন, “রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী অজয় রাই আমাদের বাহিনীর উপহাস করছেন! কংগ্রেস এখন পাকিস্তানি কংগ্রেস হয়ে গেছে এবং ভারতে আসিফ মুনিরের পাকিস্তানের মুখপাত্র।” উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী ওম প্রকাশ রাজভরও কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেন, “কংগ্রেস আগামী ১৫ বছর এই খেলনা নিয়ে খেলবে। দেশবিরোধী মন্তব্য করা তাদের মতাদর্শের অংশ।”
আইপিএল ক্যারিয়ার শেষের পথে রাসেল? সতীর্থ ফাঁস করলেন বিস্ফোরক তথ্য
রাইয়ের পাল্টা জবাব
বিজেপির এই তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও অজয় রায় (congress) তার অবস্থানে অটল রয়েছেন। সোমবার তিনি বলেন, “দেশ জানতে চায় কবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজনাথ সিং রাফালে লেবু ও লঙ্কা লাগিয়েছিলেন। আমি তাই বলেছি যা রাজনাথ সিং করেছিলেন। আমরা জানতে চাই কবে এই লেবু – লঙ্কা সরানো হবে এবং কবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে?” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাফাল গ্রহণের সময় এই প্রতীক ব্যবহার করেছিলেন, এবং তিনি কেবল সেই চিত্রটি ব্যবহার করে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ করেছেন।
রাইয়ের এই মন্তব্য কংগ্রেসের মিত্রদল এবং দলের অভ্যন্তরে সমর্থন পেয়েছে। কংগ্রেস (congress) সাংসদ ইমরান মাসুদ বলেন, “এমন জবাব দেওয়া উচিত যাতে পাকিস্তান শতাব্দী ধরে মনে রাখে। এখন সময় হয়েছে রাফাল থেকে লেবু -লঙ্কা সরিয়ে ফেলার। এগুলোকে বসে বসে নষ্ট হতে দেবেন না।”
ইন্ডিয়া জোটের মিত্র সমাজবাদী পার্টির নেতা আশুতোষ বর্মা বিজেপির দ্বৈত মানদণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, “রাজনাথ সিং লেবু ও লঙ্কা লাগালে তা ভালো, কিন্তু আমরা বললে তা খারাপ? আমরা চাই রাফাল ব্যবহার করা হোক এবং শত্রুদের যোগ্য জবাব দেওয়া হোক।”
পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষাপট
পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। এই হামলার পর কেন্দ্রীয় সরকার সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং দায়ীদের কঠোর শাস্তির আশ্বাস দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন, যেখানে বিরোধী দলগুলি সরকারের যেকোনো পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে। সরকার ইন্দুস জলচুক্তি স্থগিত করার মতো পদক্ষেপও ঘোষণা করেছে, যা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত দেয়।
রাজনৈতিক প্রভাব
অজয় রাইয়ের এই মন্তব্য ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের সংবেদনশীল সময়ে এসেছে, যখন পহেলগাঁও হামলার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। বিজেপি এই মন্তব্যকে ‘দেশবিরোধী’ এবং ‘পাকিস্তানের পক্ষে’ বলে চিহ্নিত করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণ শানিয়েছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস (congress) এবং তার মিত্ররা দাবি করছে যে তারা কেবল সরকারের নিষ্ক্রিয়তার সমালোচনা করছে এবং জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারের পাশে রয়েছে।
অজয় রাইয়ের (congress) লেবু ও লঙ্কা রাফাল তামাশা ভারতের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনা কেবল বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকেই তীব্র করেনি, বরং জাতীয় নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনগণের মধ্যে আলোচনাও উসকে দিয়েছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কোন দিকে যায়, তা ভারতের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।